ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন

ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ৩৮১৬ কোটি টাকা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৬
ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ৩৮১৬ কোটি টাকা ফাইল ফটো

ঢাকা: এর আগে তিন ধাপে সময় ও ব্যয় বেড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের। কুমিল্লার দাউদকান্দি টোলপ্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার মহাসড়কে চতুর্থবারের মতো সময় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।



সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, চতুর্থবারে ৬২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বেড়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এক বছর বাড়িয়ে হচ্ছে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
 
সংশোধিত প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির(একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। তবে এর আগে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা  তার নিজ দফতরে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত থাকবেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক, আইএমইডি সচিব  শহিদ উল্লা খন্দকার,  পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) এসএম গোলাম ফারুক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী এম  ফিরোজ ইকবাল প্রমুখ।
 
বৈঠক প্রসঙ্গে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আমাদের ডেকেছেন। কয়েকটা এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে অন্যতম ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন। প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনের (চতুর্থ দফায়) জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেকে প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন পায়নি। তবে একনেকে অনুমোদনের আগে মন্ত্রীর অনুমতি লাগে।

প্রকল্পের মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ব্যয় ছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম রিভাইজড ডিপিপি’তে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৮২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বিশেষ ডিপিপি’তে ব্যয় বেড়ে ‍দাঁড়ায় ২ হাজার ৪১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। দ্বিতীয় রিভাইজড ডিপিপি’তে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৯০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এভাবে একে একে তিনবার ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয় প্রকল্পের।

অন্যদিকে মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের জুন নাগাদ। প্রথম ধাপে বাড়িয়ে ২০১৩ ‍ডিসেম্বর, দ্বিতীয় ধাপে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর এবং তৃতীয় ধাপে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। এবার এক বছর বেড়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

বর্ষার বাগড়া, অর্থ সংকট, সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপকরণ পাথর ও মাটি সংকট ও বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে আবারও সময় ও ব্যয় বাড়ছে প্রকল্পের।
 
সওজ থেকে প্রকল্পের হালনাগাদ অগ্রগতিতে দেখা গেছে, প্রকল্পের ১০টি সড়ক প্যাকেজের আওতায় ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৪৩ কিলোমিটার সড়কে পেভমেন্টের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সকল ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং মাটির কাজের অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।
 
প্রকল্পের আওতায় ২৩টি সেতুর মধ্যে ২০টি সেতু এবং ২৪২টি কালভার্টের মধ্যে ২৪০টি কালভার্টের কাজ শেষ হয়েছে। ফোরলেনের গুরুত্ত্বপূর্ণ ১৬টি অংশে ৭ কিলোমিটার কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে প্রকল্প এলাকায় নতুন ছয়টি বাজার অংশ যেমন ছোট দারোগার হাট, সীতাকুণ্ড বাইপাস, কদম রসুল বাজার, বিএমএ গেট ও পোর্ট কানেকটিভিটি রোডে রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। এ খাতে ১৩৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ফোরলেনে নিরাপদ ট্রাফিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
 
ফোরলেন প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতিতে দেখা গেছে, পাথরের অভাবে কিছু সেতু নির্মাণ কাজ ব্যহত হচ্ছে। সেতুগুলো হলো, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী বাইপাস অংশের লালপুল, লেমুয়া, মহুরী ও ধুমঘাট সেতু। চট্টগ্রাম রেল ওভারপাস এবং কুমিল্লার মিয়াবাজার সেতু।
 
প্রকল্পের এ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ২ হাজার ২৭১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ। ১৮০ কিলোমিটার সড়কে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ১২১ দশমিক ০৩ লাখ ঘনমিটার।
 
সওজ জানায়, ফোরলেনের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বৃক্ষরোপন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। ৫ মিটার প্রশস্থ মিডিয়া লেনের মাঝখানে বুশ টাইপ বৃক্ষরোপন করা হবে যাতে করে রাতে অপর পাশ থেকে লাইট এসে গাড়িচালকের সমস্যা করতে না পারে। রোপিত গাছের পরিচর্যা এবং স্থায়িত্বে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাঁচ বছর গাছগুলোর পরিচর্যায় কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বও দেয়া হবে।
 
অন্যদিকে ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার শাসনগাছায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক দু’টি ফেনীর মহিপালে মিলিত হয়েছে। এখানে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ৩৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৬ লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।