ঢাকা: দেশের মাধ্যমিক শিক্ষায় আলোকবর্তিকা হয়ে আছে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। ১২০ বছর ধরে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজধানীর এই প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এর মধ্যে আজ বর্ষপূর্তি উদযাপন এবং আগামীকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ‘জুড়ে থাকি আজীবন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে’। এ উপলক্ষে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
সন্ধ্যায় কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১২০ বছর পূর্তি ও ১০ যুগ পূর্তি উদযাপন আয়োজনের সূচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে ১৫০ জন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষককে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওস্তাদ ফজলু স্মৃতি হকি টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গান ও কবিতা আবৃত্তি এবং রক ব্যান্ড আর্ক হাসানের সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে৷
আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুন নাহার বলেন, আজ আমরা এক মিলনমেলায় মিলিত হয়েছি। গত ১২০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠ অনেক গুণী ব্যক্তি তৈরি করেছে। এদের মধ্যে শুধু দেশবরেণ্য ব্যক্তি নয়, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিও রয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে আজকের এই অনুষ্ঠান। এই বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য আপনারা কাজ করে যাচ্ছেন। স্কুলে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সমাধানের চেষ্টা চলছে। দুই দিনের এই বর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠান সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের ৬৩ ব্যাচের হাজী আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে গর্বিত। আমরা এখান থেকে মানুষ গড়ার শিক্ষা পেয়েছি৷ আমরা শিক্ষকদের কাছ থেকে আদর, ভালোবাসা ও শাসন সবই পেয়েছি। পাকিস্তান শাসনামলে হাতেগোনা কয়েকটি স্কুল ছিল, তার মধ্যে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ছিল অন্যতম।
আরমানিটোলিয়ান ১২০ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই স্কুলে আমরা ছোটবেলায় পড়েছি। কত শত মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই প্রাঙ্গণে। ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। আমরা সবাই মিলে স্কুলের পুরনো দিনে ফিরে যেতে চাই। এখানে অনেকেই এসেছেন, বার্ধক্য তাদের গ্রাস করেছে, কিন্তু তারা এখানে সেই শিশু বয়সের মতো উৎফুল্ল হয়ে গেছেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ছেন। অনেকে স্মৃতি হিসেবে সেই সময়কার স্কুলের রেজাল্ট কার্ড নিয়ে এসেছেন। এটাই এই আয়োজনের স্বার্থকতা বলে মনে করি।
তিনি বলেন, প্রাক্তনদের সহায়তায় স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয় আমাদের রয়েছে।
জানা গেছে, অবিভক্ত বাংলায় ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। তা দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে আজও। আর্মেনিয়ানদের স্মৃতিবিজড়িত এ স্কুলটি প্রায় আড়াই একর জমির ওপর তৎকালীন ব্রিটিশ স্থাপত্যশিল্পের আদলে নির্মাণ করা হয়।
প্রধান ফটক পেরিয়ে সুবিশাল ময়দানের পরই দৃষ্টিনন্দন লাল ইটের গাঁথুনিতে তৈরি স্কুল ভবনটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির প্রাচীন কাঠের সিঁড়ি, গ্যালারি, লাইব্রেরি ও ছায়াদায়ী দেবদারুগাছ আজও বিদ্যমান।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আরমানিটোলা হাইস্কুল তৈরি করেছে লক্ষাধিক শিক্ষাবিদ, আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী প্রভৃতি। এদের মধ্যে শুধু দেশবরেণ্য ব্যক্তি নয়, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিবর্গও রয়েছেন। রয়েছেন বিশ্বভারতীর সাবেক উপাচার্য অম্লান দত্ত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি এফআর খান, প্রখ্যাত ক্রীড়াবিদ আবদুস সাদেক, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রথিতযশা শিল্পপতি আহমেদ আকবর সোবহানের মতো সফল মানুষ। প্রসিদ্ধ এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্রীড়া জগতেও অসামান্য অবদান রেখে চলেছে।
বিদ্যালয়টিতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে দুই সহস্রাধিক ছাত্র রয়েছে এখানে।
এবারের বর্ষপূর্তির আয়োজন সবার পরিশ্রম ও সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে আরও সুন্দর, স্বচ্ছ এবং উৎসবমুখর হবে বলে আশাবাদী আয়োজকরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
জিসিজি/এইচএ/