কলকাতা: বর্ধমান বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্ত যত এগোচ্ছে তত প্রকাশিত হচ্ছে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাদের জালের খবর। বিস্ফোরণে নিহত শাকিলের স্ত্রী গুলশান ওরফে রাজিয়ার কাছ থেকে পাওয়া গেছে একাধিক সিমকার্ড।
খবরে প্রকাশ, এ ঘটনায় আটক আমিনা ওরফে আলিমা জেরার মুখে পুলিশকে জানিয়েছে, তারা আগ্নেয়াস্ত্র চালাবার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আমিনা আরও জানিয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণের সময় জঙ্গি কার্যকলাপের ভিডিও দেখানো হত ।
অপরদিকে গুলশান ওরফে রাজিয়া জানিয়েছে, শাকিল কয়েকদিন আগেই তাদের বলেছিল, জিহাদের জন্য লড়াই করার সময় এসে গেছে। তাদের কাশ্মীর যেতে হতে পারে।
এ ঘটনায় আটক হাশেম মোল্লাকেও জেরা করেছে গোয়েন্দারা। এই তিন জনকে জেরা করতে গিয়ে বোঝা যাচ্ছে, তারা শুধু বিস্ফোরণ আর অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণই নেয়নি। পাশাপাশি পুলিশের জেরা এড়াবার প্রশিক্ষণও তাদের রয়েছে।
এদিকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি কওসরের ডেরা থেকে দুটি নাইন এম এম পিস্তল, দুটি ৭.৫ বোরের বন্দুক, ৬২টি কার্তুজ, ৮টি ম্যাগজিন, কওশরের স্ত্রীর প্রেসক্রিপশন (সম্ভবত), কওসরের হাতে লেখা একটি চিঠি, কয়েকটি পোড়া সিমকার্ড, পোড়া মোবাইলের ব্যাটারি, পোড়া নথি ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে অন্য রাজ্যে বা প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে পারে কওসর।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা কওসরের বাড়ির মালিক ও স্থানীয় মানুষদের কাছে জানতে পেরেছেন, মাস তিনেক আগে হাবিবুর শেখ নামে এক ব্যক্তি ওই বাড়ির দোতলার তিনটি ঘর ভাড়া নেন। তারা নার্সিংহোমে চিকিৎসা সংক্রান্ত জিনিসপত্র সরবরাহ করে বলে বাড়ির মালিককে জানায়। ভাড়া নেওয়ার পর সেখানে ২ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা থাকতেন।
ভাড়া নেওয়ার পরই পাড়ার মুদিখানা থেকে একসঙ্গে অনেক মাল কিনে নেয় ভাড়াটেরা। এক ব্যক্তির সঙ্গে একটি নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল ছিল বলে এলাকার মানুষ গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন। আশ্চর্যজনকভাবে তারা বাড়িতে ঢোকার সময়ও হেলমেট খুলত না।
স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, বাড়ির নারীরা প্রায় কখনই বোরখা খুলতেন না। ওই বাড়িরই নীচে ছাত্রদের থাকার একটি মেস আছে। কিন্তু মেসের ছাত্রদের দোতলায় উঠতে বাঁধা দিত ছদ্মবেশী জঙ্গিরা।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই বাড়ি ছেড়ে উধাও হয় ভাড়াটেরা। অপরদিকে বর্ধমানে আরও একটি সন্দেহজনক বাড়ির খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেই বাড়ির ভাড়াটেও বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ বলে জানা গেছে। খোঁজ পাওয়া যায়নি বাড়ির মালিকেরও।
সূত্রের খবর, বিস্ফোরণে আহত হাসপাতালে ভর্তি আবদুল হাকিমকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, তিনি দিনে একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় কাজ করতেন আর রাতে বর্ধমান খাগড়াগড়ের ভাড়াবাড়িতে বোমা ও গুলি বানাতেন।
তবে বর্ধমান বিস্ফোরণকাণ্ডে নিহত স্বপন ওরফে সোবাহানের ঠিকানার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে স্বপন ওরফে সোবাহান জানিয়েছিল তার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তরপাড়া নামক এক গ্রামে। যদিও এই নামের কোনো গ্রাম পূর্ব মেদিনীপুরে এখন খুঁজে পাননি গোয়েন্দারা।
তবে উত্তরপাড়া নামের সঙ্গে মিল পেয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানার উত্তরবাড় এলাকায় তল্লাশি চালালেও এখনো তেমন কিছু পায়নি গোয়েন্দারা।
এদিকে এ ঘটনায় আটকদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯ , ২০১৪