কলকাতা: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার বাংলাদেশের আলোচিত অর্থ পাচারকারী প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ও তার ৫ সহযোগীকে ফের শুক্রবার (২৭ মে) কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হবে।
স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় আদালতে তোলা হবে তাদের।
ভারতের আর্থিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- ইডি সূত্রে জানা গেছে, পিকে হালদারদের ১৪ দিন রিমান্ড শেষ হওয়ার পর বিচারকের কাছে জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করবে সংস্থাটি। পাশাপাশি আবেদন করবে আসামিদের জেলেও যাতে জেরা করা যায়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, একটি নয় পি কে হালদারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি অবৈধ অর্থপাচার ও দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়েছে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে।
ইডির মতে, প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ও তার ৫ সহযোগীকে জেরা এখনো শেষ হয়নি। তাদের জেলে রেখেই জেরা করতে চায় সংস্থাটি।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রথমদিকে হালদাররা জেরায় সহযোগীতা করলেও এখন আর সেইভাবে তা করছে না। সব মিলিয়ে তাদের কাছ থেকে মোট ৮১টি ইলেকট্রনিক গ্যাজেট অর্থাৎ মোবাইল, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২৪টি গ্যাজেট খোলা গেছে। সেগুলোতে যা পাওয়া গেছে তাতেই ইডি কর্মকর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে।
ইডির মতে, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে পি কে হালদারের পাচার করে আনা টাকার অঙ্ক ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটির বেশি। তাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের এক নম্বর শহরগুলোয় যদি পি কে সম্পত্তি কিনে থাকেন তা বেচলেও তার মূল্য এক হাজার কোটি রুপির বেশি হতে পারে না। তাহলে বাকী টাকা কোথায় গেল? হয় পিকে হালদার নিজেই কোথাও সরিয়ে রেখেছেন বা তার কাছ থেকে কেউ নিয়েছে। নিলে কারা নিল? সব মিলিয়ে পি কের থেকে ৩০০ কোটির কম রুপি নগদ অর্থ পেয়েছে ইডি।
দুই, পি কের গ্যাজেটগুলো খুলে দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল, মন্ত্রীসহ রাজনৈতিক দলের রথী-মহারথীদের লিঙ্ক রয়েছে। একইভাবে লিঙ্ক রয়েছে বাংলাদেশেও। তবে বেশির ভাগ লিঙ্ক বাংলাদেশের পাওয়া যাচ্ছে।
ইডির ধারণা, পি কে হালদারের ভারতে লুকিয়ে থাকার বিষয়টিতে সহযোগিতা করেছে পশ্চিমবঙ্গের মহারথীরা। কিন্তু টাকা আত্মসাৎ এবং আত্মসাতের সহযোগিতা যারা করেছে তারা বাংলাদেশি। যদিও তদন্তের স্বার্থে ইডি এখনও কারো নাম প্রকাশ করেনি। এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে ইডিকে সহযোগিতা করছেন না পি কে ও তার সহযোগীরা।
তিন, পি কের কললিস্ট ট্র্যাক করে জানা যাচ্ছে, তার আরও সহযোগী বিদেশে পালিয়ে আছে। চিহ্নিত করা যাচ্ছে বাংলাদেশি এক সংস্থার কর্মকর্তাকে, যিনি সিঙ্গাপুরবাসী। গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত সেই কর্মকর্তার কাছ থেকে থেকে প্রচুর কল ঢাকা থেকে থেকে এসেছে। তারমধ্যে একাধিক বচসার কথোপকথনও আছে। এছাড়া বাংলাদেশ এবং কানাডা থেকেও প্রচুর ফোনকলের সন্ধান পাওয়া গেছে।
চার, পাসপোর্ট তদন্তে দেখা গেছে বহুবার ঢাকা, ভারত, সিঙ্গাপুর এবং কানাডায় গিয়েছেন পি কে হালদার। ভারতীয় অবৈধ পাসপোর্টে শিবশঙ্কর হালদার নামে টুরিস্ট ভিসায় দু’মাস কানাডাতে ছিলেন তিনি। এর সঙ্গে পি কের কাছে তিন দেশের নাগরিক হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে ইডি। বাংলাদেশ, ভারত ও গ্রেনেডা এই তিন দেশের একাধিক নাগরিকত্বের নথি, পাসপোর্ট পেয়েছে সংস্থাটি।
কি চাইছে ইডি: ভারতের আর্থিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-ইডি প্রথমত পাচার করে আনা টাকার সঠিক অঙ্কটা জানতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, এই টাকার ভাগ-বটোয়ারা কারা করেছে। ভারতে পি কে কিভাবে এল? কারা সহযোগিতা করেছে? কিভাবে পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা ফেঁদে বসল? কারা সহযোগিতা করেছে? কেন পি কের কাছে ঘন ঘন ফোন আসত ঢাকা এবং সিঙ্গাপুর থেকে? কানাডায় দু’মাস কি করেছে? এসব জানা।
অপরদিকে, ইডি চাইছে এবার কড়াভাবে আমানা সুলতানাকে জেরা করবে। কেন আমানা সুলতানা ‘শার্লি হালদার’ নাম ধারন করল? তাকে কি শুধু প্রেমের প্রলোভনে ভারতে এনেছে পি কে হালদার? নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল?
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে গত ১৪ মে ৫ সহযোগীসহ গ্রেফতার হন পি কে হালদার। প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার সহ প্রানেশ কুমার হালদার, প্রীতীশ কুমার হালদার, স্বপন মৈত্র ও উত্তম মৈত্র -এই ৫ জন আছে ইডির রিমান্ডে। আমনা সুলতানা ওরফে শার্লী হালদার আছেন কারাগারে।
ধারণা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) তদন্তে নামবে। তার আগে নিজেদের জায়গাটাও রাখতে চাইছে ইডি। সে কারণেই পি কে হালদারদের জেলে গিয়ে জেরার অনুমতিটা নিয়ে রাখবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অর্থা ইডি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
ভিএস/এসএ