ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

দুর্গাপূজার মঞ্চ মাতাচ্ছেন কেকে, বিস্মিত দর্শকরা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২২
দুর্গাপূজার মঞ্চ মাতাচ্ছেন কেকে, বিস্মিত দর্শকরা

কলকাতা: কলকাতার দুর্গাপূজা মানেই নতুন নতুন ভাবনা অর্থাৎ থিমের পূজা। মণ্ডপ সজ্জায় থাকে নানান চমক।

এবার দুর্গাপূজার থিম সঙ্গীতশিল্পী কেকে এবং নজরুলমঞ্চ।  কলকাতার সেই নজরুল মঞ্চে কেকে দাপিয়ে মঞ্চ মাতাচ্ছেন তার ভুবন ভোলানো কন্ঠে। তবে আজ সবই অতীত। সবই প্রতীকী। যা দেখতে বাংলার বিভিন্নপ্রান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন শহরে।

দেড় ঘণ্টা ধরে একটানা পারফরমেন্স। গত ৩১ মে কলকাতার নজরুল মঞ্চে সেটাই ছিল সঙ্গীতশিল্পীর শেষ অনুষ্ঠান। সেদিন রাতেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তার। দুর্গাপূজায়, সেই নজরুল মঞ্চে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথের শেষ অনুষ্ঠানকেই নিজেদের মণ্ডপে তুলে ধরেছে, কলকাতার কবিরাজ বাগান।

দুর্গামণ্ডপ তৈরি হয়েছে সেই নজরুল মঞ্চের আদলে। বসানো হয়েছে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ অর্থাৎ কেকে-র মূর্তি। মূর্তির পেছনে বিশাল এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে, নজরুল মঞ্চে কেকে-র শেষ স্টেজ শো-টি। সেখানে শিল্পি ভুবন ভোলানো কন্ঠে মঞ্চ মাতাচ্ছেন। যা দেখে সাময়িক বিস্মিত দর্শকরাও। মোবাইলে ধরে রাখতে চাইছেন সেই স্মৃতি। কিন্তু কেন হঠাৎ এই থিম? থিমের স্রষ্টা অমল চক্রবর্তী যিনি শেষবারের জন্য কলকাতায় এনেছিলেন শিল্পীকে।  

তিনি বলেন, শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই দুর্গাপূজাকেই বেছে নিয়েছে কবিরাজ বাগানের পুজা উদ্যোক্তারা। ঘটনাক্রমে, শাসক দলের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীর আয়োজনে কলকাতায় এসেছিলেন কেকে। শহরের গুরুদাস কলেজর ফেস্টে কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছিলেন শিল্পি। তবে ব্যবস্থাপনার অভিযোগ ছিল অমলের বিরুদ্ধে।  

এ বিষয়ে তিনি বলেন, টিকিট করা হয়েছিল তিন হাজার কিন্তু দর্শক সংখ্যা ছিল তিনগুনের বেশি। ভিড় সামাল দিতে পারেনি নজরুল মঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তাতেই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এরপর তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওইদিন সবার হাতেই প্রবেশের টিকিট ছিল। আসন ভরে যেতেই দর্শকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। তাতেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল।  

উত্তরে অমল বলেন, বলতে পারবো না। তার সাথে তিনি বলেন, দুর্গাপূজার থিম কেকে-কে নিয়ে করে সেই ভুলেরই প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইছেন কবিরাজ বাগান দুর্গোৎসবের।

আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কেকের পরিবারকে? উত্তরে অমল বলেন, ডেকেছিলাম, কিন্তু আসেননি। এটাই স্বাভাবিক একবছর হয়নি, শোক কি করে ভোলা যায়? 

পুলিশের তথ্য মতে, সেদিন বিনামূল্যে কেকের অনুষ্ঠান দেখার লোভ কেউ সামলাতে পারেনি। উদ্যোক্তারা যে টিকিট তৈরি করেছিল তা বাজারে জাল হয়েছিল। তাতেই বিপত্তি। তবে সাধারণের কথায়, সর্ষের মধ্যেই ভূত ছিল, না হলে কে টিকিট জাল করতে যাবে?



কবিরাজ বাগানের পূজা দেখার জন্য দর্শকদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাদের মতে, গঙ্গা জলে গঙ্গা পূজা। দোষ করে পাপ ঢাকার চেষ্টা উদ্যোক্তাদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও আসা। কারণ, দূর থেকে যখন কেকের গান ভেসে আসছে তখন নিজেদের স্থির রাখতে পারেননি তারা। তাদের মতে, নজরুল মঞ্চের শেষ অনুষ্ঠান দেখা হয়নি। একবার প্রতীকী দেখে অনুভব করতে চাই দিনটা কেমন ছিল।

উদ্যোক্তাদের কথায়, কেকের মতো একজন শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতেই দুর্গাপূজার থিম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে শিল্পীর শেষ অনুষ্ঠানকেই। পাশাপাশি বরেণ্য প্রয়াত শিল্পীদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেছে পূজা কমিটি। কিন্তু কেকের হঠাৎ মৃত্যুতে শোকাহত ছিল বাংলা। কারণ, শেষ অনুষ্ঠার বাংলাতেই করেছিলেন। কথা মত মঞ্চে গেয়েছিলেন ২০টি গান। ৩১ মে রাতে অসুস্থ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তার। অনুষ্ঠান ঘিরে ব্যবস্থাপনার অভিযোগও উঠেছিল। সেই পরিস্থিতিতে দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে খ্যাতনামা শিল্পি কেকের প্রতি শ্রদ্ধা জানালো কলকাতার কবিরাজ বাগান। পূজামণ্ডপের উৎসাহ জনতার ভিড় আবারও প্রমাণ করল কৃষ্ণকুমার কুন্নাথকে ভোলেনি বাংলা।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২২
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।