ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভারতে নারীরা ব্রাত্য

রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১১
ভারতে নারীরা ব্রাত্য

কলকাতা: ভারত অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী-ফলাও করে এমনই প্রচার চালাচ্ছে সরকার। অথচ প্রদীপের নিচেই রয়েছে ঘন অন্ধকার।

সে খবর কতজন রাখেন? এদেশের নারীরা কী অবস্থায় রয়েছেন সেই চিত্রের দিকে তাকালে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়।

জাতিসংঘ সেই চিত্রকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ইউএনডিপি বুধবার ২০১১ সালের মানবোন্নয়ন রিপোর্ট পেশ করেছে। সেই রিপোর্টই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের নারীরা বিশ্ব-সিঁড়িতে কতটা নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভারতের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বাংলাদেশ, পাকিস্তানেও নারী প্রশ্নে মানবোন্নয়ন সূচকে ভারতের থেকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে।

বেশ কয়েকটি প্রশ্নে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ টেক্কা দিয়েছে ভারতকে। নারী উন্নয়নের প্রশ্নে, লিঙ্গ বৈষম্য সূচকের নিরিখে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১২৯-এ। এই প্রশ্নে পাকিস্তান রয়েছে ১১৫তম স্থানে, বাংলাদেশ ১১২তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে ভারতের নিচে রয়েছে একমাত্র আফগানিস্তান।

আইন সভায় নারীদের প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নেও পিছিয়ে ভারত। দেশটিতে বড়জোর ১০-১১ শতাংশ নারী আইন সভায় নির্বাচিত। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে এই হার ভারতের থেকে অনেকটাই বেশি। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা- এই পাঁচ দেশকে নিয়ে গঠিত হয়েছে ব্রিকস্। সেই ব্রিকস্ দেশগুলোর মধ্যেও লিঙ্গ বৈষম্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত।

ইউএনডিপির সিনিয়র উপদেষ্টা সীতা প্রভু এ তথ্য হাজির করে শুধু উদ্বেগই প্রকাশ করেননি, একই সঙ্গে সরকারকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ এ প্রসঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সাফাই গেয়ে বলেন, পঞ্চায়েত বা পৌরসভাকে এই সূচকের মধ্যে আনা হলে ভারতের অবস্থান আরও একটু ভালো হতো। কারণ সংসদ বা রাজ্যের আইন সভায় নারী প্রতিনিধির সংখ্যা কম হলেও পঞ্চায়েত বা পৌরসভায় এই সংখ্যা কিন্তু উল্লেখযোগ্য।

প্রসঙ্গত, নারী উন্নয়নের প্রশ্নে ভারতের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও মানবোন্নয়নের সূচকের সামগ্রিক মাপকাঠিতে ওই ক্রমতালিকায় পাকিস্তান রয়েছে ১৪৫তম স্থানে এবং বাংলাদেশ ১৪৬-এ।

লিঙ্গ বৈষম্যের যে সূচক তৈরি করেছে জাতিসংঘ তাতে গত বছর বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করেছিল তারা। এই ক্ষেত্রগুলো হলো প্রসূতিকালীন মৃত্যুর হার, মায়ের স্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা, সংসদে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা, মাধ্যমিক শিক্ষার আওতায় আনা, শ্রমিকদের মধ্যে নারীদের হার।

এবারও সেই মাপকাঠিকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই রিপোর্ট। সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় পিছনের সারিতেই রয়েছে ভারত।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ অবশ্য সাফাই গেয়ে বলেন, আসলে নারীদের জীবন ধারণের মান উন্নত হওয়ায় এবং উচ্চ শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রম ক্ষেত্রে নারীদের হার হ্রাস পেয়েছে।

তিনি সরকারকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও এই যুক্তি অবশ্য ধোপে টেকে না। কারণ ১২০ কোটির দেশে প্রায় ৯৮কোটি মানুষই দিনে ২০ টাকার বেশি খরচ করতে পারেন না।

রিপোর্ট বলছে, যে সমস্ত উন্নত দেশে মানবোন্নয়নের সূচক ঊর্ধ্বমুখী, সেসব দেশে নারী শ্রমজীবীর সংখ্যাও কিন্তু বেশি। সেই সূত্রকে মানলে জয়রাম রমেশের যুক্তির যে বাস্তবতা নেই তাই প্রমাণ হয়।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আয়ের সূচকের ওপর ভিত্তি করেই ইউএনডিপির অঙ্কের হিসাবে মানবোন্নয়নে ভারতের সূচক দাঁড়িয়েছে দশমিক ৫৪৭। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গড়ের থেকেও কম। এই প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গড় ০.৫৪৮। গোটা বিশ্বে এই গড় ০.৬৩০। প্রচার মাধ্যম উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভারতকে অগ্রগামী শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করলেও খোলসের ভেতরটা যে একেবারে ফাঁকা তা প্রমাণ করছে এই রিপোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।