ঢাকা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুণ অর রশিদ বলেছেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বক্তব্য আর বিএনপির বক্তব্যের মধ্যে পার্থক্য নেই।
বুধবার (০৪ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত ‘অবাধ ভোটাধিকার: প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক হারুণ অর রশিদ বলেন, ‘১৯৭৩ সালের পর থেকে এই কমিশন (প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন) বেস্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এটা অনেকেই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বলবেন না, যারা সুশীল সমাজ নিজেদের দাবি করেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার একটি পত্রিকায় বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা নাই। উনি নাগরিক সমাজের হয়ে বলেছেন, ওনার আস্থা নাই। কাজেই ওনার বক্তব্য আর বিএনপির বক্তব্যে কোনো পার্থক্য আছে? কাজেই বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সোসাইটি আছে, সিভিল সোসাইটি নাই। ’
এ নিয়ে ড. বদিউল আলমের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি তো মনে করেছিলাম, উনিও (হারুণ অর রশিদ) নাগরিক সমাজের অংশ। আর উনি যে এই বক্তব্য দিয়েছেন, এটাও প্রমাণ করে যে নির্বাচন কমিশনের আস্থার সংকট। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমার বক্তব্য দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন যে দুটো দলকে নিবন্ধন দিল, সেই দুটো দলকে তো কেউ চেনে না। সাংবাদিকরাও চেনে না। কাজেই এটাও আস্থার সংকটের বিষয়টিই প্রমাণ করে। ’
আলোচনায় হারুণ অর রশিদ আরও বলেনন, সমস্যার ভেতরে যদি আমরা না যাই আর যদি উপর থেকে সমাধানের চেষ্টা করি তাহলে তো হবে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে টানাপোড়েন দেখছি এর মূলে কী? এর মূলে হচ্ছে দুটি পরস্পর বিরোধী আদর্শে বিভক্তি এবং পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক... একটি ধারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আরেকটি হচ্ছে বিপক্ষের। এই ধারার সৃষ্টি হয়েছে ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর। এর ধারবাহিকতায় আমরা যে অবস্থানে দাঁড়িয়েছি, এই সব বিষয় বাদ দিয়ে বিশ্লেষণ করলে হবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে কখন থেকে? স্বাধীনতা পর ’৭৩ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে ’৭৫ সাল থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত দুজন জেনারেল সেনাবাহিনী থেকে এসে নির্বাচন ব্যবস্থা যেটা গড়ে ওঠার কথা ছিল, সেটাকে সমূলে ধ্বংস করেছে। সেনা শাসকরা এটা জেনেশুনে করেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। জাতীয় রাজনীতিতে এর কিন্তু একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, অবাধ সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলাম। জামায়াত নিবন্ধন না থাকলেও পার্টি অবস্থায় আছে। ২০১৪ সালেও নিবন্ধন ছিল না, নির্বাচন শুধু বর্জন করে নাই। প্রতিহত করার কার্যক্রম করেছে। কাজেই যুদ্ধাপরাধীর দল বহু আগেই নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, প্রধান বিরোধী দল হলো বিএনপি। এখন বিএনপি বলে ইসি, সরকারের পদত্যাগ চাই। সংবিধান, সরকার, ইসি কোনোটাই মানে না। তারা চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু এটা নষ্ট করেছে কে? কে এম হাসান যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হতে পারেন সেজন্য প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানো হয়েছিল। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায় হলো, বিএনপি ও জামায়াত। জনগণই সব ক্ষমতার মালিক। তারা কি এটা বিশ্বাস করে? যদি তাই হতো তাহলে ২০১৪ সালের ঘটনা কীভাবে হলো? বিএনপি চায় এক দফা। এটার বাস্তব অবস্থা নাই। এটা সফল হবে না। বিএনপির এখন দুটি করণীয়। প্রথমত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, দ্বিতীয়ত বর্জন করা। কিন্তু বর্জন করা অধিকার, তবে প্রতিহত করার অধিকার নাই।
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরও বলেন, নির্বাচন এলেই কেবল ইসিকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু ইসি তো একটা অংশ। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা ইসির পক্ষে সম্ভব নয়, অন্যরা সহায়তা না করলে। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সবার প্রচেষ্টা না থাকলে সম্ভব না।
এবারের নির্বাচনে দেশি-বিদেশি সবার দৃষ্টি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার আমাদের একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। এটা পুরো জাতির শপথ হওয়া উচিত। বিশেষ করে সরকারি দল প্রধানের কাছে ইসির কামনা করতে হবে যেন প্রার্থীদের মেইনটেন করেন। এজেন্ট কতটি দল দিল, সেটা আগে জানতে হবে। কেননা, এজেন্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্য নির্বাচন কমিশনার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২৩
ইইউডি/এমজেএফ