ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যানজটে পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৪
যানজটে পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমছে ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: যানজটের কারণে পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, যানজটের কারণে এ এলাকার ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে।

এ কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এর ফলে পুরান ঢাকার অর্থনীতি ছোট হয়ে আসছে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  ডিসিসিআই ‘পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিতকরণ’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে।

আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের জিডিপিতে পুরান ঢাকার অবদান প্রায় ২০ শতাংশ হলেও অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, যানজট ও অপ্রতুল পরিসেবার জন্য এ এলাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজধানীর যানজটের কারণে দেশের সামগ্রিক জিডিপি প্রায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পায় এবং প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যামের কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া কর্মঘণ্টার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। সড়কের খোঁড়াখুড়ি, অবৈধ ফুটপাত দখল, অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং, অপ্রতুল সড়ক অবকাঠামো ও অকার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে বিশেষ করে পুরান ঢাকায় সৃষ্ট অসহনীয় যানজট পরিস্থিতি ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালুকরণ, নদীপথের ব্যবহার বাড়ানো এবং পুরান ঢাকার প্রধান সরু ও ব্যস্ত সড়কে একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী, আমরাই এটা সৃষ্টি করেছি। নগরের অভিভাবক হিসেবে সিটি করপোরেশন নগরের পরিকল্পনা নেবে এবং সে মোতাবেক দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, চলাচলের জন্য যে সড়কের প্রয়োজন, সে তুলনায় আছে মাত্র ১৬ শতাংশ। এ অবস্থায় সড়ক ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুক্ত আলোচনায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী নেতারা যানজটের কারণে উদ্ভূত সমস্যা তুলে ধরেন। তারা বলেন, পুরান ঢাকা এখনো দেশের প্রধান পাইকারি বাজার হলেও যানজটের কারণে এর গুরুত্ব হারাচ্ছে।

ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা যানজট আর হকারদের উৎপাতে অতিষ্ঠ। পুরান ঢাকায় একবার ঢুকলে পুরো দিন চলে যায়। আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি, কিন্তু আমাদের কষ্টের কথা কেউ শোনে না।

আবুল কাসেম বলেন, পুরান ঢাকার চার শ বছরের কাঠামো পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কিন্তু সংস্কার ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের চলাচলের উপযোগী করা যেতে পারে। প্রকল্প গ্রহণ না করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়ে সময় মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারছে না। জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে।

আলিমুজ্জামান আলম বলেন, পুরান ঢাকায় মেট্রোরেলের পরিকল্পনা হচ্ছে। আমরা পুরান ঢাকার মানুষ যানজটে লক হয়ে গেছি। পূরণ ঢাকায় মেট্রোরেলে এমন নেটওয়ার্ক করুন, যাতে মানুষ পুরান ঢাকায় এসে আবার ফিরে যেতে পারে। যানজটের কবল থেকে পুরান ঢাকাকে বাঁচান।

তিনি বলেন, ফুলবাড়িয়ায় ইলেকট্রিক মার্কেট এখন মুরগি মার্কেটে পরিণত হয়েছে। প্রভাবশীল মহল বাজার থেকে ৫০০ কোটি টাকা তোলে। এই জ্যাম এখন গুলিস্তানের সঙ্গে সংযোগের পথে প্রধান বাধায় পরিণত হয়েছে। যারা এই কাজে যুক্ত তাদের সঙ্গে পারা যায় না। মুরগি বাজারকেন্দ্রিক এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

মো. হোসেন আলমগীর বলেন, কোর্ট-কাচারি এলাকায় আইনি প্রতিকার নিতে আসা মানুষ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়ে কোনো গাড়িতে চড়তে পারে না। নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে পুলিশের গাড়িগুলো রাস্তায় রাখে। কোর্ট এলাকায় এটাও যানজটের বড় কারণ।

তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় যে দোকানের দাম ছিল এক কোটি টাকা, এখন সেটার ৫০ লাখ টাকাতেও ক্রেতা পাওয়া যায় না। যানজটের শহরে মানুষ আর আসতে চায় না। কাভার্ড ভ্যান যে কোনো সময় শহরে ঢুকতে পারবে, এমন একটি আইনের কারণে পুরান ঢাকা যেন কাভার্ড ভ্যানের শহরে পরিণত হয়েছে।

জালাল উদ্দিন বলেন, সদিচ্ছা থাকলে অর্ধেক যানজট দূর হয়। মেয়র ইচ্ছা করলে কাল সকাল থেকেই অর্ধেক যানজট দূর হয়ে যাবে; ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, হকারের কারণে নবাবপুর রোডে ঢোকা যায় না। পুলিশ ও মেয়র মিলে হকার তুলে দিলে এ সমস্যার সমাধান হবে। তাহলে আমরা মতিঝিল থেকে হেঁটে পুরান ঢাকায় পৌঁছাতে পারবো। আমরা লাইসেন্স নিয়ে দোকানে ব্যবসা করি। কর দেই। আর হকাররা আমাদের দোকানের সামনে কোনো লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করে, কোনো কর দেয় না। ফুটপাত থেকে হকারকে উচ্ছেদ করুন, তা না হলে আমরা কর দেওয়া বন্ধ করে দেবো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।