সিলেট: সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারে (৮১ তম) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ দেব রায় অমিয়। শুধু তাই নয় ২০১৪-১৫ সেশনের লোকপ্রশাসন বিভাগের এই শিক্ষার্থী গত ২৩ মে চূড়ান্ত ফলাফলে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদেও (১৫৪ তম) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
প্রথমে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার আগে থেকেই বিসিএসের প্রতি প্যাশন ছিল। তবে প্রথমবারেই সাফল্য ধরা দিবে সেটা ভাবিনি, তাই এমন অর্জন নিঃসন্দেহে ভালো অনুভূতি দেয়। তিনি আরো যোগ করেন, সরকারি চাকরিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার অনুভূতি কিছুদিন পূর্বে ব্যাংকের সহকারী পরিচালকে (এডি) সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার সুবাদে পেয়েছিলাম। তবে বিসিএসের অনুভূতিটা সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের জন্য সরাসরি কাজ করার ক্ষেত্রে বিসিএস অন্যরকম ভূমিকা রাখবে।
ক্যাম্পাস অতিবাহিত সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাকে ক্যাম্পাসে যারা দেখেছে, তারা জানে, আমি কতটা উড়নচণ্ডী স্বভাবের ছিলাম। ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে পাশে থাকা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে উঠাবসা করেই আমার সময় কেটেছে। এ ক্যাম্পাস আমাকে দুহাত ভরে দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমি যেহেতু এমন অবস্থানে আসতে পেরেছি, তখন যে কেউ চাইলেই এখানে আসতে পারবে। তবে বিসিএস দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। তাই নিজের লক্ষ্য ঠিক করে ধৈর্য্য, শ্রম, আত্মবিশ্বাস ও সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আগালে সফলতা আসবেই।
প্রথম বিসিএসে ক্যাডার পাওয়া কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ৪১ তম আমার প্রথম বিসিএস ছিল। সেখানে প্রথম পছন্দ ছিলো প্রশাসন। পরিশ্রমের ফলে আমি তা অর্জন করতে পেরেছি। সৃষ্টিকর্তা যা দিয়েছেন তাতে আমি কৃতজ্ঞ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদেও সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। চাকরির ক্ষেত্রে কোনটা প্রাধান্য পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যারিয়ার বিষয়ক সিদ্ধান্তে আমার পরিবারের মতই প্রাধান্য পাবে। তাদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিবো। তবে, যে কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকিনা কেন আমার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য থাকবে মানুষের কল্যাণে কাজ করা।
বিসিএস প্রস্তুতির অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তুতিটা মুলত করোনাকালীন সময় থেকে শুরু হয়। অতীতে দীর্ঘসময় ঘরে বসে থাকার অভ্যাস ছিলো না। তখন পরিবার ও বিশেষ একজনের অনুপ্রেরনায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই পড়াশোনা শুরু করি। আমার সাবেক রুমমেট অসীমদা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সুবাদে তার কাছে বিসিএস সম্পর্কে অনেক ধারনা পাই। আমি মনে করি সফলতা পেতে হলে একজন ভালো মেন্টর প্রয়োজন।
অনিরুদ্ধ অমিয় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লালবাগ আবাসিক এলাকার অভিজিৎ দেব রায়ের জ্যৈষ্ঠ পুত্র, পরিবারের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার পরিবার সবসময় আমার পাশে ছিল। বাবা-মা দুইজনেই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। অর্থের সংকট থাকা সত্ত্বেও তা কখনো আমাকে অনুভব করতে দেয়নি। ফলে কখনো হতাশা জেঁকে বসতে পারেনি। তবে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার পর ২ বছর ধরে পরিবার থেকে টাকা এনে চলাটা কিছুটা হলেও হতাশাজনক ছিল।
ক্যাম্পাসের জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ক্যারিয়ার নিয়ে মনোযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আমাদের নানামুখী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে। এখানে চুড়ান্ত ভালো অবস্থানে যাওয়ার যেমন সুযোগ যেমন থাকে, তেমনি অধঃপতনেরও সুযোগ থাকে। তাই যাদের একাডেমিক পড়াশোনার চাপ কম তাদের উচ্চশিক্ষা কিংবা শিক্ষকতার ইচ্ছা না থাকলে প্রতিদিন কিছুটা সময় চাকরির পড়াশোনা করা প্রয়োজন। যা তাদেরকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখবে। তবে ফাইনাল ইয়ার বা মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের রুটিন করে পড়াশোনা দরকার। বন্ধু-বান্ধবরা মিলে গ্রুপ করেও পড়া যায়। সেক্ষেত্রে সিনিয়রদের পরামর্শের পথ সবসময়ই খোলা থাকবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করাটা আমার কাছে অনেকটা নেশার মত। করোনার সময় থেকে এই নেশা গভীরে যায়। তখন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে দেখলাম, মানুষের কাছাকাছি গিয়ে সেবা করার সবচেয়ে ভালো উপায় মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনে থেকে কাজ করা। এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য জনগণের কল্যাণে কাজ করা। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা জনগণের জন্য সহজলভ্য করাটাই আমার মুল লক্ষ্য থাকবে। তাই ভবিষ্যতে যাতে দেশের কল্যাণে নিযুক্ত থাকতে পারি এই জন্য সবার কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ প্রার্থী। ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭,২০২৩
এমএম