ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্য মেলায় থাকছে ৫ মেগা প্রকল্পের কাঠামো

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
বাণিজ্য মেলায় থাকছে ৫ মেগা প্রকল্পের কাঠামো ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দেশে করোনা মহামারী পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এক বছর পর আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২।

এবার পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) স্থায়ী ভবনে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মেলার প্রবেশদ্বারের প্রতি সবার আকর্ষণ থাকে। এবার মেলার প্রবেশদ্বারে ভিন্নতা আনতে ৫টি মেগা প্রকল্পের কাঠামো ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করা হবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ সাজানো হবে বলে জানিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা শুরু হবে। মেলার প্রবেশদ্বারের প্রতি সবার আকর্ষণ থাকে। এবার মেলার প্রবেশদ্বারে ভিন্নতা আনা হয়েছে। প্রবেশ গেইটের ওপরে ঠিক মাঝে থাকছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। তার দুই পাশে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল। দুই স্তম্ভে থাকবে কর্ণফুলী টার্নেল, রূপপুর পারমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দর। ইতোমধ্যে এর কাজ শুরু হয়েছে। আর পুরো মেলা প্রাঙ্গণ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে সাজানো হবে। আশা করছি মেলা শুরুর আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে মেলার মূল আকর্ষণ থাকছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নে। যদিও এ বছর স্থায়ী ভবনে মেলা হওয়ায় শিশুদের জন্য কোনো পার্কের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না।

ছবি: শাকিল আহমেদ

তিনি আরও বলেন, নতুন জায়গায় কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা মেলার কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমাদের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি শেষ করতে পারবো। উন্নত বিশ্বে যেভাবে মেলার আয়োজন করা হয়, এ বছর আমরা সেরকম করার চেষ্টা করছি। কেন্দ্রের ভেতরে সেল স্ক্রিন দিয়ে আন্তর্জাতিক মেলার মতো ছোট ছোট স্টলগুলো সীমানা দিয়ে দেওয়া হবে। ভেতরে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতো করে প্রয়োজন অনুযায়ী ডেকোরেশন করবে। করোনার জন্য এবার স্টলগুলোর মাঝখানে দূরত্ব বেশি রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য বছরের থেকে এ বছর মেলার স্টল সংখ্যা কমানো হয়েছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলে ২২৫টি স্টল থাকবে এবারের মেলায়। এরমধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে ৫০টি, জেনারেল স্টল, ফুড কোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ১৫৪টি এবং ইউটিলিটি বুথ রাখা হয়েছে ২০-২২টি। এরমধ্যে ৮টি ব্যাংকের বুথ রয়েছে। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংকের বুথ স্থাপন হয়েছে। কেন্দ্রের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবে। এছাড়া আরও ১২-১৩টি ফুড কোড থাকবে।  

দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য বিআরটিসি বাস রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৩০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। রাস্তার দুই পাশে ১৫টি করে মোট ৩০টি বাস চলাচল করবে। এখানে ন্যুনতম একটা ভাড়া থাকবে। সম্ভবত ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা হবে ১২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য। ফ্রি সার্ভিস দিলে আশপাশের স্থানীয় লোকজনই বেশি চলাচল করবে। তখন দর্শনার্থীদের চলাচল কঠিন হবে। এজন্য ন্যুনতম ভাড়া নেওয়া হবে। এছাড়া মেলায় প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা এন্ট্রি ফি রাখা হয়েছে।

ছবি: শাকিল আহমেদ

বালুব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক বলেন, মোট ১২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১০ কিলোমিটার ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। দুই লেন করে দুই পাশে চার লেন ক্লিয়ার থাকবে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো বেশিও থাকবে। এখনই অনেক জায়গায় প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। যদি প্রধানমন্ত্রী সরাসরি যান তাহলে এই সড়ক দ্রুতই তৈরি হয়ে যাবে। এখন যে সময় লাগে তখন আর সে সময় লাগবে না। ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যাবে।  

নতুন মেলাকেন্দ্রে বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে। তবে মেলার শৃঙ্খলার স্বার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে এক হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। ১৫শ’ গাড়ির বেশি একসঙ্গে থাকে না। এছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ আছে।

জানা গেছে, রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ২৩১ কোটি টাকা ও ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে। এক্সিবিশন সেন্টারে তৈরি করা ফ্লোরের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার, বিল্ডিংয়ের ফ্লোরের আয়তন ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার, এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলে ৮০০টি বুথ রয়েছে, প্রতিটি বুথের আয়তন ৯ দশমিক ৬৭ বর্গমিটার।

এছাড়াও রয়েছে ৪৭৩ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টি-ফাংশনাল হল, ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম, ছয়টি মিটিং রুম, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের কক্ষ, অফিস রুম দুটি, মেডিক্যাল রুম, ডরমেটরি-গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট ইন পাবলিক এড্রেস সিস্টেম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম, ইনবিল্ট ইন্টারনেটসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। প্রতিবছর জানুয়ারির ১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী এ মেলার উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে চলতি বছর বাণিজ্য মেলা হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে গত ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
জিসিজি/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।