ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইসিতে সুষ্ঠু বিচার কমই পাই: হিরো আলম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
ইসিতে সুষ্ঠু বিচার কমই পাই: হিরো আলম

ঢাকা: আলোচিত ইউটিউবার মো. আশরাফুল হোসেন (হিরো আলম) বলেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এলে সুষ্ঠু বিচার খুব কমই পাই। আগেও দু’বার প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেছিলাম।

একবারও পাইনি। তবে আশা রাখছি।

মঙ্গলবার (২০ জুন) নির্বাচন ভবনে ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল দায়েরের পর তিনি এ কথা বলেন।

স্বতন্ত্র থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সই থাকতে হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা সেই এক শতাংশ ভোটারের সই দৈবচয়নের ভিত্তিতে যাচাই করার সময় সত্যতা না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এরপর বগুড়া উপ-নির্বাচনেও একই কারণ দেখিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা দু’বার তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন। এরপর আপিল করলে তা দু’বারই খারিজ করে দেয় ইসি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, আজকে আপিলের জন্য আবেদন করেছি। কতটা পাবো (প্রার্থিতা) জানি না, কারণ এর আগেও দুইবার বাতিল হলে এখানে আবেদন করেছিলাম। একবারও পাইনি। দুইবার হাইকোর্ট থেকে পেয়েছিলাম আরকি। তাও আবার আশা রেখে এখানে জমা দিয়েছি। বাদ বাকিটা এখন আপিলে যা করে, আপনারা তো বুঝতেই পারছেন। এখানে এলে সুষ্ঠু বিচার খুব কমই পাই। আশা রাখছি। তবে এখানে না পেলে অবশ্যই হাইকোর্টে যাবো।

নিয়ম রক্ষার জন্যই এখানে এলেন এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, এখানে নিয়ম রক্ষার জন্যই আসতে হবে। আমরা চাইলেও হাইকোর্টে যেতে পারবো না। এখানে না পেলেই হাইকোর্টে যেতে হয়।  

কেন প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে এটা আসলে সবাই জানে। সেটা আমরা একার না, স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা আছে তাদের সবারটা বাতিল করেছে। তবে একেক জনেরটা একেক কারণে বাতিল হয়েছে। তবে কারও এক শতাংশ ভোটের সমর্থনসূচক সই না থাকার কারণে বাতিল করা হয়েছে। ঢাকা শহরে যে এলাকাগুলো নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের খুঁজতে গিয়েছিল, সেখানে ভোটারদের আসলে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ ঢাকা শহরে একজন আরেকজনের বাসা খুব সহজে চেনে না। এখানে কর্মজীবী মানুষ বেশি। তারা টার্গেট করে গেছে বস্তি এলাকায়। এজন্য তারা অনেকে বলছে খুঁজে পায়নি। এছাড়া পুলিশ সহকারে গেছে, এজন্য অনেকে বাসায় থাকলেও বলছে বাসায় নেই।  

তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনও আমার সঙ্গে লোক ছিল। তাদের (রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন) কাছে সেটা বলেছিলাম। কিন্তু তারা আপিল করার জন্য বলেছিল। এখন আপিল করলাম। বাদ বাকিটা কতটা পাবো জানি না।  

আরেক প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, অনেকেই মনে করে এখানে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নাই। এখানে এলিট শ্রেণি বেশি। ঠিক আছে, আপনাদের কথাই মেনে নিলাম। কিন্তু একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখেন না, এক শ্রেণির লোক তো আমাকে ভালোবাসে, যেমন বস্তিবাসী আমাকে ভালোবাসে, তাদের মাঝে ছেড়ে দিয়ে দেখেন না। সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখেন না, এলিট শ্রেণির লোকজন ভোট না দিল, বস্তিবাসীর ভোট নিয়ে লড়তে পারি কিনা।

তিনি বলেন, হাইকোর্টে ফিরে না পেলে সুপ্রিম কোর্টেও যদি পথ থাকে, সেখানে যাবো। তারপরও যদি না দেওয়া হয়, তাহলে মনে করবো যে ইচ্ছা করে আমাকে দেওয়া হলো না।  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, পরিবেশ দেখে চিন্তা করতে হবে। প্রতিটা লোকের দাঁড়ানো অধিকার আছে। দাঁড়ানো তো কোনো বিষয় না। কিন্তু এই যে আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি, হয়রানি করে ধরেন হাইকোর্ট থেকে ফিরে আসলাম কিন্তু ফলাফল জিরো এলো,  এ নির্বাচন দেখে সিদ্ধান্ত নেবো।

দল থেকে কেন নির্বাচন করেন না এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সবার সমর্থন পাওয়া যায়। আর দলীয় প্রার্থী হলে একজন, আরেক জনের দোষারোপ করে। আমি তো হিরো আলম মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এতো দুর এসেছি। সেই হিসেবে ভালোবাসা নিয়েই থাকতে চাই। জনগণের পাশে থাকতে চাই, জনগণের ভালোবাসার মাঝেই থাকতে চাই।  

তিনি বলেন, ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখানে একটা শক্তিশালী প্রার্থী দেখান তো, যে তিনি আছেন, তিনি এসে লড়ছেন। এখানে কী আছে- হিরো আলমের একটা দর্শক আছে। সেই দর্শকের ভয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।  

নির্বাচন এলেই গরু চুরি, পরকীয়া এসব অভিযোগ তোলা হয়। আমার তো মামলা নেই, কারো মাথায় পিস্তল ঠেকায়নি, বিদেশে টাকা পাচার করিনি, কারো ক্ষতি করিনি কোনো সাইডেই কিন্তু আটকাতে পারেনি। খালি এক শতাংশ ভোটারের বিষয়টি দেখিয়েছে। এজন্যই আমাকে ষড়যন্ত্র করে ভয়ভীতি দেখিয়ে, হেয় করে মাঠ থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।  

গত ১৮ জুন নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) মনোনয়ন বাছাইয়ের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, মোট ১৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এরমধ্যে বাছাইয়ে সাত জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। অবশিষ্ট আটজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।  

যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে, তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরপন্থি সিকদার আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. রেজাউল ইসলাম স্বপন, গণতন্ত্রী পার্টির মো. কামরুল ইসলাম (চেয়ারম্যান মনোনয়ন দিয়েছে), গণতন্ত্রী পার্টির অশোক কুমার ধর (মহাসচিব মনোনয়ন দিয়েছে), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আকতার হোসেন ও তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান।  

যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা হলেন- জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থি মো. মামুনূর রশিদ, মো. তারিকুল ইসলাম ভূঞাঁ (স্বতন্ত্র), আবু আজম খান (স্বতন্ত্র), আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম), মুসাউর রহমান খান (স্বতন্ত্র), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. মজিবুর রহমান ও শেখ আসাদুজ্জামান জালাল।  

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ জুন। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ জুন। ভোটগ্রহণ হবে ১৭ জুলাই।  

গত ১৫ মে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।