সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার সিঁদ কাটার গুঞ্জন নতুন নয়। বিগত ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পরাজিত হন।
এবার সিসিক নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার পর নৌকা প্রত্যাশীরা পরোক্ষভাবে বিপক্ষে কাজ করতে পারেন, এমন গুঞ্জন ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা ঘন ঘন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সিলেট সফর করায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নামেন। এরপরও নীরবে নিভৃতে কেউ কেউ লাঙ্গলের প্রার্থীকে মৌন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এমন অভিযোগ রয়েছে মাঠ পর্যায়ে। এবার সেই শঙ্কা যেনো সত্যি হলো।
সিসিক নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত দরখাস্ত করেছেন নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক এ কে এম আবু হুরায়রা সাজু।
সোমবার (১২ জুন) বিকেলে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগটি দাখিল করেন সিলেট নগরের নরসিংটিলা এলাকার বাসিন্দা সাজু। মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরের পর বিষয়টি জানাজানি হয়।
নৌকার প্রার্থীর আনোয়ারুজ্জামান দাখিলকৃত হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন দাবি করেন ওই যুবলীগ নেতা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী হলফনামায় জন্ম তারিখ ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি অসত্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। এর ফলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হোক।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার হলফনামায় জন্ম তারিখ ১৯৭০ সালের ১ জুলাই এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ (সম্মান) উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি ১৯৮৮ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৮৪২০৮ এবং শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৬-১৯৮৭। রেজিস্ট্রেশন, প্রবেশপত্র ও সনদপত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ ১৯৭২ সালের ১ জুলাই।
অভিযোগে বলা হয়, পরবর্তী সময়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার জন্ম তারিখ পরিবর্তন করার জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড বরাবর আবেদন করেছিলেন, যা বোর্ড কর্তৃপক্ষ নামঞ্জুর করে।
এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৯৯০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই বাংলাদেশ ইয়ুথ প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাজ্যে যান এবং সেখানে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশে কোনো প্রকার পড়াশোনা কিংবা পরীক্ষায় অংশ নেননি। এ ছাড়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পাসপোর্টের জন্ম তারিখের সঙ্গে এসএসসির সনদে উল্লেখিত জন্ম তারিখে গরমিল আছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযোগকারী যুবলীগ নেতা এ কে এম আবু হুরায়রা সাজু নগরের ৯ নম্বর যুবলীগের আহ্বায়ক। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা বিধান গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের ছেলের মুনিমের বন্ধু। তাই বন্ধুর বাবার জন্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে অভিযোগ দাখি করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের আগে অভিযোগ পেলে তথ্য যাচাই-বাছাই করা যেত। এখন আমাদের আর কিছুই করার নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এনইউ/এসএম