ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষক মাত্র ৩১০, জমি ৪০ একর!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১১

কলকাতা: সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের অধিগৃহীত জমি সংক্রান্ত কোনও তথ্য দিতে বিডিওকে বারণ করে দিয়েছে হুগলি জেলা প্রশাসন। জানা গেছে, রাজ্য সরকারের নির্দেশেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।



এদিকে, টাটার গাড়ি কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি ফেরতের আবেদনকারী অনিচ্ছুক কৃষকদের মাত্র ৩১০ জনের আবেদনপত্র ঠিকঠাক এবং এদের জমির মোট পরিমাণ মাত্র ৪০ একর, এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

রোববার সাংবাদিকরা সিঙ্গুরের বিডিও পুলক সরকারকে প্রশ্ন করলে তিনি জানিয়ে দেন, ‘কোনও কথা বলবো না। আমার কথা বলা বারণ। ’

জমি ফেরত নিতে অনিচ্ছুকদের ১ মাস সময় দিয়েছিল প্রশাসন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার। গত ২২শে জুলাই সেই মেয়াদ শেষের পর দেখা যাচ্ছে, ২২০০ জন ‘অনিচ্ছুক’ আবেদন করলেও, তাদের মধ্যে ৪০ একর জমির মালিক ৩১০ জনের আবেদনপত্রের কাগজ ঠিক। বাঁকিদের জটিলতা আছে। ফেরত দেওয়া অসম্ভব। এই তথ্যটি ফাঁস হতেই এখন কার্যত অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার।

তৃণমূল দলের অন্দরে অবশ্য এনিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তৃণমুলের একটি সুত্র জানিয়েছে, ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসেও তৃণমূল যখন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুকদের জমি ৪০০ একর ফেরত দিতে হবে বলে আন্দোলনে নেমেছিল, তখন দলেরই তরফে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।

সেই সমীক্ষাতেও তৃণমূল সিঙ্গুরের সেই জমিতে মাত্র ২৭১ জন অনিচ্ছুক কৃষকের খোঁজ পেয়েছিল, যাদের জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র ও দাবি-দাওয়া ঠিক ছিলো। ২৭১ জনের সঙ্গে ৩১০-এর খুব বেশি তফাত হচ্ছে না গত সাড়ে চার বছরের ব্যবধানে।

২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে সিঙ্গুরের জমি ফেরতের দাবিতে ধর্মতলায় অনশনে বসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেইসময় তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং থেকে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিং তো বটেই, রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একাধিক চিঠিতে লিখিত আবেদনেও মমতা সাড়া দিয়ে অনশন প্রত্যহার করেননি।

ওই সময়ে রাজ্যের রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী মমতা ব্যানার্জিকে অনুরোধ করেছিলেন, সিঙ্গুরে কতজন অনিচ্ছুক কৃষক কত জমির মালিক, তার লিখিত নথিপত্র যেন তাকে দেওয়া হয়। তিনি খতিয়ে দেখবেন।

মমতা তখন অনশন মঞ্চ থেকে তাদের ‘আন্দোলন’-এর সঙ্গী নকশালীপন্থীদের দায়িত্ব দেন সার্ভে করার। অমিতাভ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে তৃণমূলের দল গিয়ে সিঙ্গুরের সমীক্ষা চালায়।

সমীক্ষা শেষে তৃণমূল রাজ্যপালকে যে হলফনামা দিয়েছিল, তাতে অনিচ্ছুক মাত্র ২৭১ জনেরই নাম ছিল, যাদের কাগজপত্র ঠিকঠাক।

এদিকে শনিবার রাতেই রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি আরামবাগ থেকে ফেরার পথে সিঙ্গুরের জমি নিয়ে আলোচনা করতে সিঙ্গুরের বিডিও অফিসে চলে আসেন। তারসঙ্গে হুগলীর জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজনও ছিলেন। রাতেই রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন পার্থ চ্যাটার্জি। সেখানে ডি এম, বিডিও, এস পি ছিলেন।

রবিবার বিডিও অফিসে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না, পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যরাও বিডিও-কে বৈঠকে বসেছিলেন। অনেকক্ষণ তাদের বৈঠক হয় কিন্তু কেউ কিছু বলতে চাননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।