ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

টাঙ্গাইলে বন্যায় ১৪১ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি 

সুমন রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
টাঙ্গাইলে বন্যায় ১৪১ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি  ফসলের ক্ষতি। ছবি: বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: এবারের বন্যায় টাঙ্গাইলে ১৩ হাজার ৮৯২ হেক্টর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, মির্জাপুর, নাগরপুর, বাসাইল, ধনবাড়ী, ঘাটাইল, গোপালপুর, সখিপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার এক লাখ সাত হাজার ৩৯১ জন কৃষকের ১৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তবে এ পর্যন্ত জেলার কোনো কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় বন্যার পানিতে বোনা আমন, রোপা আমন, বীজ তলা, আউশ, সবজি, তিল, আখ, কলা ও লেবুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার ১০ হাজার ৫৮৮ হেক্টর বোনা আমন, এক হাজার ৩৫৯ হেক্টর রোপা আমন, এক হাজার ৮০৮ হেক্টর আউশ, এক হাজার ৪৬৪ হেক্টর সবজি, এক হাজার ৬৫২ হেক্টর তিল, ৬৫ হেক্টর আখ, ৪৫ হেক্টর কলা ও ৩৮০ হেক্টর লেবু নিমজ্জিত হয়েছে।  

এর মধ্যে সদর উপজেলায় তিন হাজার ৮২৫ হেক্টরের ফসলি জমির মধ্যে এক হাজার ৯০০ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এর মধ্যে দুই হাজার ১০০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে এক হাজার ৪০০ হেক্টর নিমজ্জিত, ১৯৬ হেক্টর বীজ তলার মধ্যে ১০০ হেক্টর বীজতলা নিমজ্জিত, ২৮৫ হেক্টর আউশের মধ্যে ১৭০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৭৫০ হেক্টর সবজির মধ্যে ১৮০ হেক্টর সবজি নিমজ্জিত, ১৮০ হেক্টর আখের মধ্যে ৫০ হেক্টর আখ নিমজ্জিত হয়েছে।

বাসাইলে এক হাজার ৯৪৯ হেক্টরের ফসলি জমির মধ্যে এক হাজার হয়েছে, এর মধ্যে এক হাজার ৬৫৩ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে এক হাজার ৪৮০ হেক্টর নিমজ্জিত, ১৭ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ১৬ হেক্টর নিমজ্জিত, ২৬০ হেক্টর সবজির ৬০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।  

কালিহাতীতে দুই হাজার ৭৮৭ হেক্টরের ফসলি জমির মধ্যে ৫২৫ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এর মধ্যে এক হাজার ৫৫০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে ৩৯৫ হেক্টর নিমজ্জিত, ৪৪৬ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ৭০ হেক্টর, ৭৫ হেক্টর আউশের মধ্যে ২০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৪২০ হেক্টর সবজির মধ্যে ৪০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।  

ঘাটাইলে দুই হাজার ৮৫৯ হেক্টরের ফসলি জমির মধ্যে ৮১১ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এর মধ্যে ২০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে ১০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৮৬২ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ৪৯২ হেক্টর নিমজ্জিত, ৬০ হেক্টর আউশের মধ্যে ৪৯ হেক্টর নিমজ্জিত, ৫০০ হেক্টর সবজির মধ্যে ২৬০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।  

নাগরপুরে পাঁচ হাজার ১৭ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে এক হাজার ১৬৬ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এর মধ্যে চার হাজার ১৫০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে ৯৮৮ হেক্টর নিমজ্জিত, ৮০ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ২০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৫৫ হেক্টর আউশের মধ্যে ৮ হেক্টর নিমজ্জিত, ৬২০ হেক্টর সবজির মধ্যে ১১০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৩০ হেক্টর লেবুর মধ্যে ২০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৫০ হেক্টর কলার মধ্যে ২০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।  

মির্জাপুরে ছয় হাজার ৭৪৩ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে দুই হাজার ৮৬৪ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এর মধ্যে চার হাজার ৬২৬ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে দুই হাজার ৬৫০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৩৫২ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ১৬ হেক্টর নিমজ্জিত, ৫৬ হেক্টর আউশের মধ্যে ১৪ হেক্টর নিমজ্জিত, ৯৫০ হেক্টর সবজির মধ্যে ১৬৪ হেক্টর নিমজ্জিত, ২৯ হেক্টর আখের মধ্যে ৫ হেক্টর নিমজ্জিত, ৬৭৫ হেক্টর লেবুর মধ্যে ১০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৫৫ হেক্টর কলার মধ্যে ৫ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।

ভূঞাপুরে তিন হাজার ৭৭৩ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে এক হাজার ১৯০ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩৯০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে ৫৫০ হেক্টর নিমজ্জিত, ১৮৭ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ৩০ হেক্টর নিমজ্জিত, এক হাজার ৪০৫ হেক্টর আউশের মধ্যে ৫৫০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৩৩০ হেক্টর সবজির মধ্যে ৬০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।

গোপালপুরে এক হাজার ৪৯৯ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ৬২৫ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে ১০০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৭০৭ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ৩৮০ হেক্টর নিমজ্জিত, ১০০ হেক্টর আউশের মধ্যে ৪৫ হেক্টর নিমজ্জিত, ২৪৫ হেক্টর সবজির মধ্যে ১০০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।  

সখিপুরে দুই হাজার ৫৮৮ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ৬৬ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এর মধ্যে ৭৮ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে ১৫ হেক্টর নিমজ্জিত, ৯৩০ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ৩০ হেক্টর নিমজ্জিত, ১১০ হেক্টর আউশের মধ্যে ৬ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।  

দেলদুয়ারে পাঁচ হাজার ১৯৩ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে এক হাজার ২২৫ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এর মধ্যে তিন হাজার ৬৪০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে ৭০০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৮৬ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ৫৫ হেক্টর নিমজ্জিত, ৫৩ হেক্টর আউশের মধ্যে ৩০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৪৪০ হেক্টর সবজির মধ্যে ৬০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৬৬ হেক্টর আখের মধ্যে ১০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৮০০ হেক্টর লেবুর মধ্যে ৩৫০ হেক্টর নিমজ্জিত, ১০৮ হেক্টর কলার মধ্যে ২০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।  

ধনবাড়ীতে ৯০৮ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ২৭০ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এর মধ্যে ৫০০ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ১২০ হেক্টর নিমজ্জিত, ৮৫ হেক্টর আউশের মধ্যে ২০ হেক্টর নিমজ্জিত, ২৫০ হেক্টর সবজির মধ্যে ১৩০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া মধুপুর উপজেলায় বন্যার পানি প্রবেশ না করায় ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মনছেল আলী জানান, তিনি এবার ছয় বিঘা জায়গায় ধান ও চার বিঘা জায়গায় পাট চাষ করেছিলেন। বন্যায় সব নষ্ট হয়ে তার দেড় লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে।

ডিগ্রি হুগড়া গ্রামের আবুল মিয়া জানান, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে দুর্মাসহ শাক সবজি চাষ করেছিলেন। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গিয়ে তার প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতি হলেও তিনি এ পর্যন্ত একটি টাকাও সরকারি প্রণোদনা পাননি বলে জানান।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আহ্সানুল বারী বাংলানিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অবশ্যই প্রণোদনা দেওয়া হবে। আটটি উপজেলায় ২০ একর জমিতে নাবি জাতের পাটের বীজ তলা করা হবে। ২০ একরের চারাগুলো বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। ট্রেতে বীজতলা প্রস্তুত করা হবে। বন্যার পানি নেমে গেলে চার হাজার কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে মাশকালাইয়ের বীজ ও সার বিতরণ করা হবে। কিছুদিন পর আট হাজার কৃষকদের মধ্যে সবজি বীজ দেওয়া হবে। যে সব চাষিরা আমন চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের বোরো বীজ ও সার দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আগাম জাতের সরিষার বীজ ও সার দেওয়া হবে। ভুট্টার বীজ ও সার, গমের বীজ ও সার দেওয়া হবে। এখনও বিআর ২২ ও বিআর ২৩, বিনাশাইল ও নাইজাইল নাবী জাতের বীজতলা প্রস্তুত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।