স্থানীয় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা জানিয়েছে, প্রতিবছর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য এখানকার কলেজ-মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেয়।
জানা গেছে, উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা ২৩ হাজার ৪০২ জন।
সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের মিরুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখা চালু করার পর সেটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানটির একাদশ শ্রেণীর প্রাথমিক পাঠদান অনুমতি ও স্বীকৃতি বাতিলের জন্য হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে কলেজটি একাডেমিক স্বীকৃতি পেয়ে এমপিও ভুক্তির সব নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে। তারপরও একই বছর এমপিওর জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। সে মোতাবেক গত কয়েকদিন আগে ঘোষিত এমপিওর তালিকায় তা প্রকাশ পায়।
ওই কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতির অনুমতি প্রদানের আদেশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২২ জুন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. লিয়াকত হোসেন এ প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক স্বীকৃতির অনুমতি দেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ২০১৬ সালের ফলাফলে পাসের হার ৫৬ হলেও ২০১৯ সালে এ হার ছিলো মাত্র ২০ শতাংশ।
মিরুখালী কলেজের অধ্যক্ষ মাহাবুবুল হক বাংলানিউজকে জানান, কোনো একটি নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য সেই এলাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যটির দূরত্ব ন্যূনতম ৬ কি.মি. ও ৭৫ হাজার জনসংখ্যা থাকার কথা। কিন্তু এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব সর্বোচ্চ ৮শ মিটার ও ওই ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ২৩ হাজার ৪০২ জন।
মিরুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ শাখা চালু করতে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অধ্যক্ষ মাহাবুবুল হক।
জানা গেছে, সদ্য এমপিও তালিকাভুক্ত এ কলেজটির এমপিও বাতিলের দাবিতে মিরুখালী কলেজ অধ্যক্ষ মাহাবুবুল হক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন করেছেন। ওই আবেদন সূত্রে জানা গেছে, মিরুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত ২০১৩ সালে এর একাদশ শ্রেণি খোলা হয়। এতে পার্শ্ববর্তী মিরুখালী কলেজের দূরত্ব ৮শ মিটার হলেও দেখানো হয়েছে ৪ কি.মি.।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর সোবহান শরীফ বাংলানিউজকে জানান, জনসংখ্যা ও দূরত্বের দিক থেকে এখানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠান চাহিদার থেকে বেশিই হয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি এখানের মিরুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজটির এমপি দিয়ে এলাকায় আরো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখানের এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী সংগ্রহে বেশ বেগ পেতে হয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাঙ্খিত শিক্ষার্থী নাই।
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানান, এসব কলেজ একটি অপরটির প্রায় কাছেই এবং এর একটি থেকে অপরটিতে হেঁটেই যাওয়া যায়। এর সর্বোচ্চ ভাড়া ১০ টাকার বেশি নয়।
উপজেলার মিরুখালী, দাউদখালী, টিকিকাটা ও ধানীসাফা- এ ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৯৮ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে একটি কলেজের প্রাপ্যতা দেখানো হলেও নতুন এমপিও ভুক্ত ওই প্রতিষ্ঠানটি মিরুখালী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। আর অন্য ইউনিয়নগুলোর প্রত্যেকটিতেও রয়েছে একাধিক উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুনীল চন্দ্র সেন বাংলানিউজকে জানান, সেখানে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওর খবরটি আমি শুনেছি। সেটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এর আগে কলেজটি পাঠদান অনুমতি দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে খুশি হয়েই অনুমতি দিয়েছেন।
এ ব্যাপরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিএম সরফরাজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, এমন নিকটবর্তী দূরত্বে নতুন প্রতিষ্ঠান থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে সুপারিশের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
এসএইচ