ঢাকা: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের ১০ম সম্মেলনের ফলাফল বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক বলে দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সংস্থাটি।
এতে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির অনারারি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান প্রমুখ।
গত সোমবার (২১ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, যে চার উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সম্মেলনে গিয়েছে সেগুলো সফল হয়েছে। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের দু’দিনের মধ্যে সিপিডি সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ডব্লিউটিও’র মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য আশাবাদের কিছু নেই।
সিপিডির মতে, এবারের ডব্লিউটিও সম্মেলনে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাজার উদারীকরণের আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। আন্তর্জাতিক বিশ্ব বাণিজ্যে শক্তিশালী তিনটি দেশ (ভারত, চীন ও ব্রাজিল) ও উন্নত বিশ্বের দেশগুলো পুরো আলোচনা নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ সভা থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলো বাড়তি কিছু পায়নি। এসব আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল খুবই নগণ্য। ক্ষেত্রবিশেষে আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ডব্লিউটিও সম্মেলন এবং গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খন্দকার জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি নিয়ে পৃথক দু’টি মূল্যায়ন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপনের শুরুতে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিও সম্মেলনে বেসরকারিভাবে সিপিডির তিনজন প্রতিনিধি অংশ নেন। বেশ কয়েকটি সেশনে আলোচনায় অংশ নেন সিপিডি প্রতিনিধিরা। ডব্লিউটিও সম্মেলনের সব আলোচনাকে বিচার-বিশ্লেষণ করে এই প্রবন্ধ তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডব্লিউটিও সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে বির্তক হতে পারে। এবারের সম্মেলনে অনেক স্বল্পোন্নত দেশ অংশ নিতে পারেনি।
তার মতে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের বাণিজ্য উদারীকরণ করলে ডব্লিউটিওতে অন্তর্ভুক্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকেও বাজার সুবিধা দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সমন্বয়ক হিসেবে বাংলাদেশকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, ডব্লিউটিও’র সুবিধা ভোগ করতে হলে আফ্রিকান স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শক্তিশালী করতে হবে। কারণ আফ্রিকান স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে এবার তুলা উৎপাদনে ভর্তুকি ও রফতানিতে প্রণোদনা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উন্নত বিশ্ব। এতে বাংলাদেশে তুলার দাম বাড়তে পারে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এবারের সম্মেলনে ভূ-অর্থনীতি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। উন্নত বিশ্ব নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। তার মানে, বিশ্ব বাণিজ্য নতুন ধরনের উৎক্রমের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। দেশগুলো ডব্লিউটিও’র বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আগামীতে বিশ্ব বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বে। ফলে বাংলাদেশকে নতুন করে বিশ্ব বাণিজ্য অবস্থান নিয়ে ভাবতে হবে। এ সংকট থেকে উত্তরণে স্বচ্ছতা, গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, এই নতুন সংকট থেকে উত্তরণে আঞ্চলিক জোটগুলো যেমন সাফটা, বিমসটেকে সক্রিয় করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ-দক্ষিণ আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত অঙ্গীকার পেয়েছি। ফান্ড নিয়ে কথা হয়েছে, যে ফান্ডটার কথা বলা হয়েছে তা আমরা লোন হিসাবে নাকি অন্য কোনো হিসাবে পাবো তা পরিষ্কার নয়।
তিনি বলেন, তবে এটা অনুদান হিসেবে দিতে হবে। কারণ জলবায়ুর সমস্যা আমরা সৃষ্টি করিনি। এটা উন্নত বিশ্বের সৃষ্ট। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত।
ফাহমিদা বলেন, উন্নত বিশ্ব উৎপাদন করতে গিয়ে আমাদের ক্ষতি করছে। দেখা যাচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষতি করা এসব দেশ জলবায়ুর জন্য ফান্ডও তৈরি করছে, কিন্তু তা ওইসব উন্নত দেশেই রয়ে যাচ্ছে। এ ফান্ড স্বল্পোন্নত দেশকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু সমস্যায় উপকূলের ১৭ থেকে ২০ শতাংশ বিলীন হয়ে যাবে, তখন ওইসব অঞ্চলের লোকগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য যাদের কারণে এসব সমস্যার সৃষ্টি, তাদের অর্থ দিয়ে ক্ষতিপূরণের কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫/আপডেট ১৬৫৯ ঘণ্টা
এডিএ/এটি/এইচএ