মুক্তো পর্যন্ত গলে যায় বিনিগাড়ে চুবিয়ে রাখলে। মাছ-মাংস কোন ছাড়।
ভুলের ভুলভুলাইয়া থেকে বেরিয়ে আসাকে স্বাগত জানাতে চায়। ভুল স্বীকার করার সাহস দেখালে সাতখুন মাফ। স্বচ্ছতা থাকুক। বিশ্বাস ফিরলে তার পেছন পেছন ভালোবাসাই ফেরে। সম্পর্কের নিয়মই তাই। রাগ-অভিমান-ভাঙ্গন, ফের বন্ধন। ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে সিম্পলি ভালবাসায়। সংগঠন জিরো। অধিকাংশ নেতাকর্মীরা নিরুদ্দেশ কিংবা জেলে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘাড়ে করে তাদের তোলে এনে ফেলল মহাকরনে।
এবার মানুষ এখনও বাম নেতাদের ভাল করে চেনেনি। শুধু লাল রঙটা চিনেছে। মহাকরণে জনজোয়ারে হাবুডুবু ভট্টাচার্যও। এক পা এগোতে সবার সহযোগিতা চাইছেন। ভিড়ে পথ কাটছেন আগামী দিনের নেতা। সাতাত্তরের ২১ জুন থেকে দু’হাজারের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। পাশে বুন্ধদেব সতর্ক পাহারায়।
প্রতিবাদে ছিটকে আবার ফিরেছেন। জ্যোতি বসুর অবসরের পরই ২০০৬-এর নির্বাচনে বিধানসভার ২৯৪ আসনের ২৩৬ আসন বামফ্রন্টের। বাম নেতাদের স্বস্তির
নিঃশ্বাস, যাক বিরোধীরা শেষ। অঙ্কে ভুল। আসলে তো আসন বেড়েছে, ভোট তেমন বাড়েনি। ক্ষমতার উত্তাপে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক পুঁড়ে যাওয়াটা খেয়াল হয়নি।
পোঁড়া গন্ধ নাকে আসেনি। জ্যোতি বসু পই পই করে বলেছিলেন, অন্যদের কাছে টানো। মানুষের মন পড়ো। তারা কী চাইছে দেখো। আহারীরা অগ্রাহ্য করেছে সে কথা। গ্রামে গ্রামে পাওয়ার হাউজ গড়ে গ্রাম দখল করতে চেয়েছে। লোককে বলেছে, তোমাদের দরকার হয় তোমরা এসো, আমরা কোথাও যেতে পারব না। ঠিক কথা।
ঠেকলে লোকে তো আসবেই। ধীরে ধীরে লোকের আসা কমলো। কেন? দেওয়া কমলআ তাই। যদ্দিন পাওয়া তদ্দিন আশেপাশে ঘুরঘুর। তারপর বহুদূর।
২০০৬-এ জিতে বুদ্ধদেব নামলেন শিল্পায়নে। ঘোষণা করলেন, এটা কমিউনিজম নয়, ক্যাপিটালিজম। এ মুহূর্তে বাংলার উন্নয়নে এটাই দরকার। তিনি দ্রুত এগোলেন পরিকল্পনা রূপায়নে। বললেন, কালকের জন্য কোন কাজ ফেলে রাখা যাবে না। ‘ডু ইট নাও’।
ভাল শ্লোগান হলেও বাঙালির ক্ষেত্রে অচল। আলসেমিতে ধীরে চলাটা স্বভাব। সিপিএমের অবস্থা এখন আরও খারাপ। গ্রামের কর্মী নেতারা নায়েব গোমস্তার চালে চলছে। সিন্ধর, নন্দীগ্রাম ড্রিম প্রজেক্টে তাদের ভূমিকা জিরো। মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মম্ভরিতায় বন্দী। হুকুমে কাজ হাসিলের প্রবণতা। কঠোর নির্দেশ- যাও তোমরা জমি দিয়ে দাও। হলদিয়ার নবাব নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন। ভাবলেন, তাঁর কথায় হুড়মুড় করে গ্রামবাসী জমি দান করবে।
ভূমি সংস্কারে যে সিপিএম ভূমিহীনদের জমি দিয়েছে,তারা এবার জমি কাড়তে চাইছে। এভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার মানে? উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মাটি ঘেঁষা কর্মীনেতাদের। তারা তখন মাটি ঘেঁষে নেই। অনেকটাই উপরে উঠে গেছে। রাজনীতিকরা বেনিয়া হয়ে গেলে বিপদ। লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষে আর আখের গোছায়। মানুষকে মানুষ ভাবে না, পণ্য মনে করে।
সিপিএমের বাড়বাড়ন্তের পেছনে জ্যোতি বসুর নেতৃত্ব। সংগঠন আর সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন থাকলেও খুব একটা ক্ষতি হয়নি তাতে। বুন্ধদেব দায়িত্ব নেওয়ার পর সাধারণ মানুষের স্বীকৃতি পেলেও দলে জটিলতা বাড়ে। রাংতা খোলা হাওয়া লাগা চকোলেটের মতো চটচটে হতে থাকে দল। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ে।
ক্ষমতার উষ্ণিতার বাইরে ঠাণ্ডায় থাকা চকোলেট একটু একটু করে কঠিন হচ্ছে। বুন্ধদেব নিজেকে ফিরে পাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্ব যত মর্যাদা পাবে দলেরও তত লাভ।
**ভোটের ভাটিয়ালি । । গরম আইসক্রিম
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৪