ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা খেলাপি হবেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা খেলাপি হবেন

ঢাকা: করোনা মহামারির মধ্যে এখনো দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমন অবস্থায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে অন্তত জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছেন সারাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা।

 

শনিবার (২২ জানুয়ারি) এফবিসিসিআই আয়োজিত কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস-২০২২ এর মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান তারা।

সভায় বক্তব্য রাখেন সারাদেশ থেকে আগত জেলা, সিটি ও নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বারগুলোর সভাপতি, সহ-সভাপতিরা। ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার পর এখন ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণে আবারো ব্যবসা বাণিজ্যে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীর ঋণের কিস্তি দেওয়ার সক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় না বাড়ালে ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই খেলাপি হবেন, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।

এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার মেয়াদ না বাড়ালে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হবেন। মহামারিকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা এখন আরও বেশি দরকার। তা না হলে, ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম বলেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশে যেসব খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল সেখাতগুলোই এখনো প্রণোদনার ঋণ পায়নি। মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু অন্যান্য প্রণোদনা তহবিলের অর্থ প্রায় শতভাগ ছাড় হলেও, এসএমই প্রণোদনার বড় অংশ বিতরণ হয়নি।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ছোট আকারের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহা আছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম বলেন, ব্যাংকগুলো মনে করে ছোট আকারের ঋণ দেওয়া লাভজনক নয়। বড় ব্যবসা খাতে ঋণ দিলে ব্যাংকের জনবল ও খরচ কম হয়। কিন্তু এ ধারণা ভুল, বরং এতে মন্দ ঋণের ঝুঁকি বাড়ে। এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ নেই বললেই  চলে।  

দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে বেসরকারিখাতকে রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম।  

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশ অবদান রাখছে বেসরকারিখাত। তাই বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যেকোনো নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআইয়ের মতামত থাকা জরুরি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টসের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

তিনি বলেন, দেশে এখনো শুল্ক আদায়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কোম্পানি আইন, আমদানি ও রপ্তানি আইন নতুন করে হচ্ছে। এসব আইন যেন ব্যবসা বান্ধব হয় সেজন্য এফবিসিসিআই কাজ করে যাচ্ছে।  

এফবিসিসিআই সভাপতিকে প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন চেম্বারের সভাপতি ও সহ-সভাপতিরা। তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা বাস্তবতা না বুঝে নিজেদের মতো করে নীতি প্রণয়ন করে। ফলে অনেক সময় এসব নীতি বাস্তবায়নযোগ্য হয় না। ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নীতি নির্ধারণী সভায় এফবিসিসিআইয়ের মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকতে হবে।

এ সময় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, করোনা মহমারিতে বিপর্যস্ত ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যেও রাজস্ব আদায় করতে নানাভাবে তাদের নানাভাবে হয়রানি ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজিরও শিকার হচ্ছেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও জেলা পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এ কারণে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের পক্ষের মহামারি পরবর্তী উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়ছে।  

এছাড়াও অডিটে সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট বাস্তবায়ন হলে তা পুরো অর্থনীতিতে বিপর্যয় আনবে বলে মত দেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, কারখানা স্থাপনে ৩৩টি লাইসেন্সের দরকার হয়। এসব সনদ নিতে বিপুল পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হতে হয় উদ্যোক্তাদের। এ সমস্যা সমাধানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে লাভ ক্ষতি নির্বিশেষে টার্নওভার ট্যাক্সের বিধান বাতিল করে শুধু আয়ের ওপর কর আরোপের দাবি জানান তারা।  

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বেলাল, রাজশাহী ওমেন চেম্বারের সহ-সভাপতি তাহেরা হাসেন, সাতক্ষীরা চেম্বারের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোলার জাকারিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বারের সভাপতি আজিজুল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মো. এরফান আলী, পটুয়াখালী ওমেন চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইসমত জেরিন খান, বাগেরহাট চেম্বারের সভাপতি এসকে লিয়াকত হোসেইন, ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, নীলফামারী চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফারহানুল হক, লালমনিরহাট চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবির, খুলনা চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শরীফ আতিয়ার রহমান, নরসিংদী চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক আলী হোসেইন শিশির, গোপালগঞ্জ চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন, দিনাজপুর চেম্বারের সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক শামীম, বান্দরবান চেম্বারের সহ-সভাপতি লক্ষীপদ রায়, ঝিনাইদহ চেম্বারের সহ-সভাপতি মো. নাসিম উদ্দিন, দিনাজপুর উইমেন চেম্বারের সভাপতি জান্নাতুস সাফা শাহীনুর, লক্ষ্মীপুর চেম্বারের এমআর মাছুদ, সিরাজগঞ্জ চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইসহাক।

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মো. রেজউল করিম রেজনু, তাহমিন আহমেদ, প্রীতি চক্রবর্তী, মো. নিজাম উদ্দিন, আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দীন আলমগীর, হাবীব উল্লাহ ডন, এমএ রাজ্জাক খান রাজ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এসই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।