ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভোল পাল্টাচ্ছেন মমতার পরিবর্তনকামী বুদ্ধিজীবীরা

সিনিয়ার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১১
ভোল পাল্টাচ্ছেন মমতার পরিবর্তনকামী বুদ্ধিজীবীরা

কলকাতা: নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর কাণ্ডের পর কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের বড় একটা অংশ রাস্তায় নামেন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে। গত পৌরসভা ও লোকসভা নির্বাচনেও তারা সোচ্চার ছিলেন বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে।

কিন্তু এবার তাদের মধ্যে একাংশের ভূমিকায় অবাক কলকাতার রাজনৈতিক মহল। তারা ক্রমেই ভোল পাল্টাচ্ছেন।

অথচ গত নির্বাচনগুলোতে কলকাতায় বড় বড় বিল বোর্ডে তৃণমূল নেতৃত্ব তাদের প্রায় প্রত্যেকের ছবিসহ ‘পরির্বতন চাই’ স্লোগান দিয়ে সড়কের মোড়ে মোড়ে টাঙিয়ে দিয়েছিল।

সেদিন প্রথম প্রতিবাদ আসে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মমতাশঙ্করের কাছ থেকে।

তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেন, এভাবে তার নাম ব্যবহার করার বিরোধিতা করছেন তিনি।

এরপরই রাতারাতি সেই বিজ্ঞাপন থেকে তার নাম সরিয়ে দেওয়া হয়।

 সেই সময় লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হন গায়ক কবীর সুমন। তার হয়ে প্রচারে নামেন বুদ্ধিজীবীরা। নির্বাচনে জিতেই তিনি মাওবাদীদের পক্ষে দাঁড়ান। শুধু তাই নয়, দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন। দল ছাড়ার কথা বলেন।

অবশেষে লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর মধ্যস্ততায় তিনি পদত্যাগ না করলেও তৃণমূলের সভা-সমিতি যাওয়া বন্ধ করে দেন। যা এখনও অব্যাহত।

এরই মধ্যে নাট্য পরিচালক শাঁওলি মিত্র, চিত্রকর শুভাপ্রসন্নসহ কয়েকজনকে রেল মন্ত্রকের বিভিন্ন কমিটিতে উচ্চ পদে ও উচ্চ বেতন নিয়োগ দেন মমতা। তা নিয়ে বির্তক শুরু হয়।

বিধানসভা নির্বাচনের সময় দেখা যায় এদের মধ্যে নাট্যকার ব্রাত্য বসুকে দমদমে প্রার্থী করেছেন মমতা।

কলকাতা প্রেস ক্লাবে সম্প্রতি একটি সিডি প্রকাশ অনুষ্ঠানে মমতার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তারই ঘনিষ্ঠ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক তরুণ স্যান্যাল।

তিনি সেদিন বলেন, এটা অপ্রিয় হলেও সত্যি যে আমলারা এবার প্রার্থী হয়েছেন তারা বামফ্রন্টের আমলে বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গণ আন্দোলন দমনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বামফ্রন্টের নির্দেশে।

এরপর তিনি নাম উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে প্রার্থী রাজ্যের সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব মনীশ গুপ্ত, পুলিশের সাবেক দুই আইজি রচপাল সিং ও সুলতান সিং এর।

নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে পরিবর্তনকামী বুদ্ধিজীবী বলে যারা বিশেষ পরিচিতি তাদের আর আগের মতো কলকাতার টিভি চ্যানেলগুলোর টক শোতে তৃণমূলের পক্ষে গলা ফাটাতে দেখা যাচ্ছে না।

নাট্যকার ব্রাত্য বসুর হয়ে প্রচারে একমাত্র নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ ছাড়া আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এমনটা কিন্তু কবীর সুমন যখন প্রার্থী হয়েছিলেন তখন হয়নি।

সব শেষে ঘটনাটি ঘটল গতকাল সোমবার। নির্বাচনের জন্য অর্থ সংগ্রহ উদ্দেশ্যে মমতার আঁকা ছবির বিক্রির প্রর্দশনীতে অনুপস্থিত থাকলেন একাংশের বুদ্ধিজীবী।

ঠিক তখনই তারা রাজ্যে নির্বাচনে ‘পরিবর্তন চাই’ দাবি না জানিয়ে ‘ রক্তপাতহীন নির্বাচন’, ‘শান্তি চাই’ এই দাবিতে কলকাতায় মিছিল করলেন।

এই মিছিলে ছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ, চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেন, নাট্যকার কৌশিক সেন, গায়ক রূপম ইসলাম, সাহিত্যিক সুুচিত্রা ভট্টাচার্য প্রমুখ।

এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কিন্তু ঘোষিত পরিবর্তনকামী রূপে। হঠাৎ করে এদের এই অবস্থান কিন্তু বিস্মিত করছে রাজনৈতিক মহলকে। এরা তাহলে এখন কী চাইছেন?

পরিবর্তনকামী গণসঙ্গীত শিল্পী ও গীতিকার প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের লেখা সাম্প্রতিক এক গানের কথা মতো এরাও কী মনে করছেন-

“ আঙুলে ছাপ, বোতামে চাপ,
এদিকে পাপ ওদিকে পাপ,
এ পাপ চলল অনেকদিন,
ও পাপটাকেও সুযোগ দিন। ”

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।