ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সিলেটের ৪ উপজেলায় ১৭৪ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, থাকছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৪
সিলেটের ৪ উপজেলায় ১৭৪ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, থাকছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা কেন্দ্রে যাচ্ছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: রাত পোহালেই ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ। বুধবার (০৮ মে) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছে মাঠ প্রশাসন।  

প্রথম ধাপে সিলেট জেলার সদর, দক্ষিণ সুরমা, প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ চার উপজেলায় তিনটি পদে মোট ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  

চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন রয়েছেন ভোটযুদ্ধে। ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে থেকে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রেখেছেন প্রার্থীরা।

চার উপজেলায় ৩০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ১৭৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ধরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশ। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ছয় হাজারের বেশি পুলিশ ও আসনার সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।  

ভোটে আড়াই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য, সাড়ে তিন হাজারের বেশি আনসার সদস্য ও চারজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। এর বাইরে বিজিবি ও এপিবিএন সদস্যরাও মাঠে থাকবেন।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন দুই উপজেলায় ১২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে সদরে ৬২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৭টি সাধারণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। দক্ষিণ ‍সুরমা উপজেলায় ৬৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টি সাধারণ ও ৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন দুই উপজেলায় ১৭৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯০টি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টি সাধারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৬৩টি। বিশ্বনাথ উপজেলায় ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সাধারণ ৪৭টি ও ঝুঁকিপূর্ণ ২৭টি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, জেলা পুলিশের আওতাধীন গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে পাঁচজন ও সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে চারজন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সঙ্গে প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন আনসার সদস্য ছাড়াও বিজিবি সদস্যরা থাকবেন।

সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথে ১৭৭ কেন্দ্রের মধ্যে ৯০টি ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সুফিয়ান বলেন, গোলাপগঞ্জ-বিশ্বনাথে এক হাজার ২৪৭ জন পুলিশ সদস্য এবং দুই হাজার ১২৪ জন আনসার সদস্য থাকবেন।

তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে পাঁচজন এবং সাধারণ কেন্দ্রে চারজনের ফোর্স স্ট্যান্ডবাই থাকবে। গোলাপগঞ্জে ২১টি ও বিশ্বনাথে ১৬টি মোবাইল টিম থাকবে। প্রতিটিতে পুলিশের পাঁচজন করে সদস্য থাকবেন।

গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথে চারটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। প্রতিটিতে ১০ জন পুলিশ সদস্য থাকবেন। দুই উপজেলায় ডিবির ছয়টি টিম থাকবে। উপজেলা দুটিতে এপিবিএনের ১০ জনের দুটি টিম থাকবে। সঙ্গে থাকবে বিজিবিও।

স্ট্রাইকিং টিমের সঙ্গে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকছেন। এর মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১২ জন ও বিশ্বনাথ উপজেলায় নয়জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। দুটি উপজেলায় দুজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।   

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহানগরের আওতাধীন সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১২৫টি কেন্দ্রে এক হাজার ২৭৫ জন পুলিশ ও এক হাজার ৬২৫ জন আনসার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।  

সিলেট সদর উপজেলায় ৬২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৭টি সাধারণ এবং ৪৫টি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ধরা হয়েছে। আর দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৬৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টি সাধারণ ও ৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ধরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।   

তিনি বলেন, দুটি উপজেলায় সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন করে পুলিশ সদস্য স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। সেই সঙ্গে ১৩ জন করে আনসার সদস্য থাকবেন। প্রতি তিনটি ইউনিয়নে ছয়জনের করে ১৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। তিনটি করে কেন্দ্রে মোবাইল টিম টহল দেবে।  

এর বাইরেও সিআরটি, সাদা পোশাকে পুলিশ, বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার রোধে পুলিশের সাইবার টিমও তৎপর থাকবে। এরপরও কেউ নির্বাচন ব্যবস্থা ব্যাহত করতে চাইলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, সিলেটের চারটি উপজেলায় নির্বাচনে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের দিন দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচনে সিলেটের চারটি উপজেলায় চারজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় সাতজন, দক্ষিণ সুরমায় আটজন, গোলাপগঞ্জে ১২ জন এবং বিশ্বনাথ উপজেলায় নয়জন শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন।

সিলেট সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ছয়জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আটজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন লড়ছেন।

গোলাপগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সর্বাধিক ১০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন এবং তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটের লড়াইয়ে আছেন।  

ইতোমধ্যে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে জেলার চার উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটের সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে কেন্দ্রগুলোতে একে একে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। নির্বাচনের দিন ভোরে ব্যালট পেপার প্রিজাইডিং অফিসারদের দেওয়া হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

সিলেটের চারটি উপজেলায় মোট আট লাখ ১৪ হাজার ৫২ ভোটার ৩০২টি কেন্দ্রে ভোট দেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২৪
এনইউ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।