ঢাকা: রাজধানীর বড় অনুষ্ঠান, ধনীর দুলালের বিয়ে, বৌ-ভাত, পাটি অথবা পার্বনে ইকবাল ক্যাটারিং (ইকবাল হোসেন ক্যাটারিং সার্ভিস) এর খাবারের জুড়ি নেই।
পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি, রোস্ট, রেজালা, জালি কাবাব, টিক্কা, শামী কাবাব, জর্দা, বোরহানি, ফিরনিসহ সব ধরনের অভিজাত, দৃষ্টিনন্দন ও মুখরোচক খাবার পরিবেশন করে প্রতিষ্ঠানটি।
বড় যে অনুষ্ঠানই হোক, ইকবাল সেই খাবার দিতে সক্ষম। তাই তো ১৯৯৩ সাল থেকে রাজধানীতে বড় খাবার সরবরাহে সুনাম আর সক্ষমতা ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দৈনিক প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকার খাবার সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। খাবারে নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটও নেয়। কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না বলে অভিযোগ।
দৈনিক লাখ টাকা ভ্যাট এলেও মাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকার ফিক্সড ভ্যাট দেয় ইকবাল ক্যাটারিং! সম্প্রতি মূসক গোয়েন্দাদের অভিযানে ভ্যাট ফাঁকির ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
মূসক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইকবাল ক্যাটারিং দীর্ঘ ২২ বছর খাবারের ব্যবসা করছে। বড় কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে এর খাবার বেশ জনপ্রিয়। একসঙ্গে লাখ মানুষের খাবার দিতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানটি।
খাবারপ্রিয়তায় দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে স্বীকৃতি।
অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটির মোহাম্মদপুর প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান চলাকালে গোয়েন্দাদের হুমকিও দেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরিয়ে ফেলেন কাগজপত্র। কিন্তু অভিযান থামেনি। গোয়েন্দারা পেয়ে যান ভ্যাট ফাঁকির চিত্র।
অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি অভিজাত সব সেন্টারে খাবার সরবরাহ করে। এর মধ্যে গত এক বছরে শুধু বিআইসিসিতে ৯ কোটি টাকার বেশি মূল্যের খাবার সরবরাহ করেছে। সব খাবার থেকে নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাট নিলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
সূত্র আরো জানায়, অভিযানের সময় ২০ লাখ টাকার বেশি কয়েকটি অর্ডার পাওয়া গেছে, যেগুলোর ভ্যাটসহ বিল দেওয়া হলেও মূসক চালান দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। তারা ইসিআর, পস মেশিন ব্যবহার করে বিল দেয়, ভ্যাটও নেয়। কিন্তু এর মাধ্যমে আদায় করা ভ্যাট জমা দেয় না সরকারি কোষাগারে।
সূত্র জানায়, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও রেজিস্ট্রার বইয়ে বিক্রির হিসাব থাকলেও আদায়কৃত ভ্যাটের চালান দেওয়ার প্রমাণ দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে বা তিন মাস অন্তর অন্তর বিক্রি হিসাব করে ভ্যাট দেওয়ার কথা থাকলেও মাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ফিক্সড ভ্যাট (ফিক্সড ভ্যাট বলতে কোনো ভ্যাট নেই) দেয়।
সূত্র আরো জানায়, খাতা, টোকা কাগজ, রেজিস্টার, কাঁচাপাকা ভাউচার, চালান, ল্যাপটপ, সিপিইউ, অর্ডারশিট, বাংক চেক, জমা বই জব্দ করেছেন গোয়েন্দারা।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট ফাঁকির এ চিত্র বিস্মিত করেছে সবাইকে। অনেক হুমকি সহ্য করতে হয়েছে।
একদিনে যে প্রতিষ্ঠানের লাখ টাকার বেশি ভ্যাট আসে কিভাবে মাসে ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট দেয়! মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
ভ্যাট নেওয়ার কথা স্বীকার করেন ইকবাল ক্যাটারিং এর ম্যানেজার মো. সেলিম। তিনি বলেন, সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয় কি-না সেটা মালিক জানে।
মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় রন্ধন শিল্পের আইকন।
অভিযোগের ভিত্তিতে কেঁচো খুড়তে সাপ বের হয়ে আসে। এতো বড় ভ্যাট ফাঁকি, অবিশ্বাস্য। ডকুমেন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে, মামলা হবে বলেও জানান তিনি।
ভ্যাট তো প্রতিষ্ঠান নয় ভোক্তা দিচ্ছেন। সে ভ্যাট কেন প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দেবে! মানুষ সচেতন হচ্ছেন। অভিযান আরো জোরদার করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
আরইউ/এএসআর
** নামে ব্র্যান্ড, দেয় ভ্যাট ফাঁকি
** ‘ফিক্সড’ ভ্যাটের নামে প্রতারণা!