ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

কে হবেন শাবিপ্রবির সপ্তম কোষাধ্যক্ষ?

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
কে হবেন শাবিপ্রবির সপ্তম কোষাধ্যক্ষ?

শাবিপ্রবি (সিলেট): শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামীকাল সোমবার (১০ এপ্রিল)। ফলে ক্যাম্পাস জুড়ে আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা চলছে পদটি নিয়ে।

কে হচ্ছেন শাবিপ্রবির পরবর্তী কোষাধ্যক্ষ? বর্তমান কোষাধ্যক্ষই কি থাকছেন? নাকি নতুন মুখ আসছে? তা নিয়েও উঠেছে গুঞ্জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের আগস্টে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শাবিপ্রবিতে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল ষষ্ঠ কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ফলে সোমবার (১০ এপ্রিল) পূর্ণ হচ্ছে তার মেয়াদ। এ পদ পেতে অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক, ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন অনেকে সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত দৌড়-ঝাপ, লবিং তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিন জনের নাম সুপারিশ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাই কে হচ্ছেন শাবিপ্রবির পরবর্তী কোষাধ্যক্ষ- তা নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে জানার আগ্রহের শেষ নেই।

এদিকে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের এখতিয়ার। তা ছাড়া এ পদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিময় অনুযায়ী সর্বোচ্চ তিনজনের নাম সুপারিশ করা যায় । ফলে রাষ্ট্রপতি এ নামগুলোর মধ্য থেকে একজন অথবা অন্য কাউকে নিয়োগ দেবেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

শাবিপ্রবির পরবর্তী কোষাধ্যক্ষ হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে তিনটি নাম। তারা হলেন, বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন, সিভিল অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ। তাদের মধ্যে থেকে বা অন্য যেকোনো যোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিলে আগামী ৪ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সুপারিশ করা নামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও কাজের দক্ষতাই তাকে এগিয়ে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও তদ-সংশ্লিষ্টরা। এর পরে রয়েছেন বর্তমান ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন। তিনি বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান ও শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত। এর আগে হল প্রভোস্ট, সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবেও দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

তৃতীয়তে আলোচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিভিল অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ। তিনি নিজ বিভাগের প্রধান, স্কুল অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন, ভর্তি কমিটির সভাপতি, সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।

নতুন করে পদ পাওয়া নিয়ে কোষাধ্যক্ষ ড. আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোষাধ্যক্ষ হওয়ার পর আর্থিক খাতে যাতে অনিয়ম না হয়, সেদিকে সবসময় নজর রেখেছিলাম। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থিতিশীল ও ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত আমার দায়িত্ব ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে কেউ বিন্দুমাত্র কথা বলে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। এটাই আমার সবচেয়ে বড় সফলতা।

আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে টেন্ডার হতো, তাতে অনেক অস্থিরতা ও দীর্ঘ সময় চলে যেত। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ টেন্ডার ইজিপির মাধ্যমে করেছি। তাতে কাজগুলো তরান্বিত হয়েছে, ফলে বিশ্ববিদ্যালয় উপকৃত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য গবেষণায় বরাদ্দ, শিক্ষার্থীদের জন্য কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস, ক্যাফেটেরিয়া, টং, ফুডকোর্ট স্থাপনসহ অসংখ্য কাজ করেছি। আর সে কাজগুলো করতে উপাচার্য মহোদয় আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, যার ফলে কাজগুলো সহজভাবে করতে সক্ষম হয়েছি।

সার্বিক বিষয়ে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আগামীকাল সোমবার বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তিনি খুব সুন্দরভাবে কোনোরকম প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া ছাড়াই নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনো ধরণের জটিলতা ছাড়াই আমরা সুন্দরভাবে কাজ করতে পেরেছি। পরবর্তী কোষাধ্যক্ষ কে হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মহামান্য রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারভুক্ত, তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। উনারা ছাড়াও যাকে মনোনীত করে রাষ্ট্রপতি পাঠাবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তার সাথেই কাজ করব।

কোষাধ্যক্ষ পদটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৯৮৭ এর ১৪ নং ধারার উপধারা (১) অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ৪ বছরের জন্য একজন কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। এর উপধারা (৩) অনুযায়ী, কোষাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের সাধারণ তদারক ও অর্থসংক্রান্ত পরামর্শদাতা, উপধারা (৪) অনুযায়ী, সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ও বিনিয়োগ পরিচালনা, উপধারা (৬) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সব চুক্তিতে স্বাক্ষর, উপধারা (৭) অনুযায়ী সংবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য ক্ষমতাও প্রয়োগ করতে পারবেন কোষাধ্যক্ষ। এ ছাড়াও উপাচার্যের অনুপস্থিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। ফলে শিক্ষকদের কাছে এ পদটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে সকলের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের এ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাবেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।