ঢাকা: তিনতলার বামদিকের ৩০৯ নম্বর কক্ষটির ভেতরে ডজনখানেক জুতা-স্যান্ডেল। অন্ধকার কক্ষটির এক কোণে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়ছেন একজন।
শীতের সকালে পড়তে বসা ছাত্রটি বললেন, ‘দেখেন কি অবস্থা, লেখেন কিভাবে থাকি। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের সমস্যা জানুক সবাই!’
কক্ষে এসে অন্য একজন ছাত্র বলেন, ‘যারা হলে থাকি, তাদের এ সমস্যা নতুন নয়। অনেক কষ্টে হলে সিট পাই। কলেজ ক্যাম্পাসে থাকলে সুবিধা, তাই কষ্ট করেই থাকি’।
ঢাকা কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসটির অন্য কক্ষগুলোরও একই চিত্র। পাশের কয়েকটি কক্ষেও গাদাগাদি করে শুয়েছিলেন ছাত্ররা। এরই মধ্যে টেবিলে পড়ছেন দু’একজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৬ সালে নির্মিত ছাত্রাবাসটির ধারণ ক্ষমতা ১৫০ জন। ছাত্র থাকেন এর প্রায় তিনগুণ। কেবলমাত্র ক্যাম্পাসে থাকার সুবিধার কারণে কষ্ট করেই থাকছেন তারা।
ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আবাসন সংকটে ছাত্ররা হলে ঠিকমতো পড়তেও পারেন না। এরপরও চালিয়ে যেতে হয়। হলে থাকতে হলে এটুকু কষ্ট মেনে নিতেই হবে’।
আবাসন ব্যবস্থার বিপরীতে ছাত্রসংখ্যা বেশি হওয়ায় টয়লেট, পেপার রুম, টিভি কক্ষও চাপ সামলাতে পারে না। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বেলা ১১টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ছাত্রদের টয়লেটের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শফিউল্লাহ শিকদার বলেন, ২০-২৫ হাজার ছাত্রের বিপরীতে মাত্র আটটি হলে থাকতে পারছেন আড়াই থেকে তিন হাজার। ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া, খরচ বিবেচনায় নিয়ে হলে থেকেই অনেকে পড়েন ঐতিহ্যবাহী কলেজটিতে।
দক্ষিণ ছাত্রবাসটি ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেয়াল, দরজা, জানালা ভাঙা-চোরা। কোথাও কোথাও পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে।
বেশিরভাগ হলই পুরনো হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে ছাত্ররা থাকছেন বলে জানান আখতারুজ্জামান ইলিয়াছ ছাত্রাবাসের সুপার আলতাফ হোসেন।
‘আমার নিজের হলের মতোই আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস, দক্ষিণ ও উত্তর ছাত্রাবাসেরও একই অবস্থা’- বলেন আলতাফ।
তিনি বলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াছ ছাত্রাবাসে ১২২টি আসনের বিপরীতে আড়াইশ’র বেশি ছাত্র থাকছেন। এক রুমে আটজনেরও বেশি ছাত্র থাকেন। কিছুদিন আগে ২০৯ নম্বর রুমের পলেস্তরা খসে পড়েছে। এতে ছাত্ররা ঝুঁকির মধ্যেও বাস করছেন।
আলতাফ হোসেন বলেন, সবাই উপযুক্ত পরিবেশে হলে থাকতে পারলে ছাত্রদের পড়ালেখার মানও বাড়বে।
ছাত্ররা জানান, বার্ষিক দুই হাজার আটশ’ টাকা দিয়ে একজন ছাত্র হলে থাকেন। পুরনো হলগুলো ভেঙে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করে আবাসন সংকট নিরসনের দাবি জানান তারা।
ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকের তিন শাখায় সাড়ে ১১শ’ জন এবং অনার্স-মাস্টার্সের ১৯ বিষয়ে মোট ২০ হাজারের মতো ছাত্র পড়াশোনা করেন।
এর মধ্যে শেখ কামাল হলটি কেবলমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রদের জন্যই বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
আবাসন সংকটের কথা স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লাহ জানান, ক্যাম্পাসে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন ছাত্ররা। কিন্তু আসন সংকটের কারণে সবাই বরাদ্দ পান না।
পুরনো দক্ষিণ, উত্তর ও আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস ভেঙে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা গেলে ছাত্রদের আবাসন সংকটের অনেকটাই মোকাবেলা করা যাবে। এজন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কলেজ অধ্যক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এমআইএইচ/ এএসআর