ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ শহরের মেছুয়া বাজারের আসাদুল মুন্সীর আড়ত। বেগুন, বাঁধা কপি, ফুলকপি, মরিচ, শিমসহ মৌসুমী শাক-সবজির স্তুপ! সবজি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মেঝেতেও!
শুধু আসাদুল মুন্সীর আড়তেই নয়, এ দৃশ্য চোখে পড়েছে বেশ কয়েকটি আড়তে।
এমনই এক কৃষক হরমুজ আলী ও মো. মহিউদ্দিন। দুই জনেরই বয়স পয়ত্রিশের মতো। বাড়ি সদর উপজেলার বোরোরচর ইউনিয়নে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের চলমান অবরোধের কারণে বিভিন্ন স্থানে পণ্য পাঠাতে না পারায় বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকলেও পাইকার না আসায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে আব্দুল মান্নান নামে এক পাইকারি ক্রেতা হরমুজ আলীর কাছে বেগুন কিনতে চাইলেন! এক পর্যায়ে তিনি ৭০ কেজি সাদা বেগুন মাত্র একশ’ টাকা দাম হাঁকলেন।
রেগে অগ্নিশর্মা হরমুজ সব শেষে তার বেগুন তিনশ’ টাকায় বিক্রি করবেন বলে জানিয়ে দিলেন।
পাইকারের এবার চোখ পড়লো মহিউদ্দিনের সঙ্গে থাকা কালো বেগুনের দিকে। দর কষাকষি করে মহিউদ্দিনের কাছ থেকে ৫০ কেজি বেগুন কিনলেন মাত্র দেড়শ’ টাকায় !
সস্তায় বেগুন বিকোনোর কারণ জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, ‘অবরোধের কারণে দূর দূরান্ত থেকে বেপারীরা এ বাজারে আসতে পারছেন না। যদি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ভয়ে দূর-দুরান্তের বেপারীদের আনাগোনা নেই। আর এতেই আমাদের সর্বনাশ। দুইশ’ টাকা লোকসানে বেগুন বিকোতে হচ্ছে। ’
মহিউদ্দিন জানান, গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, পিরোজপুর, সখীপুর, ঢাকার কারওরান বাজারসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার বেপারীরা মেছুয়া বাজারের আড়তে আসেন।
দৈনিক গড়ে শতাধিক ট্রাক সবজি যায় এসব বাজারে। কিন্তু অবরোধ থাকায় সেখানে গড়ে প্রতিদিন যাচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১২ ট্রাক সবজি।
কিছু ব্যবসায়ী সবজি পরিবহনে বাড়তি ঝুঁকি নিলেও তাদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। ‘অবরোধে আড়াই হাজার টাকার ভাড়া এখন ৫ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে বাড়তি ট্রাক ভাড়া দেওয়ার ফলে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।
কৃষক হরমুজ আলী বলেন,বেগুনের মতোই অবস্থা ফুলকপি-পাতাকপির (বাঁধাকপি)। এগুলান এখন কৃষকের ক্ষেতে গরু খাইতাছে।
তিনি বলেন, চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেতে ক্ষেতে ফুলকপি, পাতাকপি (বাঁধাকপি) পঁচতাছে। ভালা দাম না পাওয়ায় রাগে-দুঃখে গিরস্থরা (গৃহস্থ) ক্ষেতে গরু লাগাইয়্যা দিছে। গরু এখন কপি খাইতাছে।
কৃষক হরমুজ জানান, প্রতি পিস ফুল ও বাঁধাকপিতে সার, বীজ, সেচসহ গড়ে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৬ টাকা। কিন্তু দাম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২ টাকা। বাজারে আড়তে আনতে গেলে আবার আছে যাতায়াত ভাড়া। আবার আড়তদারকে কমিশনও দিতে হয়।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন,‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। এইল্লেগ্যা গরুর পেটেই ভালা।
বোরোরচর ইউনিয়নের মৃধাপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, অবরোধে আমগোর পেটে লাথি পড়ছে। স্থানীয় আড়তদার আসাদুল মুন্সীও বললেন একই কথা। বললেন, ‘প্রতিদিন এখানকার আড়ত থেকে শতাধিক ট্রাক সবজি নিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়। কিন্তু অবরোধে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ভয়ে প্রায় সবাই পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৫