কলকাতাঃ ‘ভাই বাংলাদেশের স্টলটা কোথায়?’ কলকাতার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত খাদ্য মেলা ‘আহারে বাঙলা’-এর দ্বিতীয় দিনে মেলা প্রাঙ্গণে প্রশ্নটা করলেন এক পৌঢ়া।
চোখে বেশি পাওয়ারের চশমা।
‘আচ্ছা বলতে পারেন, এরা কি বাংলাদেশ থেকে এসেছে? নাকি কলকাতার শেফদের তৈরি বাংলাদেশের খাবার!’ প্রশ্ন করলেন বৃদ্ধ ভদ্রলোক। যেদিকে বাংলাদেশের স্টল সেই দিকটি দেখিয়ে দিয়ে জানালাম, এরা বাংলাদেশের রাঁধুনি শুধু নয়, রান্নার উপকরণ এবং মশলাও বাংলাদেশের।
এগিয়ে গেলেন বৃদ্ধ দম্পতি। মেলায় তরুণ এবং অফিস ফেরত মানুষের ভিড়। তার মধ্যে এই পৌঢ় দম্পতি কিছুটা ভিন্ন। বাঙালির অম্বল, হজম, ডাইবেটিসের সমস্যা যখন প্রবল, তখন এই বয়সেও খাদ্য মেলায় আসা বৃদ্ধ দম্পতি, দুটি ব্যতিক্রমী চরিত্র।
এর মধ্যে সময় কিছুটা কেটে গেছে এদিক ওদিক ঘুরে মেলার ছবি তুলে যখন বাংলাদেশের খাবারের স্টলে পৌঁছলাম তখন সেই স্টলে ভীষণ ভিড়। আকারে ছোট হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। ভিড় সামলাতে নাজেহাল হচ্ছেন স্টলের কর্মীরা। তারই মধ্যে আবারও দেখা হোল ঐ দম্পতির সঙ্গে। ভদ্রমহিলার হাতে ঝোলানো খাবার প্যাকেট। তখনও বৃদ্ধ ভদ্রলোক ভুনা খিচুড়ির স্বাদ নিতে ব্যস্ত। ওই ভদ্র মহিলাকেই প্রশ্ন করলাম, কেমন লাগল বাংলাদেশের খাবার।
‘আসলে ভাই আমি কলকাতার মেয়ে। বলতে পারেন খাস ‘ঘটি’। কিন্তু উনি বরিশালের। তাই আজ সকালে যখন বাড়ির কাছেই এই মেলার খবরটা জানতে পারলেন তখন আর দেরি করতে চাইলেন না। বলতে পারেন কর্তার ইচ্ছেতেই কর্ম। ’। বৃদ্ধ ভদ্রলোকের দিকে দেখিয়ে জানালেন কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা এই ভদ্রমহিলা। ছেলে থাকে ইউরোপে। সেখান থেকে ঘুরেও এসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে যাওয়া হয়নি এখনও।
কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ করে উঠে এলেন বৃদ্ধ। কেমন লাগল প্রশ্ন করতেই জানালেন ‘ ৪৭-এ এই স্বাদ ছেড়ে এসেছিলাম ভাই। এই বয়সে বাড়ি থেকে খুব একটা বেরোই না। আর বাইরের খাবার ডাক্তারের নির্দেশে অনেক আগেই বন্ধ’।
কলকাতায় কলেজ জীবন, তারপর কলকাতা বন্দরে চাকরি করেছেন, জানালেন বৃদ্ধ সুবিকাশ চট্টোপাধ্যায়। ফিরে পেলেন সেই ফেলে আসা স্বাদ? ‘২০১৫ তে সেই স্বাদ তো দেখলাম একই আছে, পাল্টায়নি খুব একটা। তবে খাদ্য তালিকায় ইলিশ নেই দেখে অবাক হলাম। ’ হেসে বিদায় নিলেন দম্পতি।
‘আহারে বাঙালি’ শিরনামে এই খাদ্য মেলার সফলতা এখানেই । যেখানে ৪৭ এর ফেলে আসা স্বাদ খুঁজে পেলেন এই বৃদ্ধ। চারিদিকে খাবারের সুগন্ধ। জনসমাগম বাড়ছে মেলা প্রাঙ্গণে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রসনার মাধ্যমে গোটা দুনিয়াকে কলকাতার মিলন মেলায় আনার পরিকল্পনা করেছিলেন। উদ্যোগে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাই কমিশন, মানতেই হবে এই প্রচেষ্টা একশ শতাংশ সফল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, ১ নভেম্বর , ২০১৫
ভি.এস/জেডএম