ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

শুরু হল ভোট, চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ

স্টাফ করেপসন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৪
শুরু হল ভোট, চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ

কলকাতাঃ সোমবার শুরু হয়ে গেল ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন। ৯ দফা নির্বাচন শেষে ১৬ মে ফলাফল ঘোষণা।

গোটা দেশ জুড়ে এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

ভারতের প্রায় সব ক’টি প্রধান মিডিয়া এই লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের নির্বাচন পূর্ব মতামত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে। এই মতামত সমীক্ষায় উঠে এসেছে ফলাফলের বিভিন্ন প্রবণতা।

মূলতঃ প্রতিটি কেন্দ্রের কিছু সংখ্যক ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে নমুনা সমীক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি দলের আসন লাভের সম্ভাবনার একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে পরিসংখ্যাণ বিদ্যাকে। যদিও ভারতে বিগত কয়েক বছর ধরেই এই সমীক্ষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কারণে ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে।

যদিও সব দলের রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে দাবী করছেন ভোটের ফল সমস্ত সমীক্ষাকে ছাপিয়ে তাদেরই অনুকূলে আসবে। তবুও বলা য়ায় এই মুহূর্তে ভারতের   নির্বাচন পূর্ব মতামত সমীক্ষা গোটা ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অত্যন্ত আগ্রহ সঞ্চার করেছে।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার ভারতের লোকসভায় মোট আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী এর মধ্যে ৫৪৩টি আসনের জন্য ভোট হয়। বাকি দুটি আসনে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের থেকে মনোনীত করা হয়ে থাকে।

১৫ মার্চ ভারতের প্রথম সারির মিডিয়া এনডিটিভি জানিয়েছে, তাদের পরিসংখ্যাণে ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রে মধ্যে ১০৬ টি কেন্দ্রে জাতীয় কংগ্রেসের বিজয়ী হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের  ইউ পি এ–এর সহযোগীদের যোগ করা হয় এন ডি টি ভি-এর হিসেবে সেটা দাঁড়ায় ১২৯। এই সহযোগীদের মধ্যে আছে আরও পাঁচটি রাজনৈতিক দল।

এন ডি টি ভি-এর হিসেবে বিজেপি পাবে ১৯৫ টি আসন। অর্থাৎ ২৭২ টি আসন পেয়ে একেক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাচ্ছে না বিজেপি। এক্ষেত্রে বিজেপি’র সহযোগীদের অর্থাৎ এন ডি এ-এর সবকটি দলকে ধরলে সেই আসন সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২২৯টি। এই হিসাব মেনে চললে ভোট পরবর্তী সময় এন ডি এ-এর বাইরে থাকা দল গুলির কাছ থেকে সমর্থন চাইতে হবে বিজেপিকে।

এন ডি এ-এর বাইরের দলগুলির মধ্যে এনডিটিভি’র বিচারে তৃণমূল কংগ্রেস(টি এম সি) পাবে ৩২টি আসন। এছাড়া বাকি এন ডি এ এবং উ পি এ–এর মধ্যে নেই সেই দলগুলি পাবে ৪৬টি আসন। এর মধ্যে আম আদমি পার্টি ৪টি আসন পাবে  বলে  এন ডি টি ভি-এর সমীক্ষায় বলা  হয়েছে।

ভারতের অপর অন্যতম নিউজ মিডিয়া এ বি পি নিউজ এবং এসি নিয়েলসন এই বিষয়ে যৌথ সমীক্ষা করে ২৯ মার্চ। এ বি পি নিউজ পরিসংখ্যাণে জানাচ্ছে- কংগ্রেস পরিচালিত ইউ পি এ জোট পেতে পারে  ১১৯ টি আসন যেখানে বিজেপি পরিচালিত এন ডি এ জোট পেতে পারে ২৩৩টি আসন। অর্থাৎ এই সমীক্ষাতেও উঠে আসছে ভোট পরবর্তী নতুন জোটের ইঙ্গিত।

এবার আসা যাক জি নিউজের পরিসখাণের দিকে। ৩ এপ্রিল প্রকাশিত জি নিউজ এবং তালিম রিসার্চ ফাউন্ডেশনের যৌথ সমীক্ষায় বলা হয়েছে  এউ পি এ পেতে পারে ১২১ থেকে ১৩২ টি আসন। অপর দিকে বিজেপি পরিচালিত এন ডি এ পেতে পারে ২১৫ থেকে ২২৫টি আসন।

সি এন এন –আই বি এন‘র প্রকাশ করা পরিসংখ্যাণ জানাচ্ছে বিজেপি এবং তাদের সহযোগী মিলে  এন ডি এ পেতে চলেছে ২৩৪ থেকে ২৪৬ টি আসন। যেখানে কংগ্রেস পরিচালিত ইউ পি এ-পেতে চলেছে  ১১১-১২৩ টি আসন। এই পরিসংখ্যাণে আলাদা করে বিজেপিকে ২০৬ থেকে ২১৮ এবং কংগ্রেসকে ৯৪ থেকে ১০৬ টি আসন পাবে বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে।

এবার আসা যাক পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের পর্যালোচনায়। বিগত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল,  পরবর্তী সময় বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল, বিগত নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের কাজকর্ম, এলাকার উন্নয়ন, বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে সাড়া পাওয়া, বিভিন্ন সূত্রে উঠে আসা সাধারণ মানুষের মতামত, স্থানীয় ইস্যু ভিত্তিতে বাঙলানিউজ২৪-এর কলকাতা প্রতিনিধির তরফে একটি একটি করে লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফলের প্রবণতা বিচার করার চেষ্টা করা হয়।

বলে রাখা দরকার এই বিশ্লেষণ কখনই কোন নিশ্চিত ফলাফলের ইঙ্গিত নয়। শুধুমাত্র ফলাফলের প্রবণতা বোঝার একটা চেষ্টা মাত্র।

৪২টি লোকসভার বিশ্লেষণ করার পর যে ফলাফল উঠে এসেছে সেটি হোল মোট আসনের ১৬টি আসনে তীব্র লড়াই হবে। এই আসন গুলির মধ্যে অনেক গুলিতেই চর্তুমুখী লড়াই হচ্ছে। তীব্র লড়াই হতে পারে কলকাতা উত্তর, যাদবপুর, হাওড়া, শ্রীরামপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান পূর্ব, দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর, বীরভূম, ব্যারাকপুর, দমদম, জয়নগর, ডায়মন্ড হারবার, কৃষ্ণ নগর এবং রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে।

১২টি আসনে তৃণমূল কংগ্রেস খুব বড় ব্যবধানে জয় লাভ করবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। এই ১২টি আসন হল কুচবিহার, বনগাঁ, বারাসাত, মথুরাপুর, কলকাতা দক্ষিণ, উলুবেড়িয়া, হুগলী, আরামবাগ, তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল এবং মেদিনীপুর ।

১১টি আসনে বামফ্রন্টের সহজেই জয়ের সম্ভাবনা আছে।   এই আসন গুলি হল- বিষ্ণুপুর, আলিপুর দুয়ার, জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, বসিরহাট, মুর্শিদাবাদ, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়া।

২টি আসনে কংগ্রেসের সহজ জয় হতে পারে। এই দুটি আসন হল- মালদা উত্তর এবং বহরমপুর।

দার্জিলিং আসনটি পেতে পারে বিজেপি।

যে ষোলটি আসনে তীব্র লড়াই-এর কথা উঠে আসছে সেই ষোল আসনে তৃণমূল কংগ্রেস বা বামফ্রন্টের মধ্যে যে কেউ জয়লাভ করতে পারে। কয়েকটি আসনে কংগ্রেসের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। তবে ওই ১৬ টি আসনে কোন ভাবেই পরিষ্কার চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়।

বিগত তিনটি নির্বাচনের ফলাফল, বিগত সংসদ সদস্যদের কাজ কর্ম, স্থানীয় ইস্যু, প্রচারে মানুষের সাড়া, এলাকার উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া মানুষের মতামতকে বিশ্লেষণ করে ফলাফলের এই প্রবণতা বার করার চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে ভারতের সাড়ে ৮১ কোটি ভোটারই হচ্ছে শেষ কথা। আর সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।