ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ত্রিপুরায় মাছের চাহিদার বড় যোগান ‘ডুম্বুর লেক’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
ত্রিপুরায় মাছের চাহিদার বড় যোগান ‘ডুম্বুর লেক’

আগরতলা(ত্রিপুরা): ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘ডুম্বুর লেক’। প্রতিবেশী দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এ জলাভূমির সবচেয়ে বড় উপাদান হলো মাছ।

রাজ্যের নিত্যদিনের মাছের চাহিদার বড় অংশের যোগান দেয় ডুম্বুর লেক।

শুধু যে ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর লেক প্রসিদ্ধ, তা নয়। এ লেকের মাছের চাহিদা রয়েছে পাশের রাজ্য আসামের করিমগঞ্জ, শিলচরসহ আশপাশের এলাকাতেও। প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আসামের ব্যবসায়িরাও ডুম্বুর লেকের মাছ সংগ্রহ করে থাকেন।

জনপ্রসিদ্ধ লেকটির অবস্থায় ত্রিপুরার ধলাই ও গোমতী জেলা নিয়ে। রাজ্যের বৃহৎ নদী গোমতীর উৎসের কাছে অবস্থিত লেকটি তিন হাজার ৪৯ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। লেকে ছোট-বড় মিলিয়ে দ্বীপ রয়েছে ৬১টি।

রাজ্য সরকারের মৎস্য দফতরের কর্মকর্তা ডি কে দেববর্মার তথ্য অনুসারে, প্রকৃতিসৃষ্ট লেক থেকে বছরে গড়ে ৫০০ টন মাছ উৎপাদিত হয়। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস, কার্প, গনিয়া ইত্যাদি জাতের মাছের চাষও করা হয় লেকে। এছাড়া চিতল, কালনা, মকা, চান্দা, পুঁটি, লাঁটি, শোল, গজার, দারকিনা, মাগুর, সিন্সি, আইড়, চিংড়ি ইত্যাদি দেশীয় জাতের মাছও পাওয়া যায়।

ডি কে দেববর্মা আরো জানান, রাজ্যের চার সহস্রাধিক জেলে ডুম্বুর লেকের ওপর নির্ভরশীল। তাদের অবস্থা বিবেচনায় রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে মাছ ধরার জাল, নৌকা ইত্যাদি দেওয়া হয়ে থাকে।

প্রতি বছরেই এ জলাভূমি থেকে মাছের পোনা মজুদ করে ত্রিপুরা মৎস্য অধিদফতর। যে সময়গুলোয় লেকে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, সে সময় লাইসেন্সধারী মৎস্যজীবীদের তিন হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় বলেও অধিদফতর থেকে জানানো হয়।

জানা গেছে, লেকের পরিধি অনুযায়ী ব্যাপকভাবে মাছ চাষ ও জেলেদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতীতে প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি খাঁচাতেও মাছ চাষ করা হচ্ছে। ২০১৫-১৬ সাল থেকে ডুম্বুর লেকে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লেকের নির্ধারিত স্থানে প্লাস্ট্রিকের ভাসমান একাধিক ব্লক জোড়া লাগিয়ে চার কোনার ফ্রেম করা হয়েছে। ফ্রেমের উপরে-নিচে জাল লাগিয়ে ছোট ছোট ক্যানেল করা। এসব ক্যানেলেই মাছ উৎপাদিত হচ্ছে গত কয়েকবছর ধরে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এভাবে মাছের বৃদ্ধি হয় দ্রুত, চাষও সহজ।

জানা গেছে, ডুম্বুর দ্বীপ ও জলাশয়ের পাড়ে বসবাসরত মোট ১৯৮ জন মাছচাষি খাঁচার মাধ্যমে মাছ চাষ করে থাকেন। মাছ পালনে সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য ও এস. সি বেনিফিসারিদের। খাঁচার মাধ্যমে চাষ করে বছরে প্রায় ২০ হাজার কেজির বেশি মাছ উৎপাদিত হয়ে থাকে বলে জানান মাছচাষিরা।

জেলেদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ভারত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জেলে ও মাছচাষিদের জন্য নির্মাণ করেছে ঘর। বিজ্ঞানভিত্তিক বা খাঁচায় মাছ চাষে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। ডুম্বুর লেকে মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণের উদ্দেশে মৎস্যজীবীদের নিয়ে সেমিনার ও ট্রেনিং প্রোগ্রামও করা হয় বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ডুম্বুর লেক নিয়ে আগামী দিনে বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে রাজ্য সরকারের মৎস্য অধিদফতরের। মাছের অধিক উৎপাদনে নেয়া হয়েছে দেড় হাজার খাঁচা প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ। ইতোমধ্যে সে কাজও শুরু হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া মাছের পোনা সংরক্ষণেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। লেক থেকে ধরা মাছ সংরক্ষণে পর্যাপ্ত বরফের যোগান দিতে ‘আইস প্লান্ট’নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
এসসিএন/এফআর/কেএআর/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।