ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাজধানীর বুকে সবজি চাষ

মাহবুব আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫
রাজধানীর বুকে সবজি চাষ ছবি: আনন্দ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর বুকে চাষাবাদ। কী, ভড়কে গেলেন! ইট-পাথর, কংক্রিটের শহরে কালো ধোঁয়া আর সীসায় অভ্যস্ত নগরবাসী।

তাদের কাছে তিলোত্তমার বুকে সবুজের সমারোহ আশ্চর্য হওয়ার মতোই ব্যাপার বটে!

কিন্তু ঘটনা সত্য। ঢাকার বুকেই ফলানো হচ্ছে টাটকা সবজি। আর তা স্থানীয় বাজারের প্রয়োজন মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে অন্যান্য বাজারেও।

সোমবার (১৯ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগরীর মুগদা থানাধীন মাণ্ডা এলাকায় সরেজমিনে এ চিত্রই দেখা গেল।

কমলাপুর থেকে হাঁটা দূরত্বের পথ। রেলস্টেশন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মাণ্ডায় আবাদি জমির পরিমাণও কম নয়।   এসব জমিতে ধান চাষ থেকে শুরু করে মৌসুমী সবজির আবাদ হচ্ছে।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের একমাত্র গ্রাম মাণ্ডার দুই-তিনটি ওয়ার্ডে বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও আবাদি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ফলানো  হচ্ছে রকমারি জাতের সবজি। এরমধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ নানা ধরনের মৌসুমি শাক-সবজি।

মাণ্ডাতে এখন টাটকা সবজি মেলে ভেবে যারা স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন, তাদের ভড়কে দেওয়ার মতো রয়েছে আরো কিছু তথ্য। শুধু মাণ্ডাতেই নয়, এমন সবজির চাষ হচ্ছে মহানগরীর আশপাশের আরো কিছু এলাকায়।

মহানগর কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, মহানগরীর অধীনে ১৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে কৃষিকাজ হয়। এরমধ্যে বোরো আবাদ হয় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে।

মাণ্ডায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। কিছু জমিতে বোরো চাষ হলেও সিংহভাগেই মৌসুমী সবজি চাষ করেন স্থানীয় কৃষকরা।

মহানগর কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. সিকান্দর আলী বাংলানিউজকে জানান, মাণ্ডায় প্রায় সময়ই কোনো না কোনো সবজি চাষ হয়। এরমধ্যে বেশিরভাগই মৌসুমী সবজি।

উৎপাদিত সবজি নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি অন্যান্য বাজারেও সরবরাহ করা হয়।  

তিনি জানান, মাণ্ডায় ৪০০ পরিবার বিভিন্নভাবে কৃষিকাজে জড়িত। এরমধ্যে ভূমিহীন ৭০ শতাংশ, যারা অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। যা খুবই ইতিবাচক।

সরেজমিনে দেখা যায়, জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চলে বিভিন্ন প্লটে ভাগ করে সবজি চাষ করা হয়েছে। অনেকেই নিজ নিজ ক্ষেতে সবজির তদারকিকে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তেমনি একজন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের বাসিন্দা আবদুল আলী (৪০)। জমি ভাড়া নিয়ে সবজি চাষ করেছেন তিনি। চার একর জমিতে সবজি রোপন করেছেন চলতি মৌসুমে।  

বাংলানিউজকে তিনি জানান, পরিবার নিয়ে উত্তর মাণ্ডায় থাকেন। পেশায় রিকশাচালক হলেও প্রতি মৌসুমে সবজি চাষ করেন।

আবদুল আলী বলেন, ইটের ঘের দেওয়া তিনটি প্লটের প্রায় চার একর জায়গায় সবজি চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে।

নিজের উৎপাদিত সবজি মাণ্ডার পাশাপাশি অন্যান্য বাজারেও সরবরাহ করেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় কৃষক সহিদ উল্লাহ নিজের জমিতে সবজি ও জলাভূমিতে মাছ চাষ করেছেন। বললেন, এক একর জমিতে লালশাক, পুঁই, পালং, ডাঁটা, মুলা, লাউ, ধনেপাতাসহ অন্যান্য সবজি চাষ করা হয়েছে। নিম্নাঞ্চল ও পলিমাটি থাকায় চাষাবাদে বাড়তি খরচ হয় না। তাই কৃষকদের আগ্রহ বেশি।

মহানগর কৃষি কর্মকর্তা সিকান্দর আলী জানান, চাষাবাদে কৃষকদের বিভিন্ন সময় কারিগরি সহায়তাও দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।