কলকাতা: নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের লোক। বুধবার কলকাতায় এসে ভাঙ্গা বাংলায় কথা বলে পশ্চিমবঙ্গবাসীর মন জয় করার চেষ্টা করলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি৷
বুধবার কলকাতায় তাঁর সভা ঘিরে জনগণের বাড়তি উত্সাহ ছিল৷ কড়া নিরাপত্তায় হেলিকপ্টারে উড়ে এসে অগুনতি জনতার সামনে সভা করলেন মোদি৷
ভাষণ শুরু করলেন বাংলা দিয়ে, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি৷' গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদি বোঝালেন গুজরাতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের টান নিবিড়৷
৩৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের জন্য এদিন যথেষ্ট প্রশংসা করেন তিনি৷
সেই সূত্র ধরেই, পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে তাঁর আবেদন, "এবার দেশেও পরিবর্তন করুন৷ এখানে মমতা উন্নয়ন করছেন৷ আমি কেন্দ্রে বাংলার জন্য কাজ করব৷" কংগ্রেস ও বামেদের তুলোধনা করলেও মোদি এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সেভাবে মুখ খোলেননি৷
তিনি বলেন, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচন কোনও রাজনৈতিক দলের নয়, জনতার ভোট৷ এই নির্বাচনের এজেন্ডা তৈরি করেছে সাধারণ মানুষই৷ বাংলার উন্নয়নের জন্য বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷ তবে একইসঙ্গে একহাত নেন তৃতীয় ফ্রণ্ট তৈরির পরিকল্পনাকারীদের৷
তিনি বলেন, পশ্চিমভারত দ্রুত উন্নয়ন করছে৷ কিন্তু পূর্ব ভারত পারছে না৷ তার কারণ, পশ্চিম ভারতে তৃতীয় ফ্রণ্টের ভাবনা নেই৷ বিজেপিকে ভোট দেওয়ার তিনটি সুবিধাও স্পষ্ট করে দেন তিনি৷ এতে পশ্চিমবঙ্গে থাকবে পরিবর্তনের সরকার তৃণমূল৷ কেন্দ্রে বিজেপি৷ আর মাথার উপর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, যিনি পশ্চিমবঙ্গেরই মানুষ৷
বামেদের তুলোধনা করে মোদি বলেন ৩৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গকে তারা লুটের রাজ্য তৈরি করেছে৷ সেখানে গণতন্ত্র ছিল না, ছিল লুঠতন্ত্র৷ কংগ্রেসের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসে থাকাকালীন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কেন প্রধানমন্ত্রী করা হয়নি?
মোদি বলেন, বাংলার বিকাশের জন্যই কেন্দ্রে সরকার বদলের প্রয়োজন৷ বিজেপি, রাজ্যের বেকার সমস্যা, দারিদ্র নিয়ে লড়বে৷ শিল্পোন্নয়ন হবে৷ বাংলার উন্নয়নই ফের ভারতকে বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দেবে৷
তার কথা- 'চিত্ত যেথা ভয় শূন্য'।
মোদি বলেন, গুজরাট গঠনে বাংলার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই গুজরাটে শিল্প গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। বাঙলার ভাই বোনকে আমার ভালবাসা।
দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছান নরেন্দ্র মোদি। ২টো ৪০-এ দমদম বিমানবন্দর থেকে চপারে সমাবেশস্থলে পৌঁছান মোদি।
বুধবার বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ ব্রিগেডের সমাবেশে ঢোকেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ।
সমাবেশের শুরুতে ভাষণ দেন প্রাক্তণ কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তপন সিকদার। মঞ্চে ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী, জাদুকর পিসি সরকার (জুনিয়র), শাহনওয়াজ হুসেন, বরুণ গান্ধী, অর্জুন মুণ্ডা, সিদ্ধার্থ নাথ সিংহ, রাহুল সিংহ প্রমুখ। মোদীর সমাবেশ ঘিরে গোটা চত্বর জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
চার দিন আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বাপ্পি লাহিড়ী এ দিন মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, কংগ্রেসের বিকল্প তৃণমূল নয়। কেন্দ্রে কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়তে পারে একমাত্র বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা এক থেকে ৪২ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজনাথ সিংহ তাঁর ভাষণে বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষ এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখ করে বলেন, এত মানুষের জমায়েত হবে তা ভাবিনি। তাঁর কথায়- গত ৩৫ বছরে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গকে অর্থনৈতিকভাবে একেবারে পিছনে সারিতে নিয়ে গিয়েছে।
সিপিএমকে সরিয়ে তৃণমূলকে সরকারে আনার জন্য তিনি রাজ্যের মানুষকে ধন্যবাদ জানান। কিন্তু পরিবর্তনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মানুষ যতটা আশা করেছিলেন, তিনি ততটা পূরণ করতে পারছেন না বলে এ দিন মন্তব্য করেন রাজনাথ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৪