ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গত বছরের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে চা-উৎপাদন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২০
গত বছরের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে চা-উৎপাদন নতুন কুড়িতে ভরে গেছে চা-বাগান। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ২০১৯ সালের চেয়ে চলতি বছর পিছিয়ে রয়েছে চায়ের মোট উৎপাদন। ফলে চায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।

এছাড়াও করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির জন্য দেশে অনেকাংশেই কমে গেছে চায়ের চাহিদা। শুধু তা-ই নয়, আবহাওয়াজনিত কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অনেকটাই অসম্ভব বলে ধারণা করছেন চা-সংশ্লিষ্টরা।

প্রাকৃতিক কারণে চায়ের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং করোনাজনিত কারণে কেনাবেচা ও দাম কমে যাওয়ায় সবমিলিয়ে নানা ধরনের সংকটে বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে দেশের চা-শিল্প।  

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২০ সালে চায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ মিলিয়ন কেজি চা অর্থাৎ ৭ কোটি ৭০ লাখ কেজি চা। ২০১৯ সালে চায়ের মোট উৎপাদন হলো ৯৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন কেজি চা-উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চা-শিল্পের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা রেকর্ড করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ চায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৬ মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ ৭ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা।

বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট ভ্যালি সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের চেয়েও কম চায়ের উৎপাদন। এর প্রধান কারণ শুধু জুন মাসে ৩৪০ দশমিক ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই মাসে আমরা চায়ের জন্য উপযোগী পর্যাপ্ত সূর্যতাপ পাইনি। ৩০ দিনের মধ্যে ২৫ দিনই বৃষ্টি এবং মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ছিল।  

তিনি আরও বলেন, চায়ের জন্য দিনের বৃষ্টিপাতের চেয়ে রাতে বৃষ্টিপাত অধিকতর উপকারী। দিনে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে চা-গাছগুলো তাদের সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। ফলে চা-গাছ দ্রুত কুঁড়ি ছাড়তে ব্যাহত হয়। .গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, এর আগে মাসে আমরা প্রচণ্ড খরার মুখোমুখি ছিলাম। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাত্র ২১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত বছরের এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৩৫ দশমিক ৮৯ মিলিমিটার। জুলাই-আগস্ট মাসে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বাড়ে। তবে এখন চা-উৎপাদন গত বছরের তুলনা প্রায় ৩০ শতাংশ পিছিয়ে আছে।  

‘চায়ের চাহিদার বড় অংশ টংদোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো। এখানে অধিক পরিমাণে চা ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া গত মার্চ থেকে দীর্ঘদিন টং দোকান ও হোটেলগুলো বন্ধ ছিল। এখন সীমিত আকারে খুললেও ব্যবসা অনেক কমেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিসেও এ পানীয় পণ্যটির ব্যবহার কমে এসেছে। সামগ্রিকভাবে ব্যবহার ও বেচাকেনা কমে যাওয়ায় দেশের নিলামগুলোতে সরবরাহ করা বেশির ভাগ চা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। ফলে কমেছে দাম বলে যোগ করেন ওই চা-বিশেষজ্ঞ।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চা-বাগানগুলো চালু রাখার নির্দেশনাকে স্বাগত জানিতে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, অন্যান্য দেশে এক মাস পর তাদের চা-বাগানগুলো চালু করেছিলো। এই এক মাসে তাদের যত ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু আমরা এই ক্ষতি থেকে বেঁচে গেছি। অন্যদেশের চা-বাগানগুলোতে তাদের অতিরিক্ত বুড়ো হয়ে যাওয়া কুঁড়িগুলোকে কেটে ফেলে দিতে হয়েছিল। ফলে তারা পাতা চয়নে প্রায় দুই মাস পিছিয়ে গিয়েছিল। আমরা কিন্তু এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি।

‘গত বছরের তুলনায় চায়ের মোট উৎপাদন পেছনে থাকবে এবং এটি কাভার (নিয়ন্ত্রণ) করা সম্ভব হবে না। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে কম উৎপাদনসহ সর্বপরি আশানুরূপভাবে চা-বিক্রি না হওয়ায় এই শিল্প মারাত্মক ঝুঁকির মুখে গিয়ে পড়বে। এই সংকটময় অবস্থা কাটিতে উঠতে চা-শিল্পে সরকারের সাহায্যের প্রয়োজন বলে জানালেন বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালি সভাপতি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।