ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবিতে লাল-সবুজের বিজয়ের আমেজ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
ঢাবিতে লাল-সবুজের বিজয়ের আমেজ  স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) আপামর জনতার প্রতিবাদের যে বিস্ফোরণ শুরু হয়েছিল তার চূড়ান্ত ফল ১৯৭১ সালের মহান বিজয়। তাই ১৬ ডিসেম্বর দিনটির স্মরণে প্রতিবছর নানা আয়োজনে বিজয় উদযাপন করে থাকেন বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ।

মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে সে উৎসবের শুরু হয়। শেষ হয় দিনব্যাপী নানা আয়োজনে।

দেশব্যাপী এক মহাযজ্ঞে পালিত হয় মহান বিজয় দিবস। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সব আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিজয় দিবসে উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। নানান শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণা, উচ্ছ্বাস এবং উল্লাসের মাধ্যমে লাল সবুজের বিজয়ের আমেজ ফুটে ওঠে ঢাবিতে।  

এ উদযাপন দেশবাসীর মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করার পাশাপাশি তাদের ত্যাগের মহিমা শিক্ষা দেয় বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে, বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়স এবং শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ঢাবির সবুজ ক্যম্পাস। আসা বৃদ্ধ-বণিতার চোখে-মুখে আনন্দ এবং গায়ে লাল-সবুজ রঙের পাঞ্জাবি। শিশু ও রমণীর গালে আঁকা জাতীয় পতাকা। অনেকে আবার মাথায় বেঁধেছেন জাতীয় পতাকা। কেউ আবার ‘মহান বিজয় দিবস-২০১৮’ লেখা ব্যাজ কপালে বেঁধেছেন। সেসঙ্গে মাইক এবং সাউন্ডবক্স থেকে ভেসে আসছে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ তথা দেশের গান। আসা কচি-কাচা থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, যুবক, বৃদ্ধ সবার মধ্যে বিজয়ের আমেজ বিরাজ করছে। উচ্ছ্বাসে উল্লাসে পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস।

এ বছর বিজয়ের ৪৭ বছর পূর্ণ করে ৪৮ এ পা রাখছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর ঢাবি কর্তৃপক্ষ বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করে দিবসটি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র বিজয় দিবসের আমেজ। কার্জন হল, কলা ভবন, স্মৃতি চিরন্তন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবনসহ সব একাডেমিক, প্রশাসনিক ভবন ও হলগুলোতে বিজয়ের রঙে রাঙাতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাল, সবুজ, নীল রঙের আলোয় ছেয়ে গেছে গোটা ক্যাম্পাস। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান স্মৃতি চিরন্তন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ স্থাপনাগুলোতে নেয়া বিশেষ সাজসজ্জা।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র টিএসসিতে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত বিশালাকার জাতীয় পতাকা। লাল-সবুজ রঙের পাঞ্জাবি এবং সবুজ রঙের শাড়ির সঙ্গে লাল রঙের ব্লাউজ পড়া বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় ঢাবি ক্যাম্পাসে। বাবা-মায়ের হাত ধরে আসছেন শিশুরাও। শিশুদের গায়ের রঙিন পোশাকে পতাকার রঙ সেখানে বিজয় দিবসের তাৎপর্য ফুটিয়ে তুলেছে। অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের ঘুরে ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেখাচ্ছেন। ঐতিহাসিক বটতলা, মধুর কেন্টিন, ডাকসু, সোপার্জিত স্বাধীনতা, অপরাজেয় বাংলা, রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হলের গণকবর ইত্যাদি দেখাচ্ছেন তারা।

দেখা হলো সুদূর সাভার থেকে আসা ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি তার ১২ বছরের ছেলে নাজমুল হাসানকে দেখাচ্ছেন ঢাবির ঐতিহাসিক বটতলা। যেখানে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। তিনি নাজমুলকে হাতে ধরিয়ে ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। শোনাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কথা।  

জানতে চাইলে ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, বাচ্চাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে ইতিহাসের সঙ্গে তাদের পরিচিত করা দরকার।  

অভিব্যক্তি জানতে চাইলে ছেলে নাজমুল বলেন, বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসে খুব ভালো লাগছে। বাবা বিভিন্ন গল্প বলছেন।

বিজয় দিবস উদযাপন নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আল আমিন বলেন, নানান রঙে, চিত্রে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাস। ভেসে আসছে দেশাত্ববোধক এবং বিজয়ের গান। এগুলো ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের বিজয়কে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এ উদযাপন আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করে।

বিজয় দিবসে দেশের জন্য নিজের কর্তব্যগুলো ভালোভাবে পালন করার কথা জানিয়ে রোকেয়া হলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করতে নিজেদের মহামূল্যবান জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। আমরা তাদের সেই দেশকে ভালো রাখতে নিজেদের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করে যাবো। তবেই তাদের রক্তের ঋণ হয়তো কিছুটা শোধ হবে।

এদিকে, সকালে সাভারের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাবি। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

সকাল ১০টা থেকে ‘একটি মানচিত্রের জন্ম’ শীর্ষক দিনব্যাপী দুর্লভ চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করে ঢাবি সাংবাদিক সমিতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
এসকেবি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।