ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

মূসক চালান

ইস্যু না করে ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
ইস্যু না করে ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব!

ঢাকা: দেশের সবচেয়ে বড় ও স্বনামধন্য ডেকোরেটর অ্যান্ড ক্যাটারার সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ইকবাল ক্যাটারিং ও ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি।

সব অভিজাত অনুষ্ঠানে তাদের পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি, রোস্ট, রেজালা, জালি কাবাব, টিক্কা, শামী কাবাব, জর্দা, বোরহানি, ফিরনিসহ সব ধরনের খাবার সরবরাহ করা হয়।



প্রতিষ্ঠান দু’টি দৈনিক বিক্রি করে ১৮-২০ লাখ টাকা। অর্ডার হয় অর্ধ কোটি টাকার। দৈনিক আড়াই লাখ টাকা মূসক বা ভ্যাট নেয় ক্রেতাদের থেকে। কিন্তু মূসক চালান ইস্যু করে না!

এভাবে ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠান দু’টি ‘মূসক চালান’ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকশ’ কোটি টাকা। সম্প্রতি মূসক গোয়েন্দা অধিদফতরের অভিযানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সাম্প্রতিককালের অভিযানে শুধু এ দু’টি প্রতিষ্ঠানই নয়, দেশের অভিজাত এলাকার নামি-দামি বহু প্রতিষ্ঠান, শপিংমল মূসক নিলেও ‘চালান ইস্যু’ করে না বলে জানা গেছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকার একটি নামি শপিংমল। সুপারশপ, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা বিউটি পার্লার, রেস্তোরাঁ ও ব্যায়ামাগার রয়েছে সেখানে।

সুপারশপে ৪ শতাংশ, পার্লারে সাড়ে ৪ শতাংশ ও রেস্তোরাঁ-ব্যায়ামাগারে ১৫ শতাংশ মূসক নেয় শপিংমলটি। কিন্তু চালান ইস্যু করে না। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা বিক্রি হয়।

শপিংমলটিতে মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা ও বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ‘চালান ইস্যু’ না করে ফাঁকি দেয় বলেও গোয়েন্দা অভিযানে উঠে এসেছে। গত কয়েক মাসে ঢাকায় অভিযানে ‘চালান ইস্যু করা ও না করা’ বহু প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মূসক গোয়েন্দা অধিদফতর।

এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূসক বিভাগ সারাদেশে গত কয়েক বছরের অভিযানে ‘চালান ইস্যু’ না করে মূসক ফাঁকির ব্যাপক অভিযোগ পেয়ে আসছে বলে জানা গেছে।

শুধু চালান ইস্যু নয়, এসব নামি-দামি প্রতিষ্ঠান ‘ফিক্সড ভ্যাটের নামে অভিনব পন্থায় বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা মূসক ফাঁকি দিচ্ছে বলেও অভিযানে উঠে এসেছে।

এনবিআরের তথ্য মতে, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, দোকান, সুপারশপ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জুয়েলার্স, কমিউনিটি সেন্টার, মিষ্টির দোকান, ফার্নিচারের শো-রুম, বিউটি পার্লার, জেনারেল স্টোর- এ ১১ ধরনের প্রতিষ্ঠানে মূসক চালান বাধ্যতামূলক। ভ্যাট নিয়ে মূসক চালান-১১ না দিলে মূসক আইন’১৯৯১ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এনবিআরের তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৪ লাখ ভ্যাট প্রদান উপযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকই বড় প্রতিষ্ঠান হলেও মাত্র ৬০ হাজার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয়।

মূসক গোয়েন্দার সহকারী কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, অভিযানে বেশিরভাগ নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মূসক চালান ইস্যু না করে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ বেশি পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ভ্যাট তো ব্যবসায়ী নয়, ভোক্তা দেন। তাহলে চালান ইস্যুতে বাঁধা কোথায়? ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে এসব প্রতিষ্ঠান চালান ইস্যু করে না।

এনবিআরের মূসক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের অনেক ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মূসক চালান ইস্যু না করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের অভিযানে বহু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান আরো জোরদার করা হচ্ছে।

মূসক গোয়েন্দা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, অভিযানে বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, সচেতনতার অভাব রয়েছে। একজন ক্রেতা ভ্যাট দিচ্ছেন, কিন্তু চালান নেন না। এ ভ্যাট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে কি-না তাও দেখার দায়িত্ব রয়েছে তাদের।

তিনি আরো বলেন, বহু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সর্তক হয়েছে। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম। মানুষ শতভাগ সচেতন হলে তা রোধ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
আরইউ/এএসআর

** নামে ব্র্যান্ড, দেয় ভ্যাট ফাঁকি
** ‘ফিক্সড’ ভ্যাটের নামে প্রতারণা!
** খাবারে সুনাম, ভ্যাট ফাঁকিতে দুর্নাম
** সাবধান! বিলফি!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।