ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেক্সিমকোর ১৬ কারখানা বন্ধ: খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
বেক্সিমকোর ১৬ কারখানা বন্ধ: খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জ রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর: গাজীপুরে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এ সময় মহানগরীর সারাবো-চক্রবর্তী এলাকায় সড়কে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন।

এক পর্যায়ে শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর লাঠি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এ সময় শ্রমিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে ঘটে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে প্রায় সাত ঘণ্টা পর চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় ১০-১২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

বন্ধ ঘোষণা করা ১৬ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শনিবার সকালে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের  কয়েক হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে এসে ঢাকা-নবীনগর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা চক্রবর্তী এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করেন।

শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানান, শনিবার সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী ও চক্রবর্তী এলাকায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া আশপাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে সড়কে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে ওই সড়কে চলাচলকারীরা। সড়কটির দুই পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।

খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ, কাশিমপুর থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। দফায় দফায় শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কথা না শুনে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কাঠ ও ময়লা-আর্বজনা ফেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে বাধ্য হয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে চলে গেলে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোয় প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৬টি কারখানা (তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ না থাকা এবং কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে না পারায়) বন্ধ ঘোষণা করে বেক্সিমকো গ্রুপ কর্তৃপক্ষ।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত তারা সময়মতো বেতন-ভাতা পেয়েছেন। এখন কারখানায় কাজ নেই, এমন মিথ্যা অজুহাতে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক খুব কষ্টে দিন পার করছেন। সংসারের খরচ চালাতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন তারা। বাড়িওয়ালারা বাসা ছেড়ে দিতে চাপ দিচ্ছেন। দোকানিরা বাকিতে আর নিত্যপণ্য দিচ্ছেন না। সামনে জানুয়ারি মাস। ছেলেমেয়েদের কীভাবে স্কুলে ভর্তি করাবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা।  

নাওজোড় হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়ক অবরোধ করায় ওই সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই সড়কে চালাচলকারীরা দুর্ভোগে পড়ে। ’

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবু তালেব বলেন, ‘শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

কাশিমপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়া হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।