ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বাস ভাঙার প্রতিযোগিতায় ঢাবি-জাবির শিক্ষার্থীরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
বাস ভাঙার প্রতিযোগিতায় ঢাবি-জাবির শিক্ষার্থীরা!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছে দেশের দুই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে ভাঙা হয়েছে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪টি বাস। হয়রানির শিকার হচ্ছে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছেন। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া ৭টি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যবহার করতে পারবে এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবির একদল শিক্ষার্থী টিএসটি এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং কয়েকটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে। এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ওই এলাকা দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরছিল।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন বাসটি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়ে। তাদের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটির পেছনের কাচ ভেঙে যায়।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহাকে ঘটনাটি জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

দুঃখ প্রকাশের বিষয়টি জাবি শিক্ষার্থীদের অজানা থাকায় ক্যাম্পাসে ফিরেই তারা রাত ১০টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। প্রায় ৩০ মিনিট অবরোধ থাকায় রাস্তার দুই পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। পরে সহকারী প্রক্টর সিকদার মো. জুলকার নাইন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাস ভাংচুরের ঘটনায় দু:খপ্রকাশ করেছেন। একথা জানার পর জাবির বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।

কিন্তু পরদিন রোববার সকাল ৬টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমন্ত বাসে ভাঙচুর চালায় জাবির একদল শিক্ষার্থী। এতে বাসের সামনের কাচ ভেঙে যায়।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একই দিন বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি বাস ভাঙচুর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এহেন কর্মকাণ্ডে হতবাক দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুব মারুফ লিখেছেন, ঢাবি তাদের এরিয়ায় আমাদের বাসের গ্লাস ভাঙছে! আমরা ডেইরি গেটে ঢাবির বাসের গ্লাস ভাঙছি! এভাবে চলতে থাকলে তো কারও বাসেই গ্লাস থাকবে না। লাভটা আসলে কাদের হচ্ছে? জাবি, ঢাবি না গ্লাস কোম্পানির?

নিলাদ্রী শেখর মজুমদার লিখেছেন, ধন্যবাদ ঢাবি এবং ধন্যবাদ জাবি। অনেক ক্ষমতাধর আপনারা। ধন্যবাদ এটা প্রমাণ করার জন্য ‘শিক্ষিত হলেই মানুষ হওয়া যায় না। ’ কার পক্ষে কাজ করতেছেন? নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে ছোট করার অধিকার নিশ্চয় আপনার নেই।

ইমরান ফয়সাল লিখেছেন, ঢাবি আর জাবি এই চিন্তা বাদ দিয়ে চিন্তা করেন আমরা সবাই জনগণের ট্যাক্সে পড়ালেখা করি। জনগণের টাকায় কেনা বাস এভাবে ভাঙতে থাকলে ভুক্তভোগী কিন্তু উভয় পক্ষই হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফুল হাসান লিখেছেন, আপনি ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর কিংবা যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ছাত্র হোন না কেন, মনে রাখবেন সত্যিকারের শিক্ষিত কেউ নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের জন্য আরেকজনকে গালি দেয় না। বাস ভাঙচুর করে না। শিক্ষিত লোকেদের আচরণ অবশ্যই মার্জিত হতে হবে, এমনকি ভিন্ন মত থাকলেও। সেটা না হলে বুঝতে হবে আপনি এখনো অশিক্ষিত কিংবা অমানুষ রয়ে গেছেন। এবার নিজেকেই জিজ্ঞাসা করুন আপনি কোনো দলের!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমাদের বাস চলাচলের বিষয়টি তারা তদারকি করবেন। আর আমরাও আমাদের ক্যাম্পাসের সামনে দিয়ে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের নিরাপত্তা দেব।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭/আপডেট ১২২২ ঘণ্টা
এসএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।