ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার, ‘সিন্ডিকেট’কে দুষছেন ক্রেতারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার, ‘সিন্ডিকেট’কে দুষছেন ক্রেতারা

ঢাকা: দেশের বাজারে ফের হু হু করে বাড়ছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির।

মূলত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় দেশের বাজারে পণ্যটির দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে।

পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও সরকারের তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন তারা।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ১৮০ টাকা ও খুচরা বাজারে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই দিন আগেও একই বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ দুই দিনের ব্যবধানে এই পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

এছাড়া বর্তমানে দেশি ফরিদপুরের পুরান পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৯৬ টাকা ও নতুন পেঁয়াজ ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। আর চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে।

খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করাকে দুষছেন বিক্রেতারা। শামীম নামের এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের টান পড়েছে, যার কারণে দাম ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে।

কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হলে দাম আবার কমে যাবে।

তবে বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর অনেক ব্যবসায়ী আগে থেকে কিনে রাখা পেঁয়াজও বেশি দাম বিক্রি করছেন। অনেকে ১৬০ টাকা করে কিনে রাখা পেঁয়াজ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জুর আলী নামের এক বিক্রেতা বলেন, আমদানিকারকরা যারা আগে পেঁয়াজ কিনে রেখেছিল, তারা এখন বেশি দামে বিক্রি করছে। আমরা যে দামে কিনি সেই দামেই বিক্রি করছি। আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি না। বরং আমাদের এক মণ পেঁয়াজ কিনলে দুই কেজি পেঁয়াজ পঁচে যাওয়ার কারণে ফেলে দিতে হয়।

তবে এই বিক্রেতাকেই ১৬০ টাকা করে কেনা পেঁয়াজ ১৮০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা যায়।

দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মো. আরমান আলী নামের এক বিক্রেতা বলেন, দেশি পেঁয়াজ দিয়ে বাজারের চাহিদা মেটে না। তাই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি শুরুর আগে পেঁয়াজের দাম আর কমবে না। বরং আরও বাড়তে পারে।

এদিকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও সরকারের তদারকির অভাবকেই দুষছেন ক্রেতারা। দেলোয়ার হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, পেঁয়াজের দাম ৪০-৫০ টাকা হওয়া উচিত। সপ্তাহখানেক আগেও ৮০ টাকা করে কিনলাম। কিন্তু এখন দাম ২০০ টাকা। তারপরও আমাদের না খেয়ে উপায় নেই।  

আবু জাফর নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এটা অস্বাভাবিক। এটা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য অসহনীয়। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। এতে সরকারের ব্যর্থতা আছে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই না। নইলে এক লাফে পেঁয়াজের দাম এত বাড়ার কথা নয়। আমি ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ খেতে চাই।

গত শুক্রবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি আগামী মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় লাফিয়ে লাফিয়ে। যদিও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে এবং তাদের জরিমানা করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
এসসি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।