ঢাকা: যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বখ্যাত তৈরি পোশাক ব্র্যান্ড প্রাইমার্ককে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কেনা বাড়ানো এবং উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেছেন, প্রাইমার্ক আমাদের বড় ক্রেতা, বিশ্বখ্যাত এ পোশাক ব্র্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি তৈরি পোশাক কিনবে বলে বিশ্বাস করি, একইসঙ্গে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে, শিল্পের সঙ্গে জরিত জনবলকে উৎসাহ দিতে তৈরি পোশাকের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রাইমার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাউল মার্চেন্টের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সফররত প্রাইমার্ক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পে দক্ষতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। বাংলাদেশের চল্লিশ লাখের বেশি শ্রমিক তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মবান্ধব পরিবেশে কাজ করছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ ভাগই নারী শ্রমিক। গতবছর ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক বাংলাদেশ রফতানি করেছে, ২০৩০ সালে এ রফতানির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশ এখন চাহিদা মোতাবেক যে কোনো পরিমাণ পণ্য যথাসময়ে সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমরা রফতানি বাণিজ্যে বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে সরকার প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পণ্যের মান এবং ডিজাইন আধুনিক করা হচ্ছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে কিছু বিদেশি দক্ষকর্মী ছিল, এখন আমাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মীরাই কাজ করছে।
টিপু মুনশি বলেন, শিল্প বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। অনেকগুলোর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন করবে, তখন বিভিন্ন দেশ থেকে বাণিজ্য সুবিধা পেতে পিটিএ বা এফটিএ-এর মতো বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য আমরা কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিশ্বমানের ও আধুনিক তৈরি পোশাক তুলনামূলক কম দামে সরবরাহ করতে সক্ষম। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনেক ক্রেতা ক্রয় আদেশ বাতিল করার কারণে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মধ্যে পরেছেন, সরকারের সহযোগিতায় তৈরি পোশাক শিল্পসহ দেশের অর্থনীতির চাকা চলমান ছিল। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ এখন যে কোনো পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
প্রাইমার্কে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাউল মার্চেন্ট বলেন, বাংলাদেশ বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক সেক্টরে অনেক উন্নতি করেছে। গ্রীণ ফ্যাক্টরিতে কর্মবান্ধব পরিবেশে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদন করছে। শিল্প ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বেশি আকর্ষণীয় করেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমাদের কাছে খুবই প্রিয়।
আগত প্রতিনিধি দলে ছিলেন, এবিএফ-এর পরিচালক ও কোম্পানি সেক্রেটারি পাউল লিস্টার, এবিএফ-এর গ্রুপ করপোরেট রিসপনসেবলিটি ডাইরেক্টর কাথারিন স্টিওয়ার্ট, ইকোলক বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান জুয়ান চাপারো, প্রাইমার্কের হেড অফ পলিসি অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ইম্মা অরমন্ড, প্রাইমার্কের হেড অব সোর্সিং মাদিউ আরহোডস এবং বেক্সিমকো বাংলাদেশ লিমিটেড গ্রুপের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ নাভেদ হোসেইন।
পরে বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর অফিস কক্ষে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) প্রেসিডেন্ট কাজুশিক নোবুতানির নেতৃত্বে আগত একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
জিসিজি/এসএ