ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের অবস্থানরত এলাকায় মোবাইলে পাঠদান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২০
শিক্ষার্থীদের অবস্থানরত এলাকায় মোবাইলে পাঠদান ফইল ফটো

ঢাকা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে স্থানান্তর ঘটা শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে অবস্থানরত এলাকায় মোবাইলে পাঠদান নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

এছাড়াও, সংসদ টিভিতে প্রচারিত ক্লাসে যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারছেন না তাদের সুবিধার্তে স্থানীয়ভাবে ক্যাবল টিভির মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও বলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব মো. তাজুল ইসলাম (প্রশাসন)।

গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য সংসদ টিভিতে পাঠদান শুরু করা হয়েছে। তবে করোনার কারণে স্থানান্তর ঘটা এবং সবার টিভির ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে যাচ্ছে কিছু শিক্ষার্থী।

কী পরিমাণ শিক্ষার্থী স্থানান্তরিত হয়েছে বা সংসদ টিভির ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তার সংখ্যা নিরূপণের কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব তাজুল।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখনও স্থানান্তরিত শিক্ষার্থীর তথ্য পাইনি। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আস্তে আস্তে এগোচ্ছি।

মঙ্গলবারও জেলা শিক্ষা প্রাথমিক অফিসারদের সঙ্গে অনলাইনে সভা করে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গত ২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষার সব বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও মেহেরপুর, মৌলভীবাজার এবং পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে অনলাইন সভা করেন অতিরিক্ত সচিব তাজুল ইসলাম।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের ফলে যেসব শিক্ষার্থীর স্থানান্তর ঘটেছে তাদের চিহ্নিত করে বর্তমানে অবস্থানরত এলাকার মোবাইল পাঠদান নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির নির্বধারিত মোবাইল নম্বর ছাড়াও বিকল্প আরেকটি নম্বর সংগ্রহ করা যেতে পারে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।  

‘সংসদ টিভির পাঠদান কার্যক্রম যাতে শিক্ষার্থীরা দেখে সে ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার (ইউএনও) সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে কেবল টিভির মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ’

এছাড়াও, ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, শিক্ষকদের ১৫ দিন পরপর শিক্ষার্থীর পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করে আপেক্ষিক মূল্যায়ণ এবং মূল্যায়ণের জন্য ডায়েরি সংরক্ষণ করাবেন। এতে বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষকরা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তাদের প্রতি অধিকতর যত্মশীল হতে পারবেন।

আনন্দের সঙ্গে পাঠদানের অন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে মোবাইল ফোন বা ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যেতে পারে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়।

‘শ্রেণিশিক্ষকরা বিষয়ভিত্তিক রুটিন করে নির্দিষ্ট শ্রেণির ৬-১০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিদিন পাঠদানের বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলবেন। অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করে সুবিধাজনক সময় নির্ধারণ করে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা পাঠদানের ব্যবস্থা করা। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ’

বিভাগীয় উপ-পরিচালকরা তার আওতাধীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সভা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।  

ইআরসি ইন্সট্রাকটররা বিষয়ভিত্তিক ১৫-২০ জন শিক্ষকের গ্রুপ করে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া অব্যাহত রাখবেন। পরবর্তীতে অনলাইনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হলে তা সহজ ও গতিশীল হবে বলে জানানো হয়।  

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার জেলার বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের কাজের তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাবেন। জেলা প্রশাসক বিদ্যালয়ের মেরামত কার্যক্রম মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। আর প্রধান শিক্ষক ১৫ দিন পর পর বিদ্যালয়ের কক্ষগুলো ও বিদ্যালয় আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অভিভাবকদের সচেতন করতে এসএমসিকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।  

শিক্ষকদের সেলফ মোটিভেটেড হয়ে দরিদ্র ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পরিবারকে সাহায্য/ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রাখা এবং মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও করোনা মোকাবিলায় যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তা স্থানীয় প্রশাসনকে সময়ে সময়ে অবহিত করতে হবে বলে জানানো হয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন এরআগে গত ১৮ জুন মাগুরা ও মেহেরপুর জেলার শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করেন। এ দু’টি জেলার মেন্টরদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, সার্বক্ষণিক তদারকি এবং গৃহীত কার্যক্রমের ফলে প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন হয়েছে।

এরপর গত ২ জুলাই অতিরিক্ত সচিব তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভা থেকে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দুই জেলার কার্যক্রমগুলো প্রতি বিভাগের কমপক্ষে একটি জেলায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা শ্রেণি শিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে বিষয়ভিত্তিক পাঠদানসহ যে কোনো সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এজন্য সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে সংরক্ষিত আছে।

এছাড়া শিক্ষকদের মোবাইল নম্বর প্রত্যেক শিক্ষার্থী/অভিভাবকের কাছে পাঠানো নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রত্যেক শ্রেণি শিক্ষক তার শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গ্রুপে বিভক্ত করে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন।  

শ্রেণিশিক্ষক বিষয়-শিক্ষকরা শিক্ষার্থী/অভিভাবকদের সঙ্গে লেখাপড়া সংক্রান্ত প্রতিদিনের ফোনালাপের পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে প্রধান শিক্ষকের কাছে সরবরাহ করছেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২০
এমআইএইচ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।