সোমবার (১ জানুয়ারি) বই উৎসব-২০১৮ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি বই। কিন্তু বইয়ের সঙ্গে যদি খাতাও দেওয়া হয় তাহলে তা সরকারের জনপ্রিয়তার আরেক মাইলফলক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সরকার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করে তৈরি করেছে ‘আমার বই’ ও লেখার জন্য ‘অনুশীলন খাতা’। এই খাতা বিতরণের ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর স্কুলগামী শিক্ষার্থীর হার সন্তোষজনকভাবে বেড়েছে। কিন্তু পরের শ্রেণিগুলোতে বিনামূল্যে শুধু বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অনেক অভিভাবকই খাতাসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ কিনতে না পারায় পড়ালেখা চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী ঝরেও যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে খাতা দেওয়া হলে নিশ্চিন্তে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতেন।
এরই মধ্যে দেশে বিদেশে বিনামূল্যের বই বিতরণের এই অভূতপূর্ব অর্জন নানাভাবে সমাদৃত হয়েছে। সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও বলেছেন, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করায় দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলমুখী হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে স্কুলে যাওয়ার এই সূচক বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আরেকটি বড় অর্জন শতভাগ শিশুকে স্কুলে আনা। কিন্তু প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগ হলেও পঞ্চম শ্রেণি শেষ করার আগেই ঝরে যায় প্রায় ২০ শতাংশ। এরপর মাধ্যমিক শেষ হওয়ার আগে আরো প্রায় ৩৮ শতাংশ ঝরে যায়। এই ঝরে পড়ার হার কমানোর উপায় খুঁজছে সরকার।
তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, মূলত দারিদ্রের কারণেই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ে। শিশুরা বিনামূল্যে বই ও বিনা বেতনে স্কুলে পড়তে পারলেও শিক্ষার অন্যান্য ব্যয় মেটাতে পারে না। এজন্য শিক্ষায় আরো বিনিয়োগ দরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাতা দেওয়ার মাধ্যমেই সেই বিনিয়োগের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হতে পারে।
তবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও যারা বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারে কাজ করছেন, তারা পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাতা, পেন্সিলসহ নানা শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করছে। ফলে এসব এনজিও স্কুলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা নেই বললেই চলে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নানা অর্জনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি পর্যায়ক্রমে বিনামূল্যে খাতা বিতরণ করা যায়, তবে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের পরের স্তরগুলোতেও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে। অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও নতুন বইয়ের সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো মূল বিষয়গুলোর সঙ্গে তিন-চারটি খাতা বিতরণ করলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে। এর মাধ্যমে দরিদ্র অভিভাবকদের শিক্ষাব্যয় কমানোর ফলে সরকারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকাসহ নানা দেশে অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা উপকরণও বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। আমাদের সরকারের পরবর্তী উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিক্ষা বাজেটে এ বিষয়ে নজর দেওয়া যেতে পারে। অন্তত শিক্ষা উপকরণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাতা বিতরণ করা যেতে পারে। যার আর্থিকমূল্য অপেক্ষা সরকারের সামগ্রিক অর্জন অনেক অনেক বেশি।
জানা যায়, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষসহ বর্তমান সরকারের নয় বছরে ২৬০ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ২৯০ কপি বই দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে সোমবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসবের মধ্য দিয়ে চার কোটি ৪২ লাখ চার হাজার ১৯৭ শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হবে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই। যা বর্তমান সরকারের অন্যতম বড় অর্জন। বিশ্বেও এক বিরল দৃষ্টান্ত।
২০১৫ সালের মে মাসে কোরিয়ার ইনচনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শিক্ষা সম্মেলনে ১৪০টি দেশের শিক্ষামন্ত্রীরা বিনামূল্যে বই বিতরণের খবর শুনে অবাক হন। আর এই মহৎ যজ্ঞের প্রশংসা করে অনেকেই বলেন, এই ৩৫ কোটি বই যদি একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া দেওয়া যায় তাহলে হয়তো পুরো পৃথিবীই প্রদিক্ষণ করা যাবে। আর এর সঙ্গে যদি খাতাও যোগ হয়; তাহলে তা হবে সরকারের জন্য আরেকটি মাইলফলক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮
এসআই