দেব আর জিতের মধ্যে কে বেটার বলা যায় না। দুজনে দুরকম।
ডিরেক্টরদের স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করেই দেবের অভিনয়। নিজের হাতে মুখে কিছু লেখা বলা দিয়ে যাননি। সোজাসুজি মানুষের সঙ্গে মিশতে চেয়েছেন। দিনে ৩৪ কিলোমিটার দৌড় শুরু করেছেন। হুড খোলা মহিন্দ্রা জিপে দাঁড়িয়ে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে অভিনন্দন বিনিময় করেছেন। সবার সঙ্গে হাত মেলাতে না পারলেও সবাইকে হাত নেড়েছেন। সূর্য্য যখন মাথায় আগুন ঢেলেছে মাথার ছাতা নেননি। মিনারেল ওয়াটারের বোতল মুখে খুলেছেন মাত্র। চোখে সানগ্লাস, মুখে হাসি। তাঁকে দেখতে ছুঁতে উপচে পড়ছে ভিড়।
তারকা হয়েও দেব যতটা জনমুখি হয়েছেন, মুনমুন সেন ততটা পারেননি। মহাতারকা মা সুচিত্রা সেনকে ভাঙিয়ে নির্বাচন জিততে চাইছেন। ছাতা ছাড়া এক পা নড়তে পারছেন না। দেব, মুনমুন দুজনেই অভিনয় শিল্পী। দুজনেই তৃণমূল প্রার্থী। দুজনে কত তফাৎ! মুনমুন শেষ দিকে সিনেমায় চান্স না পেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে যাত্রা করতেন। তবুও গ্রামের মাটিকে আপন করতে পারেননি। দেব সেখানে ষোলআনা সফল। গ্রামকে অন্তরে জায়গা দিয়েছেন।
সে কারণে অভিজ্ঞ রাজনীতিক সন্তোষ রামাও নিতান্ত অরাজনৈতিক প্রার্থী দেবকে ভয় পাচ্ছেন। ১৯৬৮ থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে সন্তোষ রামা। ১৯৮০ তে বিশিষ্ট রাজনীতিক গীতা মুখার্জির নির্বাচনী এজেন্টে ছিলেন। এমএলএ হয়েছেন। মেদিনীপুর জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়েছেন। তবু দেবের আবির্ভাবে কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভাবছেন তাহলে কি গ্লামারের কাছে রাজনীতি হেরে যাবে? সন্তোষ জোর দিচ্ছে পুরোনো শেকড়ে। মেদিনীপুরের নারায়ণগড়-পটাশপুর সীমান্তে নদীর ধারে দশগ্রামে তাঁর জন্ম। শৈশব থেকে জোতদার জমিদারদের অত্যাচার সয়েছেন। ক্রমে প্রতিবাদী হয়ে রাজনীতিতে পা রেখেছেন। গুরুদাস দাশগুপ্ত রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েই সন্তোষ রামাকে সিপিআই ঘাটাইলে প্রার্থী করেছে। গুরুদাস, কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। সংসদ হিসাবে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন সংসদে। সংসদে যেতে পারলে সন্তোষ কী করবেন সেটা পরের কথা। আপাতত তিনি বড় রাস্তা ছেড়ে আলপথ ধরে হাঁটছেন। পায়ে পায়ে ঘুরছেন ক্ষেত-খামার, চাষীর বাড়ি। দেবের মতো ফুলে সাজানো গাড়ি সেখানে পৌঁছায় না।
অন্যদিকে মাঝে মাঝে সাইকেলে যাওয়া হচ্ছে সন্তোষ। যাদের সঙ্গে সাড়া বছর থাকা তারা কী তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।
অন্যদিকে কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভূঁইঞা। দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল না; রাহুল গান্ধী জোর করে দাঁড় করিয়েছেন। বলেছেন, জেতা-হারার কথা ভুলে যান। মেদিনীপুরে কংগ্রেসের নিশান আপনি। সেটা পতপত করে উড়ুক। লোকে বুঝুক কংগ্রেস তাদের পাশে আছে।
মানস পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধীর সৌজন্যে। সেই দায়িত্ব এখন বহদারপুরের অবিসংবাদী কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর ঘাড়ে। নির্বাচনী যুদ্ধে তিনি সেনাপতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরম শত্রু। তৃণমূল সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, কংগ্রেসের উচ্ছিষ্ট নিয়ে তৃণমূল তৈরি। ওর কাজ করার লোক কোথায়। ঝগড়া মারপিট খুনোখুনি ছাড়া কিছুই বোঝে না। পেশায় ডাক্তার মানস সংযত-ভদ্র। পূর্বপুরুষ ছিলেন জমিদার। মানসের বক্তব্য, আমার রক্তের রঙ লাল। কোন কিছু পেতে নিচে নামা আমার ধাতে নেই।
**সময় অসময় বিস্ময়