কোচবিহারের পাশেই রংপুর। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের প্রথম আলো দেখা কোচবিহারে।
কোচবিহারের গায়েই ছিটমহল। তারা কিন্তু ভোট দিতে পাগল। রাজনীতির সাতসতের তাদের মাথায় ঢোকে না। যেভাবেই হোক ভোটাধিকার পেলেই হলো। সেটা আর পাচ্ছে কোথায়? পৃথিবীতে থেকেও তারা পৃথিবীর নয়। বাংলাদেশ-ভারতের মাঝখানে পড়ে থাকা নেই রাজ্যের বাসিন্দা। ২০১১-র সেপেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বৈঠকের পর, তারা যেকোন একটি দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। সেটা অধরাই থেকেছে। বাংলাদেশের সংসদের ছিটমহল চুক্তি পাশ হওয়ার পর দিল্লির সংসদে অনুমোদন পাওয়ার কথা ছিল। দুই তৃতীয়াংশ সংসদের সমর্থন পেলেই কাজটা হয়ে যেতো। কিন্তু হয়নি। বিতর্কের ঝড়ে উড়েছে স্বপ্ন। তারা অপরিচয়ের অন্ধকারে পড়ে থেকেছে। ভারতে নতুন সরকার এলেই কি তাদের দাবি মর্যাদা পাবে? কে জানে?
আপাতত তারা অচ্ছুৎ। ভোটের কড়াকড়িতে প্রতিদিন সীমিত সময়ের জন্য কোচবিহার ঢোকাও বন্ধ। রোগাক্রান্ত মানুষ যন্ত্রণায় ছটফট করলেও কোচবিহার হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাবে না। কাঁটাতারে ঘেরা দরজা বন্ধ। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া পাহারা। পোলিং বুথে যাওয়া দূরের কথা, দূর থেকে দেখাও সম্ভব নয়। ঘরে বসে ছলছল চোখে শুধু জানালায় চোখ রাখা। আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তাঁর করুণায় যদি ভবিষ্যতের দরজা খোলে।
কোচবিহার ছাড়াও বৃহস্পতিবার ভোট হলো, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি বামদের দুর্গ। ভাঙতে চাইছে তৃণমূল। কাজটা কঠিন। সংগঠন বাড়িয়েও মানুষের নাগাল পেতে নাজেহাল। তুলনায় দার্জিলিং অনেকটাই ধরাছোঁয়ার মধ্যে। সেখানে সিপিএম প্রার্থী সমন পাঠক হারবেন জেনেও খুশি। ২০০৯-এর নির্বাচনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার চাপে সিপিএম প্রার্থীই দিতে পারেনি। এবার প্রার্থী দিয়েছে। প্রাণ খোলে প্রচার চালিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় পতাকা উড়িয়ে ধরতে পেরেছে- আমরা আছি, মার খাইনি।
দার্জিলিংয়ের লড়াই বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের। প্রেস্টিজ ফাইট। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং সমর্থন করছেন বিজেপিকে। গতবার তারাই বিজেপি প্রার্থীকে জিতিয়েছে। তৃণমূল তফাতে ছিল। এবার সরাসরি সংগ্রাম। জনপ্রিয় ফুটবলার বাইচুং বুটিয়া তৃণমূল প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে বিমল গুরুংয়ের প্রধান অভিযোগ, বাইচুং দার্জিলিংয়ের কেউ নন। তিনি সিকিমের লোক। ক্ষমতা থাকলে নিজের রাজ্যেই লড়তে পারতেন। খামোকা ভিন্ রাজ্যে ভোটপ্রার্থী কেন? গুরুং যাই বলুন, সংবিধানে বাঁধা নেই। এক রাজ্যের মানুষ অন্য রাজ্যে দাঁড়াতেই পারেন। গুরুংও সেটা জানেন। তবু কথাটা বলছেন, জাতীয় ভাবাবেগকে উস্কে দেয়ার জন্য। দার্জিলিংকে পৃথক রাজ্য করার দাবিও তিনি আবার তুলেছেন। অন্যদিকে তৃণমূলের পাল্টা চাপ, মোর্চা নেতাদের দুর্নীতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মোর্চারা টাকা লুঠ করে অন্যদেশে পাঠাচ্ছে। দার্জিলিংয়ের কপালে লবডঙ্কা। ওঁরা যাই বলুন, ইভিএমে যা বলার বলে দিয়েছে মানুষ। কী বলবে জানা যাবে ১৬ মে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪