ঢাকা: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আধুনিক মানের সাশ্রয়ী আবাসন গড়ে তুলতে বড় পরিসরে বিনিয়োগ করতে চায় জাপানভিত্তিক অন্যতম আবাসন প্রতিষ্ঠান ক্রিড এশিয়া বিডি কোস্পানি লিমিটেড।
আবাসন খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ পেলে, আগামী বছরগুলোতে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ নিয়ে আসতে চায় আবাসনভিত্তিক এই বৃহৎ শিল্পগ্রুপটি।
বাংলাদেশ-জাপানের যৌথ বিনিয়োগ অংশীদারিত্বে এ প্রতিষ্ঠানটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নির্মাণ করতে চায় বিশ্বমানের প্রায় দুই হাজার অভিজাত ফ্ল্যাট। পাশাপাশি আরও কয়েক হাজার বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে আগ্রহী যা থাকবে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে।
এরই মধ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কাজ শুরু করলেও কিছু কিছু অসুবিধার কারণে বড় মাপের বিনিয়োগ নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ক্রিড গ্রুপের কর্তাব্যক্তিরা। এ লক্ষ্যে সরকারের সহযোগিতা চাইছেন তারা।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরও চারটি দেশে (কম্বডিয়া, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর) ক্রিডের আবাসন বিনিয়োগ রয়েছে। অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত কঠিন ও অনেক নিয়ম নীতির খাড়া রয়েছে বলেই মনে করছেন জাপানি এই বিনিয়োগকারীরা।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স রুমে ক্রিড এশিয়া বিডির প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণে এক সেমিনারে বিষয়গুলো উঠে আসে।
তারা বলছেন, স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করে কিছু বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এগুলো সরে গেলে বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আসতেই আগ্রহী ক্রিড গ্রুপ।
বাংলাদেশে জেমস ডেভলপমেন্টের হাত ধরে ক্রিড কাজ শুরু করে ২০১৪ সালে। ইতোমধ্যে তারা দেশে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে। যার মধ্য দিয়ে ৪৯টি আবাসিক ইউনিট গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
চার দেশ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১১ হাজার আবাসন ইউনিট গড়ে তুলেছে ক্রিড তার মধ্যে বাংলাদেশে এর সংখ্যা খুবই নগণ্য, বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তারা জানান, সুযোগ পেলে কয়েক গুনে বাড়ানো সম্ভব এই বিনিয়োগ।
বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়াতে চায় তারা। এ জন্য ক্রিড এবং জেমসের প্রথম পছন্দ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, এমনটাই জানান জেমস ডেভলপমেন্টের চেয়ারম্যান ইকবাল আহসান চৌধুরী জুয়েল।
ক্রিড এশিয়া বিডি কোম্পানি লিমিটেডের সিইও কামি ওমা হোদা বলেন, আমাদের লক্ষ্য আবাসনখাতে উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য এক সম্ভাবনাময় স্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসায়ের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। এখানকার জনসংখ্যার অধিকাংশই তরুণ, অর্থনীতির চাকাও বেশ গতিশীল- যা একটি সুষ্ঠু বিনিয়োগের জন্য বড় ক্ষেত্র। সব মিলিয়ে এখানে ভালো সুযোগ আছে কাজের।
বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দেশীয় কিছু নিয়ম-নীতি শিথিল করা হলে, তাদের মতো বড় বড় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বেশ সহজ হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মের কথা তুলে ধরেন তিনি।
তাদের দাবি, বিদেশ থেকে মূলধনের পাশাপাশি ঋণের অর্থ বাংলাদেশে আনার পথে বাধাগুলো দূর করতে হবে। বিনিয়োগ থেকে পাওয়া মুনাফার অর্থ অন্তত তিন বছরের মধ্যে ফেরত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
বিনিয়োগ বোর্ড, যৌথ মূলধনী কম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধক কার্যালয় (আরজেএসসি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি বাধা এবং সেবাপ্রাপ্তিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাগুলো দূর করতে পারলে আরো অনেক জাপানি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবে। এসব দপ্তরের সেবাগুলোকে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের আওতায় আনার অনুরোধ করেছেন ক্রিড গ্রুপের কর্মকর্তারা।
ক্রিড এশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা তোশিহিকো মনোয়োশি বলেন, বসুন্ধরায় আমাদের আগ্রহ বেশি কারণ এটি রাজধানী ঢাকার একটি আকর্ষণীয় লোকেশনে অবস্থিত। এখান থেকে এয়ারপোর্ট কাছে, পূর্বাচলের পাশেই এই আবাসন এলাকা। সব মিলিয়ে বসুন্ধরা আধুনিক ঢাকার কেন্দ্র- তাই এখানে যদি মধ্যবিত্তদের জন্য ভালো মানের আবাসন গড়ে তোলা সম্ভব, যা হবে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
তিনি বলেন, আমরা চাই- নতুন কিছু করতে। আমরা গতানুগতিক নই, উন্নত শহর গড়াই আমাদের প্রত্যয়।
এই প্রতিনিধিদলের অপর সদস্য হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট স্থপতি হাসিয়া সুজিয়ামা বলেন, ক্রিড কোয়ালিটিতে বিশ্বাসী। এ জন্য বিভিন্ন দেশে তাদের কর্মযজ্ঞ বেশ ভালোই হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার যদি আবাসনখাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ক্রিডকে সহায়তা করে তবে আরও নতুন নতুন ও আধুনি ভবন নকশা বাংলাদেশে আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জেমস গ্রুপ’র চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী বিদেশি বিনিয়োগে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে বলেন, বিদেশিদের প্রকল্প পরিচালনার জন্য অ্যাকাউন্ট করা, জয়েন্ট স্টক রেজিস্ট্রেশন, ওই দেশ থেকে অর্থ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে জটিলতা, মুনাফা দেশে নিতে পারার বাধ্যতামূলক সময়সীমা (এখন ৫ বছর)- ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা রয়েছে। ফলে সম্ভাবনাময় আবাসন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব নিয়ম কানুন কিছুটা শিথিল করে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজ-এর নির্বাহী পরিচালক (সেলস) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শুধু ক্রিড গ্রুপ নয়, আরও ২০-২২টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষায় আছে। তারাও প্রত্যেকেই এসব সমস্যার মুখোমুখি। এগুলোর সমাধান করা না গেলে বিনিয়োগ শুধু ফিরেই যাবে।
সেমিনারে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার আবু তৈয়ব ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সংবাদপত্র, অনলাইনসহ সবগুলো সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কে জাপানি প্রতিনিধি দলটিকে ব্রিফ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে জমি কেনার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকে ২৪ কাঠা জমির ওপর 'ক্রিড ব্লেসড হিল' নামে এগিয়ে চলেছে ক্রিড গ্রুপের প্রথম প্রকল্পের কাজ। ভবনটি হবে ১০ তলাবিশিষ্ট। এখানে ডুপ্লেক্স ও সেমিডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট থাকবে। পুরো প্রকল্পে ৫০ শতাংশ খোলা জায়গা থাকবে। এছাড়া শিশুদের খেলার জায়গা, বাগান, জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুল, ইনডোর গেমস, মাল্টি পারপাস রুম, বার-বি-কিউ জোনসহ নানা সুবিধা থাকছে এতে। এমনকি প্রতিটি ফ্ল্যাটে থাকছে এক টুকরো উঠানও।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
আইএ/এমএমকে