ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন: আ.লীগ বনাম ‘মোজাম্মেল’ পরিবার 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন: আ.লীগ বনাম ‘মোজাম্মেল’ পরিবার  মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ও মাসেদুল হক রাশেদ

কক্সবাজার: কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ঘরনার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অভিযোগ তুলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) মেয়র পদপ্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের কপাল খুলেছে বলে ধারণা করছেন অনেক ভোটার।

 
যদিও শুরু থেকে রাশেদ দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে নিয়ে কাঁদা ছোড়াছুড়িতে নির্বাচনী মাঠ গরম হয়ে ওঠে। যে কারণে অনেকে ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন।  

শুধু তাই নয়,নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে দুই প্রার্থীর কর্মী-সর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মাসেদুল হক রাশেদ এবং তার পক্ষ প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় বেশ রাশেদের দুই ভাইসহ কয়েকজন নেতাকে আ.লীগ থেকে বহিষ্কার এবং নানামুখী চাপ তৈরি করা হয়েছে। তারপরও বিদ্রোহী রাশেদকে দমাতে পারেনি আ.লীগ।  

কক্সবাজার পৌরসভায় বরাবরই বিএনপি-জামায়াত সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। এবারের নির্বাচনে এ দুই দলের কোনো প্রার্থী না থাকায় সে সুযোগ কাজে লাগাতে চায় আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। অবশ্যই আ.লীগের প্রার্থীও দুইদলের ভোট আদায়ে কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছেন।  

কক্সবাজার শহর ও জেলা আওয়ামী লীগে রাশেদের পরিবারের একক কর্তৃত্ব দীর্ঘদিনের। রাশেদের বাবা প্রয়াত একেএম মোজাম্মেল হক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি পরপর দুইবার চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর ২০১৮সালের পৌরসভা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মোজাম্মেল হকের ভাতিজা মুজিবুর রহমান মেয়র নির্বাচিত হন। নানা কারণে এবার দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হন মুজিবুর। মনোনয়ন পান পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের তিনবারের কাউন্সিলর ও জেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।  

আ.লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, সম্প্রতি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে রাশেদের ছোট ভাই সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের কাউন্সিলে সভাপতি হন নজিবুল ইসলাম। এতে তাদের পথের কাঁটা মনে করে মুজিবুর রহমানকে। এ নিয়ে মোজাম্মেল পরিবার মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। তারা যেকোনো ভাবে মুজিবুরকে ঠেকানোর ঘোষণা দেন।  

মোজাম্মেল হকের চার ছেলে ও এক মেয়ে। সবাই দলের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ পদে আছেন। বড় ছেলে মাসেদুল হক রাশেদ সদ্য বিলুপ্ত (বর্তমান পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি) জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, শহীদুল হক সোহেল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, শাহীনুল হক মার্শাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,ছোট ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল এবং একমাত্র মেয়ে তাহমিনা হক লুনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি।  

এদের মধ্যে শহীদুল হক সোহেল ছাড়া সবাই রাশেদের পক্ষে নির্বাচনে মাঠে নেমেছেন। বোন লুনা ভাইয়ের জন্যে দলীয় পদ ছেড়েছেন।  
বিদ্রোহী প্রার্থী রাশেদের দাবি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাকে হারানো যাবে না। তিনি মনে করেন,আ.লীগের পাশাপাশি বিএনপি ও অন্য দলের লোকজন তাকেই ভোট দেবেন। তিনি ৪০ বছর পর বাবার পদে বসে জনগণের সেবা করতে চান বলে জানান।  

রাশেদের ভাই শাহীনুল হক মার্শাল বলেন,‘আ.লীগ স্থানীয় এবং যোগ্য লোককে প্রার্থী করেনি। এ জন্য তারা বহিরাগত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।  
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,প্রয়াত মোজাম্মেল হক সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা। কিন্তু তার সন্তানরা দলীয় আদর্শ বিচ্যুত হয়ে দলের ক্ষতি করে যাচ্ছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই মাহবুবকে মনোনয়ন দিয়েছেন।  

জেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন,দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় তারা দল ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ ও শত শত টাকার মালিক বনেছেন। এখন কালো টাকা ব্যবহার করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি হতে চান।  

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন,‘আমি পৌরবাসী ও দলের কাছে পরীক্ষিত ব্যক্তি। সব দল ও বর্ণের মানুষ আমার কাছে নিরাপদ। আশা করি সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও মাদকের বিরুদ্ধে সুন্দর পর্যটন নগরী গড়তে মানুষ আমাকেই বেছে নেবে।  

১২ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কক্সবাজার পৌরসভার এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮০২ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন পাঁচ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৬ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৫৬জন।  
আগামী ১২ জুন ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে।  

কক্সবাজার পৌরসভার সবশেষ নির্বাচন হয় ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। ওই নির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২৩ 
এসবি/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।