কলকাতা: ভাগ্যজোরে বেঁচে গেলেন সহস্র রেলযাত্রী। শনিবার সকালে অল্পের জন্য বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল শিয়ালদহগামী ডাউ রানাঘাট লোকাল৷ প্রাণে রক্ষা পেলেন ওই ট্রেনের যাত্রীরা৷
এদিন সকাল ৬টা ১৫ মিনিট নাগাদ দমদম স্টেশন ছেড়ে গতি নেওয়ার মুখেই লাইনচ্যুত হয় ট্রেনের পিছনের দিকের ছ'টি কামরা৷ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও যাত্রীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান রেলের কর্মকর্তারা৷
দুর্ঘটনার জেরে বন্ধ হয়ে যায় শিয়ালদহ মেন শাখার ডাউন ট্রেন চলাচল৷ ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন শিয়ালদহ-বনগাঁ, বারাসত, নৈহাটি, কল্যাণী, রানাঘাট, গেদে, কৃষ্ণনগরসহ একাধিক শাখার যাত্রীরা৷ বেলা পর্যন্ত এই দুর্ভোগ চলে৷
দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান শিয়ালদহ শাখার ডিআরএম সুচিত্তকুমার দাস ও অন্যান্য কর্মকর্তারা৷ চলে কামরা তোলা এবং নতুন লাইন বসানোর কাজ৷
রেলের কর্মকর্তাদের কথায়- এদিন দমদম স্টেশন থেকে সবেমাত্র ট্রেনটি ছাড়ায় তখন সেটির গতিবেগ কম ছিল৷ তাই বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে৷ কখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারেননি রেলকর্তারা৷
রেলকর্তাদের একাংশের মতে পরিসেবা স্বাভাবিক হতে সন্ধেও হয়ে যেতে পারে৷ এদিকে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রেলকর্মীরা দেরি করে আসাতেই কাজ শেষ হতে দেরি হয়েছে৷ ফলে ভোগান্তি বেড়েছে তাঁদের৷ যদিও রেলের তরফে তা মানা হয়নি৷ তাঁদের বক্তব্য- দ্রূতই মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে৷
অন্যদিকে, এদিন সকালে হালিশহরের কাছে দু’নম্বর ডাউন লাইনে ফাটল দেখা দেওয়ায় ওই শাখায়ও কিছুক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে৷ এই দুই ঘটনার জেরে শনিবার সকালে শিয়ালদহ শাখায় রেল পরিসেবা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে৷
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা রবি মহাপাত্র বলেন, "দমদমে কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচেছ৷ তবে এই ঘটনায় কারও কর্তব্যে গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷"
শীতের ভোর।
চারিদিকে তখন ধুলোয় ভরে গিয়েছে৷ আতঙ্কে চিত্কার করতে থাকেন যাত্রীরা৷ ঘটনায় হতচকিত দমদম স্টেশনের অন্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন৷ নয় কামরার ট্রেনটির সাতটি কামরাই লাইনচ্যুত হওয়ায় অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন যাত্রীরা হয়তো আহত হয়েছেন৷
সাময়িক অসু্স্থ হলেও বরাত জোরে কোনও যাত্রী আহত হননি৷ এদিকে এই ঘটনার জেরে বিভিন্ন্ স্টেশনে আটকে পড়ে রাজধানী, কাঞ্চনকন্যা, পদাতিক, উত্তরবঙ্গ, তিস্তা-তোর্সা, লালগোলাসহ একাধিক ট্রেন৷
বেলা বাড়লে দু-নম্বর লাইনকে বাদ রেখে অন্য লাইন দিয়ে ডাউন লাইনের ট্রেন চলাচল শুরু হয়৷ তবে বেলা পর্যন্ত চলে যাত্রী দুর্ভোগ, রেলের তরফে কামরা তোলার কাজ চালানো হয়৷ কামরা তোলার জন্য ক্রেন নিয়ে আসা হয়৷ নিয়ে আসা হয় নতুন স্লিপার, ট্র্যাক৷ চলে নতুন লাইন বসানোর কাজ৷
রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচেছ লাইনের ফিসপ্লেট আলগা থাকার কারণেই এই দুর্ঘটনা৷ তাপমাত্রা বাড়া-কমার কারণে, না-কি অন্য কোনও কারণ সে বিষয়টিও রেলের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
এদিকে দুর্ঘটনার জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বারাসত স্টেশনে রেল-অবরোধ করেন নিত্যযাত্রীরা৷ বিভিন্ন্ স্টেশনে আটকে পড়ে ট্রেন৷ চরম দুর্ভোগে পড়েন হাবড়া, অশোকনগর, নৈহাটি, গেদে, হাসনাবাদ, বারাকপুর, সোদপুর, বারাসতসহ একাধিক শাখার ট্রেনের যাত্রীরা৷
এদিকে ট্রেন বন্ধ দেখে প্রায় সব জায়গাতেই মওকা বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে নেন ট্যাক্সি এবং অটোচালকরা৷ হালিশহরের কাছে ডাউন দু’নম্বর লাইনে রেললাইনে ফাটল দেখা দেওয়ায় শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১ ২০১৪