ঢাকা: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ঘরে-বাইরে বাড়তি চাপের মুখে সরকার। সেই চাপ মোকাবিলায় বিজেপি ও পাকিস্তান উভয়ের বিরুদ্ধেই পাল্টা আক্রমণে সরব এখন সরকার এবং কংগ্রেস।
তবে এরই পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনাবাহিনীকে আরও বেশি প্রস্তুত রাখার কথা ঘোষণা করে সরকার আজ আরও কঠোর বার্তা দিতে চেয়েছে পাকিস্তানকে।
বিজেপি-আরএসএসের শিবিরে সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ চলার রিপোর্ট আসছে বলে জয়পুরে দলীয় মঞ্চ থেকে মন্তব্য করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এতে ভারত-বিরোধিতার পালে বাতাস পেয়ে গিয়েছে পাকিস্তান।
কৌশলে ভারতকে বিব্রত করার চেষ্টা চালিয়েছে ২৬/১১-র মূল চক্রী হাফিজ সইদ। দীর্ঘদিনের অভ্যাস মতো পাকিস্তান ফের তৎপর হয়ে উঠেছে দ্বিপাক্ষিক প্রসঙ্গকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে আনতে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আজ বৈঠকে বসে।
সেখানে স্থির হয়েছে, সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনাবাহিনীকে আরও বেশি প্রস্তুত রাখা তথা প্রিপেয়ার্ডনেস বাড়ানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ করা হবে। বৈঠকের পর কমিটির অন্যতম সদস্য সৌগত রায় আজ এ কথা জানিয়ে বলেন, সংসদীয় কমিটি শীঘ্রই প্রতিরক্ষাসচিব, বিদেশসচিব ও সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসবে এ নিয়ে।
শিন্দের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে হাফিজ সইদ কাল বলেছিল, সন্ত্রাসের বীজ আসলে ভারতের মাটিতেই রয়েছে। আর আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত বিতর্কে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে বুক বাজিয়ে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি রাখতে তারাই উদ্যোগী।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সামরিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী (ইউএন মিলিটারি অবজার্ভার গ্রুপ)-কে দিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখায় সাম্প্রতিক হিংসার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করানোর দাবিতেও মুখর হন পাক বিদেশসচিব জলিল আব্বাস জিলানি।
রাষ্ট্রপুঞ্জে এ প্রসঙ্গ তোলার তীব্র নিন্দা করে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কাশ্মীর তথা নিয়ন্ত্রণরেখার বিষয়টি একান্তই দ্বিপাক্ষিক, এতে তৃতীয় পক্ষের নাক গলানোর প্রশ্নই ওঠে না।
সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “আমরা একাধিক বার বলেছি, যে কোনও ধরনের সন্ত্রাস, সেটা যে কোনও ধর্মের মোড়কেই ঘটুক না কেন, সেটা বিপজ্জনক। আমরা সামগ্রিক ভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন, তা তদন্তকারী সংস্থাগুলির থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বলেছেন। কথার মারপ্যাঁচে মূল বিষয় থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ”
বিতর্ক বাড়ানোয় দল কার্যত শিন্দের ওই মন্তব্য থেকে কিছুটা দূরত্বই রাখতে চাইছে। দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে কংগ্রেসের মুখপাত্র এ দিন বলেছেন, “কংগ্রেস সন্ত্রাসের রং দেখে না।
গেরুয়াকে অপমান করার তো প্রশ্নই নেই, আমাদের জাতীয় পতাকাতেই রয়েছে গেরুয়া। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন, তা তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলেছেন।
এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। ” তাতে বিজেপি-র আক্রমণের তীব্রতা অবশ্য কমছে না। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন অভিযোগ করেন, “শিন্দের বক্তব্যে সন্ত্রাসের প্রশ্নে হিন্দু-মুসলিম বাঁটোয়ারাই শুধু হয়নি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ঘুরে দাঁড়ানোরও সুযোগ পেয়ে গিয়েছে পাকিস্তান।
শিন্দের মন্তব্যে উৎসাহ পাবে সন্ত্রাসবাদীরাই। ” বিজেপি আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিন্দের ইস্তফারও দাবি করেছে। তাঁর মন্তব্যের প্রতিবাদে আগামী বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে প্রতিবাদে নামবে তারা। সংসদের বাজেট অধিবেশনেও সরব হবে এ নিয়ে।
সূত্র : আনন্দবাজার
বাংলাদেশ সময় : ১৮৩১ ঘন্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর