ঢাকা, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০২ জিলকদ ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

প্রবাসীদের ভোট

প্রক্সি ভোটে সন্দেহ, ইসিকে পরে মতামত জানাবে দলগুলো

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:২৪, এপ্রিল ২৯, ২০২৫
প্রক্সি ভোটে সন্দেহ, ইসিকে পরে মতামত জানাবে দলগুলো

ঢাকা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে প্রক্সির মাধ্যমে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও বলছে, এই পদ্ধতিতে ‘জালিয়াতির আশঙ্কা’ থেকে যায়।

আবার আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি বলছে, এই পদ্ধতি হবে ‘রিস্কি’। বিএনপি বলছে, বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তীতে মতামত জানাবে।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার পদ্ধতি নিয়ে অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়ে দলগুলোর নেতারা এমন মতামত জানান।

প্রক্সি ভোট নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার আগ্রহ বেশ দেখছি। ইসির কাছে আমাদের প্রত্যাশা যেন অর্ধেক নয়, পরিপূর্ণ এফোর্ট দিয়ে যেন তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। প্রক্সি ভোট হলে কোথাও কোথাও বেশ ভোট আসতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা একটা ‘থ্রেট’ হতে পারে। আমরা দলীয় ফোরামের আলোচনা করে ইসিকে মতামত জানাবো।

তিনি বলেন, ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশ্বাস। এটা বজায় রাখতে হবে। সবার যাতে ট্রাস্ট থাকে অনলাইন হোক, পোস্টাল হোক, প্রক্সি নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। সেটা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে জানাবো।

এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের সদস্য এহতেশামুল হক বলেন, ইসির ক্ষেত্রে বড় বার্ডেন হচ্ছে গত ১৫ বছরে যে কলঙ্ক আছে, সেটা থেকে উত্তরণ হওয়া। কেননা, ইসি ভালো কাজ করলেও দুর্বলতা খুঁজে বের করার একটা প্রবণতা থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ বিধির ব্যাপারে ইসিকে একটা দৃঢ় অবস্থানে আসতে হবে। প্রবাসীরা আচরণ বিধি প্র্যাকটিসে যদি আরেকটু সভ্য হতে পারে, তাহলে ইসির জন্য আরেকটু কাজ করা সহজ হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, উদ্যোগ নিলেই অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। এটি ভালো উদ্যোগ। ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মধ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা ইসির সঙ্গে বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি এনেছিলাম। ইসি সেই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে গত ১৫ বছরে। ইসি তার প্রতি ট্রাস্ট অ্যান্ড কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এক্স’ একজনকে পছন্দ করে, ‘ওয়াই’ আরেকজনকে পছন্দ করে। তাহলে এক্স এর প্রক্সি যদি ওয়াইকে দেওয়া হয় তাহলে ভোটারের রায়ের সঠিক প্রতিফলন হবে না। তবে দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই পরবর্তীতে মতামত দেওয়া হবে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে। কোনো অবস্থাতেই সিস্টেমকে ডেসট্রয় করা যাবে না।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাবো। দুই কোটি ভোটার রয়েছে। মানুষের জন্য সুবিধা হয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেভাবে দিতে হবে। প্রক্সি ভোটে দেখেছি যেটা, আমার মা একটি দলকে ভোট দেয়। আমার বাবা আরেকটি দলকে ভোট দেয়। এক্ষেত্রে প্রক্সির মাধ্যমে কী করে সিকিউরিটি নিশ্চিত করা যায়, সেটা ভেবে দেখতে হবে।

এবি পার্টির শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান বলেন, মিডেল ইস্টের প্রবাসীদের এনআইডি আছে। কিন্তু ওয়েস্টে (পশ্চিমা দেশে) কিন্তু বেশিরভাগেরই পাসপোর্ট আছে। তারা মিশনে গিয়ে কেন এনআইডি নেবে? কাজেই পাসপোর্টও যেন অপশন রাখা হয়। এনআইডির ডাটা নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তাই অনলাইন ভোটিংয়ে পাবলিক ট্রাস্ট নিয়ে আসতে হবে। কেননা, শুরু করে সিকিউরিটি দিতে না পারলে বন্ধ হয়ে যাবে। অনলাইনে যেহেতু হ্যাক করা যায়, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার আসলে কী হবে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এছাড়া প্রক্সি ভোট বাংলাদেশের জন্য খুব রিক্সি। উন্নত বিশ্ব যেখানে পারছে না, আমাদের নাগরিকরা যেখানে সত্যিকার নাগরিক হতে পারেনি, সেখানে দলগুলো কিন্তু ফাঁক-ফোকর বের করে ফেলবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, অনলাইন, প্রক্সি ও পোস্টাল; তিনটি পদ্ধতিরই সুবিধা, অসুবিধা আছে। তবে দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। প্রবাসে দেড় কোটি ভোটার, এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে আছে। তাই সতর্কতার সাথে আরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। তাই ইসির উচিত দলগুলোকে আস্থায় এনে যেন কাজ করে।

সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রধান আবু লায়েন্স মুন্না বলেছেন, তার দল প্রক্সি ভোটিংয়ের পক্ষে নয়। বাংলাদেশ জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান আলী সাজু বলেন, তার দলও ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাবে। তবে তারা এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মডেল নির্বাচন হিসেবে দেখতে চায়।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের অতিরিক্ত মহাসচিব আকবর হোসেন পাঠান বলেন, প্রবাসীদের ভোট নেন, তবে আগে দেশের ভেতরে ভোট সুষ্ঠু করেন। দলটির সভাপতি কাজী আবুল খায়ের বলেন, প্রবাসীদের ভোটিং ব্যবস্থা নির্ধারণের পূর্বে দলগুলোর একমত হতে হবে যে ভুল হলেও মেনে নেব।

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন ভুল না হয়। আস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, তার দল প্রবাসীদের ভোটের পক্ষেও হলে বিস্তারিত মতামত জানাবেন দলীয় ফোরামের আলোচনার পর।

এছাড়া বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, তার দল প্রক্সি ভোটের পক্ষে। অনলাইন ভোটিং নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, আর পোস্টাল ব্যালট নিয়ে আগ্রহ নেই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বলেছে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত দেবে। বাংলাদেশ কংগ্রেস পরে বিস্তারিত মতামত দেওয়ার কথা বললেও জালিয়াতির সুযোগ প্রক্সি ভোটের বিপক্ষে দলটি।

দুপুর পর্যন্ত আয়োজিত সেমিনারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ প্রযুক্তিবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল একটি কর্মশালা করে প্রবাসীদের ভোটিং পদ্ধতি নির্ধারণে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সমন্বয়ে একটি পরামর্শ গঠন করে ইসি। ওই কমিটি তিনটি ভোটিং পদ্ধতির ওপর তিনটি প্রতিবেদন তৈরি করে। যে প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপনার পরই সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন অংশীজনরা।

সেমিনারে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন আগতদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা অ্যাপ্রোপিয়েট পদ্ধতি আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করছি। ইন শা আল্লাহ আপনাদের মতামতকে গুরুত্ব দেব। আমরা কনফিডন্টে, আমরা শুরুটা করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা, বিশেষ করে দলগুলোর সমর্থন চাই। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হচ্ছে আমাদের প্রধান স্টেকহোল্ডার। ভবিষ্যতে আপনাদের দাওয়াত দেব। আপনাদের মতামতের জন্য এবং সর্বোপরি নির্বাচনের জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।

ইইউডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।