ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

হালনাগাদে নারী ভোটার বেশি, মৃত বেশি পুরুষ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
হালনাগাদে নারী ভোটার বেশি, মৃত বেশি পুরুষ

ঢাকা: চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে নতুন ভোটার হতে আগ্রহীদের মধ্যে নারীদের সাড়া মিলেছে বেশি।

অন্যদিকে বেশি মারা গেছে পুরুষ ভোটার।

মাঠ পর্যায়ে থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইসির তৈরি করা প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি ভোটার হয়েছে ঢাকায়। আর সবচেয়ে কম ভোটার হয়েছে ফরিদপুর অঞ্চলে।

ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শাখার পরিচালক মো. আব্দুল মমিন সরকারের তৈরি করা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নুতন ভোটার হওয়ার জন্য তথ্য দিয়েছেন ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৩ জন পুরুষ। আর নারীর সংখ্যা হচ্ছে ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৪৪৮ জন। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে এক লাখ ৫১ হাজার ১৯৫ জন নারী বেশি অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে।

এদিকে হিজড়া সম্প্রদায়ের সাড়াও আগে চেয়ে বেড়েছে। এবার দুই হাজার ৩৩৬ জন হিজড়া ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে এবারই নারী ও হিজড়া সাড়া তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।

সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন, আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। আর হিজড়া ভোটার ৯৩২ জন। এই হিসেবে এবারের হালনাগাদে নারী ভোটার বাড়লেও নারী-পুরুষ ভোটারের ব্যবধান খুব একটা কমবে না।

ইসির নির্বাচন সহায়তা শাথার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দীন চৌধুরী জানিয়েছেন, ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছরে নারী ভোটার ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার পেছনে আটটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে- (১) নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহে অনীহা; (২) হিন্দু অবিবাহিত মেয়েদের পিত্রালয়ে নিবন্ধন করতে অনীহা; (৩) অবিবাহিত, অনগ্রসর ও নিরক্ষর মেয়েদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ কম; (৪) বাবা-মা'র জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়া; (৫) রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দূরবর্তী হওয়া; (৬) আবহাওয়া অনুকুল না থাকা; (৭) সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় অজুহাতে ছবি তুলতে অনীহা এবং (৮) প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলাদের অসচেতনতা অন্যতম।

এজন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নারী ভোটার বাড়াতে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। নারীদের অন্তর্ভুক্তির হার যেন উল্লেখযোগ্যভাবে কম না হয় সে লক্ষ্যে হালনাগাদ কার্যক্রমের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (বিশেষ করে সংরক্ষিত আসনের সদস্যগণকে), দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও গ্রাম পুলিশ বা চৌকিদার-দফাদারকে সম্পৃক্ত করতে বলেছিল ইসি। বিশেষ করে প্রচারের কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছিল।

এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, নারী ভোটার বাড়াতে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এবার বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়তে পারে। তবে নতুন ভোটারদের তুলনায় আগেরবার বাদ পড়া নাগরিকদের সাড়া বেশি মিলেছে।

এদিকে হালনাগাদ কার্যক্রমে নারীর তুলনায় পুরষ ভোটার অধিক হারে মারা যাওয়া তথ্য পেয়েছে ইসি। পুরুষ ভোটার মারা গেছেন নয় লাখ দুই হাজার ১১৮ জন। আর নারী ভোটার মারা গেছেন ছয় লাখ ৭২ হাজার ৮৮৯ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটার মারা গেছেন ৫৮৮ জন। সবমিলিয়ে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৩ জন মৃত ভোটারের তথ্য মিলেছে। সবেচেয়ে বেশি ভোটার মারা গেছে রাজশাহী অঞ্চলে, দুই লাখ ২৮ হাজার ৫৫৭ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার মারা গেছেন ফরিদপুর অঞ্চলে ৯৪ হাজার ৮১৬ জন।

গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালানাগাদ কার্যক্রমে ইসির তথ্য সংগ্রহকারীরা মোট ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৩৭ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ঢাকা অঞ্চলে ভোটার হওয়ার জন্য সাড়া মিলেছে সবচেয়ে বেশি, সাত লাখ ৩১ হাজার ১৫০ জন। আর সবচেয়ে কম সাড়া মিলেছে ফরিদপুর অঞ্চলে, দুই লাখ ৪৪ হাজার ২৬৫ জন নাগরিক এই অঞ্চলে ভোটার হওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে নিবন্ধন কেন্দ্রে ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার কাজ। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে যারা বাদ পড়েছেন তারা ভোটার হতে পারবেন। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের যে তথ্য এসেছে এই সংখ্যা এদিক সেদিক হতে পারে।

২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর আগে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার‌্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।

ভোটার তালিকা হালানাগাদে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হচ্ছে-

 ক) ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি

খ) জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি

গ) নিকট আত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রভৃতি)

ঘ) এসএসসি/দাখিল/সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

ঙ) ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি/চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)

ভোটার হওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে:

ক) নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্মনিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সাথে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে

খ) জন্ম তারিখ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে

গ) স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে

ঘ) কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দুইবার ভোটার হওয়া যাবে না।

এক সতর্কবার্তায় ইসি জানিয়েছে, একাধিকবার ভোটার হওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ একাধিকবার ভোটার হলে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
ইইউডি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।