আমেথি থেকে: আমেথিকে নতুন করে গড়ার মাধ্যমেই ভারত গড়ার ঘোষণা দিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির(বিজেপি) প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গান্ধী পরিবারের খাস তালুক ও রাহুল গান্ধীর আসন উত্তর প্রদেশের আমেথিতে এসেই এ ঘোষণা দিলেন তিনি।
এ আসনে বিজেপির প্রার্থী ও অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানিকে ছোট বোন সম্বোধন করে আমেথির দায়িত্ব তার হাতে তুলে দিয়ে জনগণের কাছে তার হয়ে ভোট চান মোদী।
ধবধবে সাদা কোর্তা পরা মোদীর প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্য জুড়েই ছিল কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধী ও সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর সমালোচনা। ছিল আমেথিবাসীর জন্য প্রতিশ্রুতির লম্বা তালিকা। আর ছিল স্মৃতি ইরানির প্রশংসা।
পোশাকের সাদার কাছে হার মানা মোদীর মুখের দাড়ি ও সাদা চুলে দুপুরের কড়া রোদও ম্লান হয়ে যায়।
কংগ্রেস সরকারের ৬০ বছরে আমেথির কোন উন্নয়নই হয়নি দাবি করে ৬০ মাসে অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন মোদী।
তিনি বলেন, আমি কথা দিচ্ছি- আগামী ৬০ মাসে এ এলাকার এমন উন্নয়ন করব, যা নিয়ে কেসস্টাডি করতে দুনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখানে হাজির হবে।
মোদী বলেন, প্রায় ৬০ বছর আপনারা একটি পরিবারকে পছন্দ করেছেন। এবার ৬০ মাসের জন্য আমাকে বেছে নিন।
গেরুয়া রঙের শাড়ি পরা স্মৃতি ইরানিও শুরু থেকেই সঙ্গী ছিলেন মোদীর। হাসিমুখে তাল মিলিয়েছেন মোদীর প্রতিটি কথায়। মোদীর আগে তিনি বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ছিলেন আরো বিজেপি নেতারা।
মোদী বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে আমি দেশ বানানোর আগে আমেথিকে বানাবো। আমেথি থেকেই শুরু হবে দেশের বিকাশ।
তিনি বলেন, আমি এখানে রাহুল গান্ধীকে পেরেশান করতে বা তার মুছিবত বাড়াতে আসিনি। তিনি এমনিতেই পেরেশান, আমাদের কিছু করতে হয়নি। আমি এসেছি আমেথিবাসীর মুছিবত কমাতে।
স্মৃতি ইরানীর পক্ষে ভোট চেয়ে মোদী বলেন, প্রত্যেকের ছোট বোনের উপর ভরসা থাকে। কিন্তু এ বোনের উপর আমার ভরসা একটু বেশিই। কারণ, মাত্র একমাস আগে তাকে এখানে পাঠিয়েছিলাম। এই অল্পদিনেই সে আমেথিবাসীর সঙ্গে মিশে গেছে।
তিনি বেশ পরিহাস করে বলেন, আমি স্মৃতিকে শুধু এখানে দাঁড় করিয়েছি, আর ওদিকে গান্ধীর পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে গেছে। পুরো পরিবার মিলে আমেথির ১০টি গ্রামের নাম বলতে পারবে না। কিন্তু স্মৃতি এ এলাকার ১০০ গ্রামের নাম বলতে পারবে।
মোদী বলেন, স্মৃতিকে আমি বেছে নিয়েছি। এবার আপনাদের পালা।
স্মৃতি ইরানিকে এ আসনের জন্য পছন্দের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, স্মৃতি আমার রাজ্য গুজরাটের রাজ্যসভার সদস্য। অত্যন্ত কম সময়ে সে গুজরাটে চমক দেখিয়েছে। তাই উত্তর প্রদেশের যে এলাকা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকবে সেখানেই তাকে পাঠানোর কথা ভেবেছিলাম। অনেক হিসাবের পর দেখা গেলো, আমেথিই সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে।
মোদী বলেন, আমি এখানে বদলার রাজনীতি করতে আসিনি। এসেছি বদলির রাজনীতি করতে। কংগ্রেস আপনাদের ভাগ্য বদলায়নি। আপনারা কংগ্রেসকে বদলে ফেলুন।
রোদে পুড়ে অপেক্ষমান মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বলুন ‘আগলি বার, মোদী সরকার। ’
কঠিন রোদের তাপে মোদী নিজেও যেন হাফিয়ে ওঠেন এক পর্যায়ে। বিকাল ৪টা ৩৮ মিনিটে বক্তব্য শুরু করলেও তখনও রোদ যেন দুপুরের তেজ ধরে রেখেছিলো সূর্য। বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে একবার ঘড়ি দেখে নেন তিনি। এর মিনিট তিন পর বক্তব্যের মাঝে একগ্লাস পানি খেতে দেখা যায় মোদীকে। বক্তব্য শেষের আগে সাড়ে ৫টায় আরও এক গ্লাস পানি খেয়ে ফের বলতে শুরু করেন মোদী।
তিনি বলেন, রাহুল ভাইয়া, আপনি বিজেপির নামে বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু কি করেছেন আমেথির জন্য। গত ১০ বছরে পার্লামেন্টে আমেথির জন্য ‘আ’ও লেখেননি। অথচ উন্নয়নের কথা জানতে চাইলে রাজ্য সরকারের ঘোড়ে দোষ চাপান।
আপনি যদি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিতেন তাহলে কি তারা উন্নয়ন কাজ না করে বসে থাকতে পারত?
কঠিন স্বরে মোদী বলেন, উপস্থিত সবাই, এমনকি মিডিয়ার বন্ধুরা লিখে রাখুন, ২০১৯ সালে (১৭তম লোকসভা নির্বাচন) আমি নিজে আসব এখানে। আমেথির উন্নয়নের হিসেব দেব।
রাহুল গান্ধীর তীব্র সমালোচনা করে মোদী বলেন, ২০০৯ সালে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন- পাঁচ বছরে ১০ কোটি নওজোয়ানের রোজগারের ব্যবস্থা করবেন, চাকরি দেবেন। আপনাদের কেউ কি পেয়েছে সেই চাকরি? আমি দেশকে লুট করতে দেব না।
তিনি বলেন, কংগ্রেসের অনেকে বলেছেন- মোদী হারলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন। আমি বলছি, কংগ্রেসের বন্ধুরা, আমার চা বানানোর সরঞ্জাম এখনো কিছু পড়ে আছে। আপনারা আমার জন্য চিন্তা করবেন না। দুর্নীতি করার চেয়ে চা বানিয়ে রোজগার করা অনেক উত্তম কাজ। পেট চালানোর জন্য এটাই যথেষ্ঠ।
নিজেকে সুখী রাজ্যের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করে মোদী বলেন, আমি দুর্নীতি করে খাবো না, খেতে দেব না। শুধু এখানকার মানুষের বিকাশ, শিক্ষা, কৃষককে পানি, নওজোয়ানদের চাকরি, আর মা বোনদের সম্মান দিতে চাই।
বক্তব্যের শেষ দিকে এক গরীব মায়ের সন্তান পরিচয় দিয়ে নিজেকে আম জনতার অংশ বলে দাবি করেন তিনি।
সময় গড়াতে থাকে গৌরিগঞ্জের মঞ্চে। আগামী ৭ মে আমেথি আসনে ভোট হওয়ায় সোমবার বিকেল পাঁচটায় সময় শেষ হয় নির্বাচনী প্রচারণার। কিন্তু পৌনে ছ’টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন মোদী। তখন জনতার ভিড়ে থেকে ভেসে আসতে থাকে ‘আগলে বার, মোদী সরকার।
কয়েক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে সে আওয়াজ শোনেন মোদী। হাত নাড়েন জনতার উদ্দেশ্যে। এরপরই বিদায় নেন মঞ্চ থেকে।
তার প্রার্থী স্মৃতি ইরানি সাস ভি কাভি বহুথি’ সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তুলসি চরিত্রে অভিনয় করে বাংলাদেশেও দারুণ সাড়া ফেলেছেন তিনি।
আমেথিতে জিততে হলে রাহুল গান্ধীকে হারাতে হবে তাকে। কিন্তু মোদী যতোই বলুক, স্মৃতি ইরানির জন্য কাজটা কঠিনই বটে। এর আগে এ আসনের ১৪টি ভোটের আসরে মাত্র একবার পরাজিত হয়েছিলো গান্ধী পরিবার। আর সব আসরে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে লড়া মানেই যেনো জামায়াত খোয়ানোর ইতিহাস।
এর আগে রাজীব গান্ধী, সঞ্জয় গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী এই আমেথি থেকে জিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমেথিতে রাহুল গান্ধী জিতেছিলেন ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ১৯৮ ভোটের বিশাল ব্যবধানে। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ১৯৫। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বহুজন সমাজবাদী পার্টির আশিষ শুক্লা পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ৯৯৭ ভোট। আর স্মৃতি ইরানির পূর্বসুরি বিজেপি প্রার্থী অশোক সিং পেয়েছিলেন মাত্র ৩৭ হাজার ৫৭০ ভোট।
** ফের আচরণবিধি ভাঙলেন মোদী!
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪