ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩২, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

অনিয়মে ইসিই দেবে তাৎক্ষণিক শাস্তি, পার পাবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫৮, অক্টোবর ৫, ২০২৫
অনিয়মে ইসিই দেবে তাৎক্ষণিক শাস্তি, পার পাবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ইসি ব্যবস্থা নিতে বললেও সে সুপারিশ বাস্তবায়ন ঠিকমত হয়নি।

ঢাকা: নির্বাচনী অনিয়মে যদি ভোটের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিজেই শাস্তি দিতে পারবে। এক্ষেত্রে বরখাস্ত থেকে শুরু করে জেল-জরিমানাও হতে পারে।

রোববার (৫ অক্টোবর) নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন- ১৯৯১ সংশোধন করে এমন বিধানের অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ সংশোধনে ইসির দেওয়া ওই প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার।

আইনে নির্বাচন কর্মকর্তা বলতে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি বা রিটার্নিং অফিসার বা ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাকে (যেমন- প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য) বোঝানো হয়েছে।

এদিকে আইনে ধারা ৫ এর উপধারাগুলো সংশোধন ও সংযোজন করে ইসিকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আগে ভোটের অনিয়মে জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ইসি শাস্তি দিতে পারতো না। আগে ইসির কাছে অনিয়ম প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্টর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করতে পারতো। এতে ইসির সুপারিশ বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করা হতো। যেমন বিগত কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেও সে সুপারিশ বাস্তবায়ন ঠিকমত হয়নি। তবে আইনের সংশোধন আসায় সে সুযোগ আর থাকলো না। কেননা, ইসির প্রস্তাবের পর অন্য কোনো আইনে যাই থাকুক না কেন এই আইনটিই প্রাধান্য পাবে।

ধারা পাঁচের আগের চারটি উপ-ধারা সংশোধন করা হয়েছে৷ একই সঙ্গে নতুন করে তিনটি উপ-ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

উপধারা (১): কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে কমিশন বা কমিশন কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, রিটার্নিং অফিসারের কোনো আদেশ বা নির্দেশ পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হলে বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করলে বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো আইনের বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করলে বা এর অধীন কোনো অপরাধ করলে বা কর্তব্যে অবহেলা করলে তিনি অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য হবে  এবং অসদাচরণ তার চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ মর্মে বিবেচিত হবে।

উপধারা (২): কোনো নির্বাচন-কর্মকর্তা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণ করলে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করতে পারবে বা তার পদাবনতি করতে পারবে বা তার পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি অনধিক ২ (দুই) বছরের জন্য স্থগিত রাখতে পারবে।

তবে শর্ত থাকে যে, ওই রকম কোনো শাস্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ব্যর্থতা, অস্বীকৃতি, লঙ্ঘন বা অপরাধের জন্য অন্য কোনো আইনে নির্ধারিত কোনো দণ্ড প্রদান বা তার জন্য কোনো আইনগত কার্যধারা গ্রহণকে ব্যাহত বা বারিত করবে না।

উপ-ধারা (৩): কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণ করলে কমিশন বা কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, কমিশনের সম্মতিক্রমে রিটার্নিং অফিসার তাকে, তার বিরুদ্ধে তজ্জন্য তার চাকরিবিধি অনুযায়ী শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণ সাপেক্ষে, অনধিক ২ (দুই) মাসের জন্য সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ দিতে পারবেন এবং ওই বরখাস্তের আদেশ তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রদত্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং তদনুযায়ী কার্যকর হবে।

উপ-ধারা (৪): উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণের জন্য কোনো নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে কমিশন বা কমিশন কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, কমিশনের সম্মতিক্রমে রিটার্নিং অফিসার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করলে ওই কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব প্রাপ্তির ১ (এক) মাসের মধ্যে ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে এবং তৎসম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করবে।

উপ-ধারা (৫): উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত কমিশনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে যেরকম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তা ওই কর্মকর্তা বা ব্যক্তির ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বই এবং বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে লিপিবদ্ধ ও ডোসিয়ারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং তা সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করতে হবে।

উপ-ধারা (৬): সরকার এবং কমিশনের মধ্যে এই ধারার কোনো বিধান সম্পর্কে ভিন্নমত দেখা দিলে সে বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে।

উপ-ধারা (৭): কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তব্যে অবহেলা করেছেন, তাহলে ওই কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কমিশন প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থানিতে পারে।

এদিকে আইনে ধারা ৬-এ সংশোধন এনে জেল-জরিমানা সংক্রান্ত শাস্তিও বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অনিয়মে জড়িতের বিরুদ্ধে কমিশনের দেওয়া শাস্তির প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করলে সংশ্লিষ্টদেরও পাঁচ বছর জেল-জরিমানা হতে পারে।

আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-কর্মকর্তা নিযুক্ত হলে, তিনি, কমিশন বা ক্ষেত্রমত রিটার্নিং অফিসারের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ব্যতীত, তার দায়িত্ব গ্রহণে বা পালনে অপারগতা বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করতে পারবেন না। এছাড়া কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-কর্মকর্তা নিযুক্ত হলে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে নির্বাচন-কর্মকর্তা হিসাবে কোনো দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বাধা দিতে পারবেন না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অনধিক ১ (এক) বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

এদিকে কমিশনের দেওয়ার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি না মানলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর এবং অন্যূন ১ (এক) বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

২০২২ সালের ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। একটি কেন্দ্র বন্ধ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। মোট ৫১টি কেন্দ্র দুপুরের মধ্যেই বন্ধ হওয়ায় নির্বাচনের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি ৬৮৫ জনের শুনানি করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পায়। এরপর সে বছরের ১ ডিসেম্বর তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তির সুপারিশ করে এবং তা বাস্তবায়ন করে এক মাসের মধ্যে জানাতে বলে ইসি। কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষই সে সুপারিশ বাস্তবায়ন চার মাসেও না করায় ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ জেল-জরিমানার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফের চিঠি দেয় ইসি। তারপরও সব কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই অবস্থায় নতুন আইনটি কার্যকর হলে সে সুযোগ আর থাকবে না।

ইইউডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।