কলকাতা: সেই রাজাও নেই৷ সেই বিদূষকও নেই৷ শুধু ইতিহাস আছে৷ তারই পুনরাবৃত্তি হল প্রায় ২৮০ বছর পর৷ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের বংশধরের মুখোমুখি হলেন বিদূষক গোপাল ভাঁড়ের বংশধর৷কলকাতা বইমেলায়৷ উত্তর পুরুষের হাত ধরে দুই ঐতিহাসিক চরিত্র আরও জীবন্ত হয়ে উঠল৷
হুগলির খানাকুল থেকে গোপাল ভাঁড়কে নিজের রাজসভায় বিদূষক করে এনেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়৷
গোপাল ভাঁড় মানেই তো হাসির ফোয়ারা। শৈশবে বাংলার এই রসিকের গল্পে বুঁদ হননি এমন সংখ্যা মেলা ভার।
গোপাল ভাঁড় হাস্য কৌতুকে ভরিয়ে দিতেন সবাইকে৷ কত গল্প, কত আড্ডা, কত মজা, শলা-পরামর্শ...সেই রাজা-রানি, বিদূষক, সেই রাজসভা...৷ রাজতন্ত্র থাকলে এই দৃশ্যই হয়তো দেখা যেত কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে৷ সোমবার দর্শকদের মধ্যে ঘুরপাক খেল এই কথা৷ তাঁরা শুনে বিস্মিত হলেন, গোপল ভাঁড়ের বংশধরদের কেউই হাস্যকৌতুকে পারদর্শী নন৷ পেশার তাগিদে সবাই ছুটছেন৷
রহস্যের জাল বুনে বাংলা সাহিত্যে রয়ে গেছেন গোপাল ভাঁড় চরিত্র। সেই গোপাল ভাঁড়কে নিয়েই কলকাতা বইমেলায় গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করলেন সাংবাদিক সুজিত রায়। বইয়ের নাম গোপাল ভাঁড়ের সন্ধানে।
কলকাতার ৪/১/১ রাধাপ্রসাদ লেন৷ সুকিয়া স্ট্রিট সংলগ্ন এই বাড়িটিতেই পাঁচ পুরুষ ধরে বাস করছেন গোপাল ভাঁড়ের বংশধররা৷ এই বাড়িরই তিন সদস্য উপস্থিত ছিলেন বইমেলায়৷
মলয়কুমার দাস, বিষ্ণুমাধব দাস ও ছ' বছরের শৌভিক দাস৷ প্রত্যেকের শরীরেই বইছে গোপাল ভাঁড়ের রক্ত৷ মলয় দাস গোপাল ভাঁড়ের ত্রয়োদশ প্রজন্ম৷ সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যাণ্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সিইএসসি থেকে কিছুদিন হল অবসর নিয়েছেন৷ বললেন, গোপাল ভাঁড় একজন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন৷ এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন না৷ আশা করি বংশধরদের দেখার পর গোপাল ভাঁড়ের অস্তিত্ব নিয়ে আর কোনও বিতর্ক থাকবে না৷"
একই বক্তব্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের বংশধর সৌমিশচন্দ্র রায়ের৷ জানালেন, গোপাল ভাঁড় কোনও কল্পনিক চরিত্র নন৷ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আর গোপালের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল৷ রাজা অনেক কাজই গোপাল ভাঁড়ের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে করতেন৷
তাঁদের রাজবাড়িতেও কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার যে তৈলচিত্র রয়েছে তাতেও গোপাল ভাঁড়ের ছবি রয়েছে৷ রয়েছে আরও অনেক তথ্য প্রমাণ৷ গোপাল ভাঁড়ের গল্প নিয়ে অনেক বই থাকলেও সেগুলি কখনও ঐতিহাসিক দলিল হয়ে উঠতে পরেনি৷
ফলে গোপাল চরিত্রে কাল্পনিকতার ছায়া পড়েছে৷ তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে৷ ১৯২৯ সালে গোপালের বংশধর নগেন্দ্রনাথ দাস ‘নবদ্বীপ কাহিনী' নামে একখানি বই লেখেন৷ তাতেও অনেক প্রমাণ রয়েছে৷ রয়েছে গোপালের ‘ফ্যামিলি ট্রি'৷ তাতে দেখা যাচেছ গোপাল ভাঁড়ের আসল নাম ছিল গোপাল ভাণ্ডারী৷
‘ভাঁড়ামি'-র জন্যই তাঁকে ভাঁড় বলে ডাকা হত৷ গোপালের জন্মের আগে তাঁর বংশের পদবি ছিল ‘নাই'৷ মৃত্যুর পর আরও দু'বার গোপালের বংশের পদবি পরিবর্তন হয়৷
প্রথমে ছিল ভাণ্ডারী, সবশেষে দাস৷ গোপালের ভাই কল্যাণকুমার ভাণ্ডারীর বংশধর এই মলয়কুমার দাস৷ আরও গভীরে গিয়ে এই তথ্যই ফের মলাটবন্দি করছেন কর্পোরেট কর্তা সুজিত রায় তাঁর নতুন গবেষণাধর্মী বই ‘গোপাল ভাঁড়ের সন্ধানে'৷
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৪