বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী, ব্যবসায়ী নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। এসব আলোচনায় দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পাটপণ্যের ওপর এন্টি ডাম্পিং, বর্ডার হাট, ভারতের স্বল্পসুদে ঋণের অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর এ সফরে টেকনিক্যাল বিষয়ে তেমন আলোচনা হবে না। এটিকে একটি সৌজন্য সফর বলা যায়। যেহেতু একাধিক বৈঠকে আমরা মিলিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি সেহেতু কিছু বিষয়ে আলোচনা তো হবেই।
তিনি জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি আলোচনা সভা হবে। সেখানে মূল ভূমিকায় থাকবেন ব্যবসায়ীরাই। আমাদের নিজস্ব কোনো এজেন্ডা থাকবে না সেখানে। পরদিন সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় হবে দুই মন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
এ বৈঠকে এজেন্ডা হিসেবে থাকছে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন (ওয়ানটাইম পুশ প্রপোজাল), কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ), নতুন বর্ডার হার্ট নির্মাণ, ভারতীয় কোম্পানির জন্য দরপত্রের যোগ্যতার বৈষম্য, বন্দরের বাধা দূরীকরণ, বাংলাদেশি পাটপণ্যের ওপর ভারতের এন্টি ডাম্পিং ডিউটি, পাটবস্ত্রের ওপর এন্টি সারকামভেনশন ইনভেস্টিগেশন, ছয়টি নতুন নন-ফুড পণ্য ও কস্টিক সোডার ক্ষেত্রে বিএসটিআই সনদের স্বীকৃতি নিয়ে আলোচনা।
শফিকুল ইসলাম জানান, বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে পাটপণ্যের ওপর এন্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপের বিষয়টি। যদিও ভারত বরাবরই বলে আসছে এটি আদালতে বিচারাধীন বিষয়, তাদের কিছু করার নেই। তবু আমরা এ বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন বর্ডার হাট।
তিনি জানান, এই মুহূর্তে চারটি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে। যার চারটির কাজ এ বছরের মধ্যেই শেষ হবে। আরো নতুন ৬টি হাট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে উভয় দেশ নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলো নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে।
‘ভারত চায় প্রতিবছর ১০টি করে নতুন হাট চালু করতে। কিন্তু আমরা ধীরে চলার নীতিতে আছি। কারণ, এতে কোনো শুল্ক ছাড়াই পণ্য চলে আসে। পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের জন্য এই হাট হলেও এটি অসদ্ব্যাহার। এগুলো বন্ধ করা চেষ্টা করছি আমরা। ’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দু’দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্য হয়েছে ৯৪৯ কোটি ২৬ লাখ ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রফতানি ৮৭ কোটি ৩২ লাখ ডলারে পণ্য। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ৮৬১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ, বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে ৭৭৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় সবচেয়ে বেশি পাট ও পাটজাত পণ্য এবং প্রকৌশল পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৭ কোটি ডলারের। ২০১৭ সালে এই পণ্যের ওপরই শুল্কবাধা আরোপ করেছে ভারত। অন্যদিকে একই বছরে প্রকৌশর পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ডলারের। আর পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের।
অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আসে বস্ত্র, সুতা ও পোশাক। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসব পণ্য এসেছে ১৭৩ কোটি ডলারের। এছাড়া সবজি এসেছে ৭৮ কোটি ২২ লাখ ডলার, যন্ত্রপাতি ও মেকানিক সামগ্রী এসেছে ৫৯ কোটি ডলার, কেমিক্যাল ও এলাইড পণ্য ৫৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলার এবং গাড়ি ও পরিবহন সামগ্রী এসেছে ৫১ কোটি ১৫ লাখ ডলারের।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
এজেড/এএ